Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি কবি নজরুলের একটি কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে -প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজ থেকে অনাচার, অবিচার দুর হয় এবং অন্ধকার জগৎ থেকে তরুণ সমাজ যেন এগিয়ে যেতে পারে সেই পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছেন,শক্তি দিয়েছেন। আমরা যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি দিয়েছি সেই ‘ জয় বাংলা’ শ্লোগানটিও কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর একটি কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নৌ-বাহিনী সদর দপ্তরে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের যৌথভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেন,নদীমাতৃক বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের সেরা সাঁতারুর দেশ হিসেবেই পরিচিত হবে। বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমি শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্বরণ করি। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করি চার নেতাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু চাই আমরা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ যেন বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে বসতে পারে। তাই সর্বক্ষেত্রে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা স্কুল পর্যায়ের থেকে ছেলে মেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রেখেছি। আমরা একেবারেই তৃণমূল পর্যায় থেকে এই ব্যবস্থা রেখেছি তাতে আস্তে আস্তে আমাদের খেলাধূলার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য ছোট বেলার থেকেই ট্রেনিং দেয়া দরকার। এবং সেই সাথে সাথে অন্যান্য যে দেশীয়  খেলাধুলা আছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে চর্চার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে  ছেলেমেয়েদের শারীরিক দিক ভালো থাকবে । মনের দিক থেকে উদার হবে এবং মানসিক শক্তি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী অরো বলেন, আমাদের জাতির পিতাও খেলাধুলা, সাঁতার এবং বিশেষ করে ফুটবল খেলতেন।আমার দাদা নিজেও একজন ফুটবল খেলোয়ার ছিলেন। আমাদের পরিবারটাও খেলাধুলার সাথে জড়িত। আমার ভাই এবং তাদের স্ত্রীরাও খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলো।
খেলাধুলায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমাদের পুরো পরিবারটাই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। কামাল, জামাল এবং তাদের স্ত্রী রোজী এবং সুলতানা কামাল সবাই খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুর্ভাগ্য যে তারা আজ আমাদের মাঝে নেই। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় আমার মা, কামাল, জামাল ও রাসেলকে। জামাল সেনাবাহিনীর অফিসার ছিল, রোজী এবং সুলতানা কামাল স্পোর্টসম্যান ছিল এবং সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বøু (বিশেষ উপাধি)ছিল। কিন্তু পঁচাত্তরে সবাইকে হারিয়েছি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন, নৌবাহিনীর প্রধান এবং বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতি এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ মোল্লা ।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বয়সভিত্তিক শ্রেষ্ঠ আট ক্রীড়াবিদের প্রত্যেককে খেলাধুলায় আরও উন্নতি সাধনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে চেক প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয় প্রতিভাবান সাঁতারু অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ‘সেরা সাতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’। ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি সাঁতারু ব্রজেন দাস (১৯৫৮) ও মোশাররফ খান (১৯৮৮) কৃতী সাতাঁরুদের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহযোগিতায় দেশব্যাপি শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় এই আয়োজনের প্রচার প্রচারণা ছিলো বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়।  
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ নদীমার্তৃক দেশ। এদেশের ছোট শিশুরা ছোট বেলা থেকে খাল, বিল, পুকুর, নদীতে ঝাপ দিয়ে সাঁতার কেটেই বড় হয় এবং এই সাঁতার শেখা এক সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তবে এটাও ঠিক শহরের জীবনে এসে মানুষ সাঁতার কাটার কথা ভুলে যায়। শুধু যারা গ্রামের সাথে সংযোগ আছে তারাই সাতাঁর কাটে। তাই আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশকে বিশ্ব সেরা সাঁতারুর দেশ হিসেবে চিনবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাঁতারুদের সরকারি ভাবে উপযুক্ত প্রশিক্ষন অতীতে ছিলো না। কিন্ত আজকে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছি। তারপরও আমরা দেখছি আমাদের সাঁতারুরা সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত ১২তম এস এ গেমসে মাফুজা খাতুন মহিলাদের সাঁতার খেলায় ১০০ মিটার  ও ৫০ মিটার ব্রেষ্ট স্ট্রোকে দুইটি স্বর্ণ পদক জিতেছেন। এছাড়া এই গেমসে আরো ১৭টি পদক অর্জন করে আমাদের খেলোয়াড়রা বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদে সাঁতারুদের যে নৈপুণ্য দেখেছি তাতে আমি অত্যন্ত আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমরা যখনি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছি এবং ক্ষমতায় এসেছি তখন থেকেই চেষ্টা করেছি আমাদের ক্রিয়া ক্ষেত্রে ছোট শিশু, যুব সমাজ, তরুণ-তরুণী কিভাবে সম্পৃক্ত গতে পারে এবং প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করতে পারে।
প্রথম পর্বে প্রায় ছয় মাস ধরে দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে চলে সেরা সাঁতারুর খোঁজ। বয়সভিত্তিক চারটি গ্রুপের এই প্রতিযোগিতায় দেশের ৪৮৯ উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ হাজার সাঁতারু অংশগ্রহণ করে। ৬৪টি জেলা থেকে মোট ১২৭৫ জন প্রতিভাবান সাঁতারু বাছাই করে তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিযোগিদের ঢাকায় এনে আবারো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১৬০ জনক নির্বাচিত করা হয়। এদেরই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পল্লব কুমার কর্মকার (১১)। একটি পা না থাকা সত্তে¡ও কৃতিত্বের সাথে উন্নীত হয় পরবর্তী পর্যায়ে। বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন তাকে বিশেষভাবে উৎসাহ যোগায়।
তৃতীয় পর্যায়ে উন্নীত সাতাঁরুরা বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের তত্ত¡াবধানে তিনমাস নিবিড় প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়।
গতকাল  চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয় সেরা ৬০ জন সাঁতারু। পুরষ্কার সহ চারটি ইভেন্টের সেরা চারজন নারী ও চারজন পুরুষ সাঁতারু পান বিশেষ পুরষ্কার। এই কৃতি সাঁতারুরা দেশে বিদেশে তিন বছর দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। সেই সাথে এদের শিক্ষাসহ ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করছে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন।



 

Show all comments
  • Nur- Muhammad ২৬ মে, ২০১৭, ৭:২৩ এএম says : 0
    আজ একটি অজানা জিনিস জানতে পারলাম। এতদিন আমার ধারনা ছিল, জয় বাংলা এবং নৌকা প্রতিক মনে হয় ভাসানী বা বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার প্রতিফলন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জয়বাংলার উৎস জানালেন। সারা দেশ ও জাতীয় অজানাকে জানতে পারলো। উপকৃত হলো। নৌকা প্রতিক কি ভাবে আসলো, তা জানানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয় অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ সবায়কে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ মে, ২০১৭, ৭:৪৮ এএম says : 1
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে যা বলেছেন এটাই প্রকৃত দেশ প্রেমিকের কথা এবং কাজ। তবে নেত্রী হাসিনা যদিও তার দেশ প্রেম ও জন কল্যাণ কর কজে করছেন কিন্তু তার কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে এটাও বিচার্য বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সেসব প্রকৃতই যদি প্রতিফলিত হতো তবে আজ দেশের চেহারা এরকম হতো না। কাজেই পরিকল্পনা নিয়ে সেইভাবেই সেটাকে সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে নয়ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে এটাই সত্য। গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে আর তার সেই স্বপ্নকে রুপায়িত করতে পরিকল্পনা দপ্তর। এরপর বাস্তবায়নের জন্য খরচাদির জোগান দেয় অর্থ দপ্তর। সর্ব শেষে এটাকে প্রকৃত রূপ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে পরিকল্পনা ও অর্থ এর কাজ ঠিকই হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়িত আশানুরুপ হচ্ছে না। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করব আপানকেই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এটাও দেখতে হবে; তাহলেই আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে নয়ত দেশ যে গড্ডালিকায় আছে সেখানেই থেকে যাবে। আল্লাহ্‌ সরকারি কর্ম কর্তাদেরকে তাদের দায়িত্ব বুঝার এবং সেইভাবে সঠিক দায়িত্ব সততার সাথে পালন করার শক্তি দিন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ