পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রমজান মাসের শুরুতে গতকাল তার বিশেষ রেডিও ভাষণে বলেছেন, সে দেশে যেসব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষজন একসঙ্গে থাকেন - এটা ভারতের বিরাট গর্বের জায়গা।
‘মন-কি-বাত’ শীর্ষক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে স্বাগত জানালেও মুসলিম সমাজের নেতারা কিন্তু বলছেন, আজকের ভারতে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের স¤প্রদায়কে চরম আতঙ্কে রেখেছে। এমন কী পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন, ভারতে আজ যে ধরনের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবেশ দেখা যাচ্ছে তা এ দেশের আবহমান ঐতিহ্যের সঙ্গে আদৌ খাপ খায় না।
প্রতি মাসের শেষ রোববার প্রধানমন্ত্রী মোদি যে ‘মন-কি-বাত’ ভাষণ দেন, তাতে গতকালের পর্বটি ছিল রমজান স্পেশাল। সেখানে দেশবাসীকে ও বিশেষত মুসলিমদের রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি দাবি করেন, ভিন্ন ভিন্ন মত ও পথের মানুষরা কীভাবে একসঙ্গে থাকতে পারে ভারতীয়রা সেটা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘রমজানের পবিত্র মাসে বিশেষ গুরুত্ব পায় প্রার্থনা, আধ্যাত্মিকতা আর দান-ধ্যান। আর আমরা সোয়াশ’ কোটি ভারতীয় এ নিয়ে গর্ব করতে পারি যে, বিশ্বের সব ধর্মের মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেন। আস্তিক ও নাস্তিক, পৌত্তলিক কিংবা মূর্তিপূজার বিরোধী - সবাই কীভাবে এখানে পাশাপাশি থাকতে পারেন, সেই কলা আমাদের মজ্জায়’।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুনতে ভাল লাগলেও প্রতিদিনকার খবরের কাগজ কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য কোনও আশার ছবি তুলে ধরতে পারছে না - বিবিসিকে বলছিলেন আসামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও এমপি সিরাজুদ্দিন আজমল।
তিনি বলছেন, ‘সরকার যে ‘সব-কা-সাথ সব-কা-বিকাশ’-এর কথা বলছে আমরা তো তাতেই ভরসা রাখতে চাই। কিন্তু গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি তো সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ভাল মানুষ, কিন্তু তার আশেপাশের লোকজন তো হিন্দু-মুসলিম একতার ভাবনা রাখতে চাইছেন না। ভারতের ধর্মীয় বুনট তাতে নষ্ট হচ্ছে’।
শাসক দল বিজেপি বা তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের নানা কাজকর্মে মুসলিমদের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই তার দাবি।
সিরাজুদ্দিন আজমলের কথায়, ‘এই যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি - তাতে সার্বিকভাবে ভারতের মুসলিমরা খুবই শঙ্কিত। তাদের ধর্মীয় আচার পালনের ওপর আঘাত আসছে, তাদের ঘরবাড়ি বা মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমাদের আসামে মুসলিমদের সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মোটেই কোনও ভাল সঙ্কেত যাচ্ছে না - মুসলিমরা খুবই ভয় পাচ্ছেন’।
অথচ প্রধানমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন - সেই সব ধর্মকে নিয়ে চলাটাই ছিল ভারতের চিরকালীন ইতিহাস, বলছিলেন গবেষক ও অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।
‘শুধু তো মুসলিম ভাবধারা নয়, এই ভারতে বৌদ্ধরাও ছিলেন - যাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধ ছিল, বৌদ্ধিক বিরোধ। তারপর ছিলেন শিখরাও, যাদের চিন্তাধারা একটু অন্যরকম। মুসলিম শাসকরা আসার পরে তারাও কিন্তু অনেকেই হিন্দু সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন’।
‘বাদশাহ আকবর থেকে শুরু করে অনেক মুসলিম রাজা-রাজড়াই এই দলে পড়বেন। যেমন আমাদের বঙ্গেও ছিলেন মুহাম্মদ বরবক শাহ। তাদের প্রত্যেকের সভাতেই হিন্দু সভাসদরা ছিলেন’, বলছিলেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।
আজ ভারতের বিজেপি সরকার যখন তিন বছর পূর্ণ করেছে, তখন কিন্তু দেশে সে ঐতিহ্যের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না ড: ভাদুড়ী।
‘যত মত তত পথের এই দেশে আজ চারপাশে যা-সব শুনছি, সেগুলো কিন্তু খুব ভাল কথা নয়। অনেক মুসলিম মহৎ ব্যক্তিত্ব আছেন আমাদের এ দেশে, তাদের বলা হয়েছে পাকিস্তানে চলে যান। এগুলো আমাদের কাছে খুব অস্বস্তিকর ঠেকে!
‘সুতরাং এখন প্রধানমন্ত্রী ‘মন-কি-বাতে’ যেটা বলছেন সেটা যদি ‘কাম-কি-বাত’ও হয়, তার পারিষদরা যদি সত্যিই সেই অনুযায়ী চলতে পারেন তখনই কেবল আমাদের ভাল লাগবে’, বলছিলেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।
ফলে প্রধানমন্ত্রী মুখে এদিন যা বলছেন - তার সরকার যতক্ষণ না সেটা কাজেও করে দেখাতে পারছে এবং রাশ টানতে পারছে মুসলিম-সহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক হামলায় - ততক্ষণ ভারতের পরিস্থিতিকে কিছুতেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বলা যাবে না বলেই অনেক বিশেষজ্ঞর অভিমত। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।