Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রেইনট্রি হোটেল এবং মিডিয়ার চোখ

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ২:০৫ এএম, ৩১ মে, ২০১৭

স্টালিন সরকার : অন্যায় যত ছোটই হোক অন্যায়ই; অপরাধ যত ছোট হোক অপরাধই। অন্যায়-অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনে হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের অসংখ্য লোমহর্ষক, চাঞ্চল্যকর, ভয়ঙ্কর অন্যায়-অপরাধের ঘটনা রেখে যদি ছোট ঘটনাকে ‘তালগাছ’ বানিয়ে দায়িত্বশীল সবাই সেটার দিকে ছুটতে থাকেন তা দেখতে বেখাপ্পা লাগবেই। সততা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। ক্ষমতাসীন দলের এক এমপির স্ত্রী-পুত্র-কন্যার মালিকানাধীন বনানীর রেইনট্রি হোটেলের দিকে যেন দৃষ্টি গোটা মিডিয়ার। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের কিছু ব্যাক্তি যেন কোমর বেঁধে নেমেছেন ওই হোটেলে পাওয়া কয়েক বোতল মদ কিভাবে এলো তার হেস্তনেস্ত করতে। স্থানীয় থানার পুলিশের দায়িত্ব পালন নিয়ে পর্যন্ত বিতর্ক করছে। মিডিয়াও যেন সেটা প্রচারে মহাব্যস্ত। অথচ দেশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটনা ঘটছে সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধানীয় প্রতিবেদন প্রকাশে আগ্রহ নেই। অভিজাত পাড়ার চার তারকা, তিন তারকা হোটেল শুধু নয়; বনানীর কয়েকটি হোটেলে বৈধ এবং অবৈধভাবে মদ বিক্রীর পাশাপাশি সবাই জানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে উঠা সাধারণ মানের হোটেলেও মদ কেনা-বেচা হয়। এটা আইন শৃংখলা বাহিনী থেকে শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের   লোকজনও জানেন। নিত্যদিন ঢাকা শহরের হোটেলগুলোতে মদের আসর বসছে জানার পরও শুধু রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে মাঠে নামার নেপথ্যে কী কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের বিরোধেই কি রেইনট্রি হোটেল সবার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে? হোটেল কর্তৃপক্ষ অপরাধ করলে তার বিচার হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সবকিছু ফেলে শুধু রেইনট্রি’র দিকে সবার দৃষ্টি কেন? যে দেশে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রæপ, বেসিক ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারীর কুল-কিনারা হয় না; যে দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮শ কোটি টাকা ডিজিটাল চুরি হয়; যে দেশের অর্থমন্ত্রী তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন ‘৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়’; সে দেশে সত্তর-আশি কোটি টাকার সম্পদ বন্ধক রেখে ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া কী খবরের বিষয়বস্তু হয়?   
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছে রেইনট্রি হোটেলে। বিকৃতরুচির ওই তস্করদের ধিক্কার জানাই। জঘন্য ঘটনার ৪০ দিন পর নির্যাতিতারা থানায় মামলা করেছে। ৪০ দিন পর মামলার রহস্য নিয়ে প্রশ্ন না তুলেই বলা যায় থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। অপরাধীরা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে; এ দাবি সর্বত্রই। এ ঘটনায় ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হোটেল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্তের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দেলোয়ার অসভ্যের মতো ধর্ষকের সাফাই গেয়ে তাবৎ ‘পিতার মুখ কলঙ্কিত’ করেছেন। তার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্বর্ণ-দায়মন্ড শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ জব্দ করেছে। ‘ঘটে যাওয়ার অপরাধ নিয়ে থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশের তদন্ত এবং কর্মতৎপরতা’র ফিরিস্তি তুলে ধরে পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা কয়েকদিন আগে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে লিখেছেন ‘পুলিশের কাজ যে কোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা। বনানীর ধর্ষন ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি কাষ্টমসের হঠাৎ অতি তৎপরতা সম্পর্কে লিখেছেন কাষ্টমস আপন জুয়েলার্স থেকে অবৈধ স্বর্ণ উদ্ধার করছে, মাদক অধিদপ্তর মদ উদ্ধারে সাফল্য দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে। প্রশ্ন হলো তাহলে কি বাবার অবৈধ স্বর্ণ উদ্ধারে বনানীতে ছেলে ধর্ষণের ঘটনার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করেছিল কাষ্টমস?’ ইনকিলাব-যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে, অভিজাত এলাকার অধিকাংশ ফোর স্টার, থ্রি স্টার হোটেলে বৈধ-অবৈধ দু’ভাবেই মদ বেচাকেনা হয়। তাহলে অন্যান্য হোটেলের ব্যাপারে কোনো কিছু না করে মাদক অধিদপ্তর শুধু রেইনট্রি হোটেলে অবৈধ ‘মদ’কে আইনের আওতায় আনতে অতি তৎপরতা দেখাচ্ছে কেন? তাহলে কি এর পিছনে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে বিরোধের কারণে প্রভাবশালীদের কেউ নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন ?
জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর হ্যাপী নামের সিনেমার এক এক্সটা ধর্ষনের মামলা করেছিল। রুবেলকে কারাগারে নেয়ার কিছুদিন পর জামিন পায়। অভিযোগ তুলে নেয় ওই হ্যাপী। কারণ কি? আসলে ওই হ্যাপী বছরের পর বছর রুবেলের সঙ্গে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিয়ে না করার সে ধর্ষন মামলা করেছে। আরাফাত সানি নামের আরেক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধেও অশ্লীলতার মামলা করে এক তরুণী। পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে ওই মেয়ের সঙ্গে সানির বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তীতে সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করে। বনানীর দুই ছাত্রী ধর্ষণের মামলা তদন্তধীন। প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে সেটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘদিন পর মামলা করা নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ কয়েকদিন আগে দেশে ধর্ষণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘গুলশানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে বছরখানেক আগে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এক বছরেও পুলিশ জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলা করায় উল্টো আতঙ্কে আছে তার পরিবার। গত ১৭ মে ঢাকার শ্যামপুরে চাচাতো ভাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে চার বখাটে। ওই কিশোরী এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গাজীপুরে ৮ বছরের কন্যা আয়েশা আক্তারের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন হযরত আলী। থানায় অভিযোগ করেছেন। পুলিশ আমলে নেয়নি। বাবা হিসেবে অসহায়ত্বের অপমানে ২৯ এপ্রিল মেয়েকে নিয়ে তিনি ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। আয়েশাকে নির্যাতনে জড়িতদের কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গত ২ এপ্রিল ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হালিমা আক্তার নামের এক নারী কনস্টেবল মারা গেছেন। হালিমা একটি চিরকুটে তাঁর সহকর্মী এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ওসিকে জানালেও তিনি এ ঘটনায় অভিযোগ নেননি। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৭ মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ৮ হাজার ৪৬৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৯৩০টি; ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৭২৮টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮০৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতো অপরাধের ঘটনা ঘটছে কয়টির বিচার পাচ্ছে মানুষ? কয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে হৈচে ফেলেছে মিডিয়া? ওই সব ঘটনার জড়িত অপরাধীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করতে না আছে আইন শৃংখলা বাহিনীর চেস্টা; অপরাধ ঘটনাগুলোর দিকে না আছে মিডিয়ার চোখ। ইদানিং মাঝে মাঝে রাস্তায় কোটি কোটি টাকার গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওইসব গাড়ী জব্দ করা হয়। স্বর্ণের ব্যবসা, স্বর্ণ আমদানী সম্পর্কে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা ভয়াবহ। স্বর্ণ আমদানীর নাকি আইন নেই! প্রতিদিন ঢাকার শত শত স্বর্ণের দোকানে শত শত কেজি স্বর্ণের অলংকার কেনাবেচা হচ্ছে। এসব কি শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন জানেন না? তাহলে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? একমাত্র আপন জুয়েলার্সের অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করলেই কি সব দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে?
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান রেইনট্রি হোটেলের এমডি আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুল্ক ও গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। বিদেশে লেখাপড়া করা উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী সম্ভাবনাময় ওই তরুণ যখন সেখানে যান তখন মিডিয়ার উপচে পড়া ভীড়; যেন কোনো ভয়ঙ্কর অপরাধীর খবর সংগ্রহে ব্যস্ত তারা। টিভির খবরে দেখা গেল হোটেলের এমডি আদনান মিডিয়ার সামনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরছেন। দায়িত্বরত ‘ম’ অধ্যাক্ষরের শুল্ক কর্মকর্তা এমন ভাবে মিডিয়াকে জানাচ্ছেন যে রেইনট্রিতে মদের বোতল ধরে তিনি চাকরি জীবনের ‘বিশাল সাফল্য’ দেখিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে বনানীর একটি হোটেলে ক’বোতল অবৈধ মদ উদ্ধার এবং এ জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দেয়ার মধ্যেই কি শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার সফল্য নিহিত? ঢাকা শহরের হোটেলে হোটেলে যে রাত হলেই মদের নহর বইয়ে যায় সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব কার? ঢাকায় যারা মদ বিক্রী করেন এবং মদ পান করেন তাদের কতজনের লাইন্সেস আছে? জানা যায়, রেইনট্রি হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাংক ফরগেট ফ্রান্সের নাগরিক। তার স্ত্রী হেনরি ফোরজেনও ফ্রান্সের নাগরিক।
আমরা বাংলাদেশীরা যেমন পানি খাই, ওরা (ফ্রান্সের নাগরিক) তেমনি মদ খায়। তাদের নিজেদের খাওয়ার জন্য রুমে মদ রাখা কী অস্বাভাবিক কিছু? কারণ মিডিয়ার খবরে প্রকাশ ১০ বোতল মদ উদ্ধারের দু’তিন দিন আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে কোনো কিছুই পায়নি। এদিকে দেশের একটি প্রভাবশালী দৈনিক রেইনট্রি মালিকের পিতা সরকারি দলের এমপি বি এইচ হারুনের বিরুদ্ধে লীড রিপোর্ট করেছে ‘পাঁচ বছরেই এমপি হারুনের এতো সম্পদ!’ শিরোনামে। যদিও পরে তারা ওই রিপোর্টের প্রতিবাদ ছাপিয়েছে গুরুত্বসহকারে। আওয়ামী লীগের এমপি বি এইচ হারুণ একসময় ছিলেন দেশের জনশক্তি রফতানীকারকদের মধ্যে অন্যতম। আশির দশকে প্রখ্যাত ব্যবসায়ী দোহার-নবাবগঞ্জের নূর আলীর ‘ইউনিক’, বাগেরহাটের সাবেক এমপি সিলভার সেলিমের ‘সিলভার লাইন’, ফেনির সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন ও মোশাররফ হোসেন জ্যাকির ‘বে ইষ্ঠার্ণ’, রিয়াজুল ইসলামের ‘রিয়াজ ওভারসীজ’, শাহজালাল মজুমদারের ‘শাহজালাল এভিয়েশন’ বি এইচ হারুণের ‘রাজবীথি’, খুলনার সাবেক এমপি আলী আজগর লবি, আবদুল হক প্রমূখরা একচেটিয়া ভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানী করেছেন। বিদেশে কর্মরত ওই শ্রমিকরা এখন দেশের রেমিটেন্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বি এইচ হারুণ সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিক পাঠিয়েছেন। সেই বি এইচ হারুণকে ‘ ৫ বছরে এতো সম্পদের মালিক’ হিসেবে চিহ্নিত করার মাজেজা কি? আবার এতো বিপুল পরিমান অর্থের সম্পদ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বা কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল রেইনট্রি হোটেলের জমি আশির দশকের শেষ দিকে কেনা। ওই হোটেলে ১০ বোতল অবৈধ মদ পাওয়া নিয়ে শুল্ক বিভাগের ম অধ্যাক্ষরের ওই কর্মকর্তার দৌঁড়ঝাপের নেপথ্য রহস্যই বটে। হয়তো সে প্রশ্নই লেখার মাধ্যমে উত্থাপন করেছেন সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা।  
রহস্য আর কিছু নয় সামনে নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য নমিনেশন নিয়ে এমপি বনাম মন্ত্রী বিরোধ। প্রভাবশালী মন্ত্রীর আশির্বাদে কর্মকর্তা প্রশাসনে উপরে উঠেছেন। তাই ওই মন্ত্রীকে খুশি করতেই ‘ডেকে আনতে বললে ধরে আনে, ধরে আনতে বললে বেঁধে আনে’র কান্ড করছেন ওই শুল্ক কর্মকর্তা। তিনি মন্ত্রীর আর্শিবাদপুষ্ট লোক হিসেবে চিহ্নিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দক্ষিণাঞ্চলের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ ওই এলাকার এমপি বি এইচ হারুনের। আগামীর জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং স্থানীয় রাজনীতিই এ বিরোধের কারণ। প্রভাবশালী মন্ত্রী ক্ষমতাসীন দলের সদস্য না হলেও রাজনীতিতে প্রভাবশালী। তার সঙ্গে বিরোধের জেরেই ‘বি এইচ হারুনকে’ সাইজ করতে ওই মন্ত্রী পর্দার আড়াল থেকে কী কলকাঠি নাড়ছেন? ওই মন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট কাষ্টমস কর্মকর্তা তাকে খুশি করতে রেইনট্রির ‘মদ’ ইস্যুকে অতি গুরুত্ব দিয়েছেন। ধর্ষনের মতো জঘন্য ঘটনা নীচে চাপা ফেলে ১০ বোতল মদের খবর ‘হাই লাইট’ করা কী সে জন্যই?
টিভিতে খবর দেখার পর হঠাৎ রেইনট্রি হোটেলের মালিক আদনান হারুনের সঙ্গে দেখা। বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী তরুণ। বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে ফেরা সম্ভাবনাময় মেধাবী তরুণকে দেখে মনে হলো প্রচন্ড কর্মোদ্যমী। আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করে যখন বিদেশেই থেকে যাওয়ার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এখন মেধা সংকট। গুণীজনেররা বলেন ‘উচ্চ শিক্ষার নামে আমরা মেধা পাচার করছি’। অথচ বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জন্মভূমির মানুষের সেবা করার মানসে ফিরে আসা ইনোসেন্ট আদনান কার্যত এখন বিপর্যস্ত। পরিচয়পর্ব শেষ হতেই বললেন, বন্ধুরা তাদের মতো বিদেশে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কিছু করার মানসে দেশে ফিরে এসেছি। আমি মনে করি মেধাবী তরুণদের উচিত বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে ফিরে মেধাকে কাজে লাগিয়ে মা-মাটি-মানুষের জন্য কাজ করা। সে যেই পেশার হোক মেধাবীদের কাজে জাতি উপকৃত হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমি দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করে আশ্চর্যজনকভাবে পিতার রাজনৈতিক দলের লোকের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলাম! যে বিল্ডিং-এ আমার হোটেল সে জমি আমার জন্মের আগে মায়ের নামে কেনা। মুসলিম পরিবারে জন্ম হওয়ায় হোটেল ব্যবসা করলেও মদ বিক্রী করতে আগ্রহী নই। মদ বিক্রী করলে লাইন্সে করে নিতাম। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি আর মদের লাইন্সেস করতে পারতান না? আমি আলেমের ঘরের সন্তান। পরিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই ইসলাম সমর্থন দেয় না এমন ব্যবসা করবো না।
অথচ মদ ইস্যুতে আমার পরিবারের ইমেজ ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। আমার এ অবস্থা দেখে বিদেশে থাকা বন্ধুরা এখন দোষারোপ করে বলছে তোমাকে দেশে ফিরতে নিষেধ করেছি। দেশপ্রেম দেখিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে উল্টো কী ঝামেলায় পড়লে। আমার প্রশ্ন বাবা রাজনীতি করেন; দলে এবং দলের বাইরে তাঁর পক্ষ্য-প্রতিপক্ষ থাকবে। কিন্তু বাপের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ্যের লক্ষ্যবস্তু আমি হবো কেন? আদনানের শঙ্কা রেইট্রি হোটেল নিয়ে তাঁর বিপদে পড়ার ঘটনা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া অন্যান্য মেধাবী ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশে ফিরে আসায় ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশে নির্ভেজাল সুখের জীবন ছেড়ে ফিরে এসে কে বিপদে পড়তে চাইবে? প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বাপ-চাচা-জ্যাঠাদের রাজনৈতিক বিরোধের বলীর পাঁঠা আদনানদের মতো বিদেশ ফেরত ইনোসেন্ট মেধাবী তরুণদের হতে হবে কেন?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ