Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বন্যা

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আলী এরশাদ হোসেন আজাদ : পবিত্র কুরআনের শাশ্বত শিক্ষা ‘ভূমিতে ও পানিতে সব জায়গায়, লোকজন কুকাজে অশান্তি ছড়ায়/ যেরূপ কাজ ওরা থাকে করিতে, আল্লাহ্ চান তার শাস্তি দিতে...’ (কাব্যানুবাদ, রূম: ৪১)। ‘বন্যা’ এমনই এক মহাপরীক্ষা ও শাস্তি। প্রাকৃতিক জলাধারের ধারণ অক্ষম পানি যখন লোকালয় ছাপিয়ে প্রবাহিত হয় তখন তাকে বন্যা বলে। কখনো এর ক্ষত ও ক্ষতি মানুষকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। যদিও এক সময় পানি নেমে যায়, তবু থেকে যায় রোগ-শোক ও দুর্ভোগের বুক ফাঁটা চিৎকার।
পবিত্র কুরআন ও প্রাচীনসূত্রে ‘নূহের বন্যা’ ও ‘সাবাজাতি’র অভিজ্ঞতায় প্রকৃতির চরম বিরূপতার শিক্ষা বহুল আলোচিত। একজন বিশিষ্ট নবী নূহ (আ.)। পবিত্র কুরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে উনপঞ্চাশ বার এবং একটি সুরার নাম ‘নূহ’। প্রায় হাজার বছর আয়ুষ্কালে তিনি মানুষের হেদায়েতে সচেষ্ট থাকলেও তা ছিল প্রায় নিঃস্ফল। মাত্র চল্লিশ জোড়া  ‘সামানিন’ (আশি জন ) নর নারী তাঁর চেষ্টায় ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সমবেত হয়। অন্যরা সবাই নূহকে (আ.) অতিষ্ট করে ছাড়লে তিনি মহান আল্লাহ্র কাছে ফয়সালার ভার দেন। তখন মহান আল্লাহ্ ঐ অবাধ্য সম্প্রদায়কে বন্যার করাল গ্রাসে নিঃশেষ করে দেন। মহান আল্লাহ্ নূহকে (আ.) বন্যার পূর্বাভাস দেন। তখন নূহ (আ.) দীর্ঘ শ্রম ও সময়ে বিশাল ‘কিস্তি’ (নৌকা) তৈরি করেন। তারপর জ্বলন্ত চূলার তলদেশ থেকে পানি উৎক্ষিপ্ত হয়ে প্রবল বন্যার সূচনা করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তারপর মহাপ্লাবন ওদের গ্রাস করে। কারণ, ওরা ছিল সীমা লংঘনকারী। তারপর আমি তাকে ও যারা জাহাজে উঠেছিল তাদের রক্ষা করলাম’ (আনকাবুত: ১৩,১৪)।
প্রবল বর্ষণ ও পানির তোড়ে পাহাড়, নদী, জনপদ একাকার হয়ে যায়, কারো আর এ মহাপ্লাবন থেকে নিঃষ্কৃতির উপায় থাকে না। মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় ঐ ভাগ্যবান ‘চল্লিশ জুটি’ এবং রক্ষা পায় শুধু কিস্তিতে স্থান পাওয়া প্রাণি-উদ্ভিদকূল। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করে খুলে দিলাম আকাশের দরজা এবং মাটি থেকে ফোটালাম ফোয়ারা। তারপর আকাশ ও পৃথিবীর পানি পরিকল্পিতভাবে একাকার হয়ে গেল। তখন আমি নূহকে (আ.) চড়ালাম এক জাহাজে...’ (কামার: ১১-১৩৪)। বর্ণিত আছে ২ রজব থেকে ১০ মহরম পর্যন্ত ছয় মাস আট দিনের বন্যার বিপর্যয়ের পর পাহাড়ের চূড়া ভাসতে থাকে, আস্তে আস্তে নূহের কিস্তি ‘জুদি’ পাহাড়ে ভেড়ে। এ বন্যার বিপুলতা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি ওদের ঢেউ-তাড়ানো আবর্জনার মতো করেদিলাম’ (মু’মিন: ৪১)।
‘নূহের বন্যা’ একটি স্মারক উপাখ্যান। এমনই আরেক অভিজ্ঞতা ‘সাবাজাতি’র কাহিনী। দক্ষিণ আরবের সম্মৃদ্ধ জনগোষ্ঠি ‘সাবা’। পবিত্র কুরআনে ‘সাবা’ নামক সুরায় এদের অবাধ্যতা, পতন ও পরিণতির খোঁজ মেলে। মহান আল্লাহ্ বলেন ‘সাবা অধিবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন- দু’টি উদ্যান একটি ডানে, অন্যটি বাম দিকে... তারপর তারা অবাধ্যতা করে, ফলে আমি তাদের ওপর প্রেরণ করি প্রবল বন্যা। আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দেই এমন দু’উদ্যানে, যাতে উদ্গত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ’ (সাবা: ১৫,১৬)। নদী শাসন, নগরায়ন, বিপনী বিতান, পর্যটন ইত্যাদিতে ওরা চরম উন্নতি করে এবং সেচ সুবিধা ও উন্নত চাষাবাদ, নগরের সুরক্ষার জন্য নির্মাণ করে বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগী ১২টি শক্তিশালী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মহাসুখের সব আয়োজন শেষে ওদের পেয়ে বসে অনাচার ও অবাধ্যতার অসুখ। মহান আল্লাহ্ সাবা জাতির হেদায়েতের জন্য তের জন নবী পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সব ছিল বিফল ও ব্যর্থ প্রয়াস। তাই আল্লাহ্র শাস্তির মোকাবেলায় নিমেষেই সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এজন্য আল্লাহ্ পাঠিয়ে দেন ‘ইঁদুর বাহিনী’। তখন ইঁদুর আল্লাহ্র হুকুমে বাঁধ কেটে দিলে জোয়ারের পানিতে ওদের সব সাফল্য ও দম্ভ তলিয়ে যায়। এতে ঐ এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
বন্যার ন্যায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ, মানবসৃষ্ট নানান পরিকল্পনার ত্রæটি ও দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এ পৃথিবী মানুষের বসবাস উপযোগী হয়েছে মহান আল্লাহ্র করুণা নির্ঝরণী ও শস্য-শ্যামলীমার সুষমায়। কিন্তু বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বিরতিহীন বৃষ্টি ও উজানের পানি যখন মানুষকে করে ‘পানিবন্দি’ তখন হয় প্রাণহানি, সম্পদহানির বন্যা। এ তো মহান আল্লাহ্রই পরীক্ষা ‘নিশ্চয়ই পরীক্ষিত হবে যে তারা, ভয়-ক্ষুধা জানমাল বিনষ্ট দ¦ারা/ করিব আরো আমি ফলমূল হ্রাস, ধৈর্যশীলদের দাও মোর আশ্বাস’ (কাব্যানুবাদ, বাকারা: ১৫৫)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন