Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কৃষি সম্প্রসারণ, মৃত্তিকা, শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রম ঢিলেঢালা

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাঠে নেই গবেষণার ফল মিজানুর রহমান তোতা
কৃষি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং কর্মবীর কৃষকের স্বার্থে দেশে মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ, বীজবর্ধন খামার, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, হটিকালচার এবং বিএডিসিসহ অসংখ্য বিভাগ রয়েছে। উদ্দেশ্য স্বল্প জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে বেশী আবাদ ও উৎপাদন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু উদ্যোগ ও নির্দেশনা সকলক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না যথাযথভাবে। এর অন্যতম কারণ কৃষির বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গবেষণাগারে নিত্যনতুন জাত, প্রযুক্তি ও কলাকৌশল আবিস্কার হয় ঠিকই, কিন্তু ফল যায় না মাঠে। বড়জোর প্রদর্শনী প্লটে, কৃষকের দোরগোড়ায় নয়। প্রকৃতপক্ষে মাঠে নেই গবেষণার ফল। এতে মার খাচ্ছে আবাদ ও উৎপাদন। অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শালকোনা গ্রামের কৃষক বাবুল আকতার, মোঃ আলম ও হাবিবুর রহমান ডাবলুসহ অনেক কৃষকের অভিযোগ, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নেমে সমস্যার সমাধান এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার ফল পৌঁছে দিলে কৃষক আরো এগিয়ে যেতেন। উন্নয়ন ঘটতো সামগ্রিক কৃষির। কৃষকের কথা, সরকার তো কমবেশী আমাদের জন্য ভালো ভালো উদ্যোগ নেয়, কখন কী ফসল উৎপাদন হবে, কীভাবে হবে, কোন জমিতে কোন ফসল উপযোগী-এসব জ্ঞান দেওয়ার জন্য কৃষি শিক্ষার ব্যবস্থা করে, কৃষি গবেষণার ফল মাঠে পৌছানোর নির্দেশ দেয়, অনেকস্থানে কৃষি তথ্যকেন্দ্রও স্থাপন করেছে, কিন্তু এর সুফল কৃষকরা পান না।
যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ কৃষকের অভিযোগ, সরকার কৃষির উন্নয়নে ও কৃষকের স্বার্থে যেসব কর্মসূচী নিয়ে থাকে তার যথাযথ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। কৃষকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে গতানুগতিক ধারায় বেশীরভাগ কৃষি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকের ঘরে ঘরে সার, প্রযুক্তি নিয়মানুযায়ী পৌঁছাচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই। জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের অব্যবস্থা অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত হয় না। ডিলাররা কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রæতিতে মাসে মাসে সার উত্তোলন করেন। তারা বাফার স্টকের গেটেই কালোবাজারে বিক্রি করে নিজের পকেট ভারী করে। অথচ ইউনিয়নভিত্তিক সার ডিলারদের প্রত্যায়ন দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যশোর সদর উপজেলায় একশ্রেণীর সার ডিলারের দুর্নীতি ওপেনসিক্রেট। এখানে প্রভাবশালী অনেক ডিলার আছেন যারা কখনোই সার কৃষকের কাছে বিক্রি করেন না। বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন দেখান। কালোবাজারে বিক্রি করে টাকা তোলেন পকেটে। গাফিলতি রয়েছে কৃষি গবেষণার। নিত্যনতুন পদ্ধতি ও কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণার আধুনিক প্রযুক্তি মাঠে পৌঁছাচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, কৃষি বিপ্লব ঘটানোর সরকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে কৃষি ও কৃষকের চেহারা আরো পাল্টে যেত।
কখন কী ফসল কোন জমিতে কীভাবে আবাদ করতে হবে, কোনটা লাভজনক, সারের মাত্রা কি হবে, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেই বা কি ব্যবস্থা, মাঠের দাম আর বাজার দাম কি, কোন সময়ে ফসল বিক্রি করলে কৃষকরা লাভবান হবে-এসব তথ্যাদি জানার অভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পদে পদে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস সুত্র জানায়, যশোরসহ সারাদেশে ১০টি কৃষি অঞ্চলে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে বেশ আগে। দাবি করা হয় অজস্র কৃষক এর সুবিধা পাচ্ছেন। কৃষি তথ্যকেন্দ্র সরকারের দেয়া কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের যাবতীয় সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে কৃষক ন্যুনতম সুবিধা পাচ্ছেন না। এর একটা বড়প্রমাণ গেল মৌসুমে বোরো আবাদ চরমভাবে মার খেয়েছে। কৃষি তথ্য না পৌছায় ধানে কৃষক পাহাড়ী ঢল ও বøাস্ট রোগের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারেননি। সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে ও বøাস্টে আক্রান্ত হয়েহাজার হাজার হেক্টর জমির থোড়মুখী ধান নষ্ট হয়। সুত্রমতে, সময়মতো রোগবালাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেয়া, মাঠ কর্মকর্তারা মাঠে নেমে পরামর্শ না দেয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় মার খেতে খেতে কৃষকের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে ধান উৎপাদনে।একসময় কোন প্রযুক্তিই সাধারণত মাঠে যেত না। আবহমানকাল থেকে কৃষকরা চাষাবাদ করত গতানুগতিক ধারায়।তাতে কৃষিতে বিরাট উন্নয়ন না হলেও ক্ষতি ও লোকসানের মাত্রা ছিল অনেকটাই কম। এখন অনেক পরিবর্তন ঘটছে। পাল্টে যাচ্ছে চাষাবাদ পদ্ধতিও। এখন কৃষি গবেষণাগার থেকে প্রযুক্তি মাঠে যাবার বিধান রয়েছে। অতিমাত্রায় ব্যবহারও হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতির নিয়ম কানুন যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় চোখের পলকে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় মাঝেমধ্যে। যা সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না।ত্রাহি অবস্থা হয় ক্ষতি পুরণ করতে কৃষকের। সেজন্য সরকারের মাঠপর্যায়ের কমকর্তাদের দায়িত্বপালনে যতœবান হওয়ার জরুরি নিদের্শনা দেওয়া দরকার বলে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
কৃষি তথ্য সার্ভিস খামারবাড়ীর পরিচালকের দপ্তর সুত্রের দাবি, কৃষকদের সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষায় দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে মাঝেমধ্যেই দেশের এলাকার মাঠে গিয়ে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানদান করা হচ্ছে। কিন্তু সারাদেশে একযোগে কি এমন কর্মসচী মাঠে পৌছাচ্ছে-এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি তারা। তাছাড়া কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল বিভাগের মধ্যে সমন্বয় নেই বলে অভিযোগ।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের অনান্য এলাকার মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র স্থাপিত হয় যশোরের গ্রাম গাইদঘাটে। এলাকাটি এমনিতেই আগে থেকেই সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করে। সেখানে চালু করা হয় কীটনাশকের বদলে পোকা মারার ফাঁদ। ‘ফেরোমন ট্রাপ’ এই পদ্ধতি যশোরের আর কোথাও সম্প্রসারিত হয়নি। গাইদঘাটেও পদ্ধতি প্রয়োগে ভাটা পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ