ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
সৈয়দ শামীম শিরাজী : শব্দ দূষণ বলতে মানুষের বা কোন প্রাণির শ্রæতিসীমা অতিক্রমকারী কোনো শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বুঝায়। আসলে ‘শব্দ’ পরিবেশের কোনো খারাপ উপাদান নয় বরং শব্দ আমাদের জীবন যাপনের জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু শব্দ দূষণ পরিবেশের এক চরম বিরক্তিকর উপাদান, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এই শব্দ দূষণ। ভারতের বিখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী ঘ. গধহরাধংধশধস এর ভৌত পরিবেশ (বিশেষত বায়ু মাধ্যম) শ্রæতিসীমা বা সহন ক্ষমতা বহির্ভূত অপেক্ষাকৃত উচ্চ তীব্রতা বা তীক্ষèতাসম্পন্ন শব্দের (বিশেষ করে সুরবর্জিত শব্দ বা নয়েজ) উপস্থিতিতে জীব পরিবেশ তথা মানুষের উপর যে অসংশোধন যোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়, সেই পরিবেশ সংক্রান্ত ঘটনাকে শব্দ দূষণ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বজ্রপাৎ অথবা মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে যে বিকট শব্দ যা সাধারণভাবে মানুষের শ্রবণসহন ক্ষমতার বাইরে ও মানুষের শ্রবণ শক্তির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানুষের মস্তিষ্ক ও দেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে তাকে শব্দ দূষণ বলে।
বিভিন্ন উপকরনের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিজেল ও পেট্রোল চালিত ইঞ্জিন যেমন বাস, ট্রাক, লরী, প্রাইভেটকার, মটর সাইকেল, টেম্পু ইত্যাদি। হাইড্রোলিক হর্ন (৬০- ৯০ ডেসিবল), রেলগাড়ির হুইসেল (৯০-১১০ ডেসিবল), পটকাবাজী (৯০- ১২০ ডেসিবল), ডিজেলচালিত জেনারেটর, (৮০ ডেসিবল), ঝগড়া-বিবাদে পারস্পারিক উচ্চসরে কথা বলার সময় (পুরুষের ১২০ হার্জ ও মেয়েদের ২৫০ হার্জ), মিছিল মিটিং এ ¯েøাগান, লাউড স্পিকার ও মাইকের মাধ্যমে (১১০ ডেসিবল), ঢোল বাজানো (১০০ ডেসিবল), টেক্সটাইল, পাওয়ার লম এর চাবি পাঞ্চিং মেশিন (৮০ ডেসিবল), রেডিও, টেলিভিশন এবং কেসেট প্লেয়ার (৪৫-৮০ ডেসিবল), জেট বিমান ও সুপার সনিক বিমান (১৪০ ডেসিবল), বিভিন্ন নির্মাণ কাজের শব্দ (৬০-৮০ ডেসিবল), জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সময় শব্দ হওয়া ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনার (৯০-১০০ ডেসিবল) , লঞ্চ, ফেরি, স্টিমার ভেপু (৮০ ডেসিবল), হোটেল, বার কাউন্সিল, বাজার, খেলাধুলার মাঠ, বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন ইত্যাদিতেও অযাচিতভাবে শব্দ দূষণ হয়ে থাকে।
আমাদের দেহের যথেষ্ট সংবেদী অঙ্গ হচ্ছে কান, উচ্চ শব্দ আমাদের কানের পর্দাকে অনেক জোরে ধাক্কা দেয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, এই উচ্চ শব্দের কারণে আমাদের কানের পর্দা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। আর কানের পর্দা নষ্ট হওয়া মানে হচ্ছে যে, চিরকালের জন্য কানে না শোনা। উচ্চ শব্দে গান শুনতে খুবই মজা লাগে বা কানে হেডফোন লাগিয়ে অনেক জোরে গান শোনার অভ্যাসটা আমরা বদলাতে পারি না। কিন্তু আমরা কি জানি, এর প্রতিক্রিয়া কতটা মারাত্মক? আমাদের ক্ষণিকের আনন্দের জন্য জীবনে অনেক বিপদ ডেকে আনি। আর এরকম শব্দ দূষণ পরিবেশে তাঁত শ্রমিকেরা নিজেদের বিনোদনের জন্য তাঁত ঘরের মাঝখানে বড় ধরনের সাউন্ড বক্স বসিয়ে আধুনিক গান শুনছে, যে গানের ভলিয়ম তাঁত ঘরের খট খট শব্দকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা বুঝতেই পারছে না যে তারা নিজেরাই নিজেদের কতটা ক্ষতি করছে।
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে যারা বসবাস করে বা কাজ করে তাদের শ্রবণ শক্তি দশ বছরের মধ্যে অর্ধেক হ্রাস পায়। বাণিজ্যকভাবে শব্দ দূষণ কোনো ক্ষতিকারক মনে না হলেও এটা মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। শব্দ দূষণ এক নীরব ঘাতক। এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে শতকরা ১০০% লোক শব্দ দূষণের শিকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপ অনুসারে সহনীয় মাত্রার চাইতে বেশি শব্দ মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে, অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদকম্পন, মাথাধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ ঘটায়। যে কোনোস্থানে আধা ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে মাইকে ১০০ মাত্রায় শব্দ দূষণের মধ্যে কাউকে থাকতে হলে তাকে সাময়িক বধিরতার শিকার ততে হবে। দীর্ঘ দিন উচ্চ শব্দের মধ্যে কাজ করলে যে কেউ বধির হয়ে যেতে পারে। যে কোন ধরনের শব্দ দূষণ সন্তান সম্ভাব্য মায়ের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ। পরীক্ষায় দেখা গেছে, লস এঞ্জেলস, হিথ্রো এবং ওসাকার মতো বড় বিমান বন্দরের নিকটবর্তী বসবাসকারী গর্ভবতী মায়েরা অন্য জায়গার চাইতে বেশি সংখ্যক পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নাক, কান, গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোলায়মান খান বলেন, ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। পরিবেশ গবেষক কাজী হেদায়েতুন ইসলাম বলেছেন, শব্দ দূষণের ফলে মানসিক ও শারীরিক বিপত্তি ঘটে থাকে, রক্তচাপ ও স্বাভাবিক হৃদকম্পন ব্যহত হয়। শ্রবণ শক্তি কমে যায় ও বধির হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিস্কের রোগও হতে পারে। এছাড়া সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।