ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মীর আব্দুল আলীম : চাল, ডাল, চিনি, সবজি, মাংস, মাছের দাম চড়া। বেগুনের বাজারে গরম হাওয়া। ৪০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মূল্য বেড়ে ছোলার দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। মোটা চলের দাম ৪৮ টাকা। বাচ্চা মুরগির পিস ৩ শ’। রোজা আসে, এভাবেই বাড়ে জিনিসপত্রের দাম। সবজি থেকে শুরু করে সব পণ্যের দাম এমন ঊর্ধ্বমুখী হলে রোজায় সাধারণ মানুষ কী খাবে?
এটি সংযম নয়। এ যেন ব্যবসায়ীদের বেশি আয়ের মহা উৎসব। যদিও সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। বানিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন । মজুদদার, মুনাফাখোরদের কারণে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াটিকে আর সামাল দিতে পারেননি তাঁরা। কখনও রোজায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বাজার। রোজা শুরু হলে যা হবার তাই হয়। আর এ পরিস্থিতি অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। পণ্যের দাম এতটাই বাড়ে যে, গায়ে সয় কিন্তু পেটে সয় না। যাদের কাড়ি-কাড়ি টাকা আছে তাদের সয়ে যায় সবই। আর যারা নিম্নআয়ের মানুষ তাদেরই যত জ্বালা। তাদের পকেটের অবস্থা অনুসারে কম পণ্য কিনেই বাড়ি ফিরতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ভুখা থাকতে হয় ২-১ বেলা। তখন কি আর পেটে সয়? এবার কিন্তু সিয়াম সাধনার এ মাসটি শুরু হওয়ার আগেই প্রায় সকল দ্রব্যের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। রোজা আর ঈদ এলেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা সাধারণ মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলে।
পণ্যের দাম বাড়লে কি শুধু দেশের আমজনতাই বেকায়দায় পড়ে? দেশীয় অর্থনীতিতেও আঘাত আসে। তাই বাজার বিশেষজ্ঞকরা আগে থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে সতর্ক করে দেয়। এবারও করেছে। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে; এখনও হচ্ছে। তবুও পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অবশ্য ফি বছর ধরেই তা বাড়ে। নানা ছুতোয় বাড়ছে দাম। শবে বরাতের আগে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছিল। রমজানকে সামনে রেখে বাড়ে বেশকিছু পণ্যের দাম। রোজা শুরু হলে বাজারে আগুন ধরে। এভাবে একের পর এক অজুহাতে দাম বাড়ায় বাজারে ক্রেতাদের এখন নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা চরম অস্বস্তিতে আছেন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে। বিপাকে নির্ধারিত আয়ের মানুষরাও। মুসলিম বিশ্বে রোজা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো! দাম বাড়িয়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণ তিনগুণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো করে পণ্যের দাম বাড়ায়। দাম বাড়ার হেতু নেই তবুও বাড়ে। দাম বাড়িয়ে কোটিপতি মহাজনরা আরও টাকার পাহাড় গড়ে। তাহলে সংযমটা আর থাকলো কোথায়?’
নিত্যপ্রয়োজনীয় হেন পণ্য নেই যে, গায়ে মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ নেই। তফাৎটা শুধু ডিগ্রির, কোনোটার বেশি কোনোটার কম। রমজান উপলক্ষে কতক বিশেষ পণ্যের চাহিদা বেশি বাড়ে। ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, নানা রকম গরম মশলার চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়ে মাছ, মাংস, দুধের। আর ব্যবসায়ী-মজুদদাররা ধরেই নেয়, মুনাফায় পকেট ভারী করার মওকাই হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। রমজানে দুটো পয়সা কামিয়ে নিতে এরা কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নেয় পূর্বাহ্নেই। মজুদ গড়ে তোলে, দফায় দফায় মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ে। মানুষকে জিম্মি করে অধিক মুনাফা লাভের এই খেলা কোনো সরকারই বন্ধ করতে পারে না-একথা আমরা কেউ বিশ্বাস করতে চাই না। সরকারের ইচ্ছা থাকলে এই খেলা বন্ধ করা অবশ্যই সম্ভব, কিন্তু এই সম্ভবকে অসম্ভবের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে অবশ্যই হার্ড লাইনে চলতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণ সেনাদের হাতে দেয়া হোক। আমরা মনে করি, সরকার একটু কৌশলী হলেই তা সম্ভব হবে। প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে সেই সকল অসাধু ব্যবসায়ীর যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন যতো কম হবে পণ্যের দাম ততো বেশি হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও চারদলীয় জোট সরকার এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময় দেখেছি, যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, ততবার বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরকারকে বারবার আশ্বাস দিয়েছে, রোজার মধ্যে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। এর পুরটাই মুনাফাখোরদের কারসাজি মাত্র!
সিন্ডিকেট এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার অসৎ ব্যবসায়ীর হাত থেকে বাজর সরকারের হাতে নিতে হবে। তা নাহলে দরিদ্রজনেরা ঠিকই আহাজারি করে মরবে, আর পকেট দিনকে দিন স্ফীত হবে অসৎ ব্যবসায়ীদের। পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে যা যা করা দরকার তা করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ে সরকারকে আরও চৌকস হতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।