Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমযানের প্রস্তুতি

| প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অধ্যাপক মু. সহিদুল ইসলাম : রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাযাতের সওগাত নিয়ে মাহে রমযান আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। মুসলমানদের জন্য মাহে রমযানের গুরুত্ব ও মাহাত্ম অপরিসীম, কেননা- রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস, প্রশিক্ষণের মাস, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বদর প্রান্তরের সেই ঐতিহাসিক জিহাদের মাস, মাক্কা বিজয়ের মাস, সর্বোপরি ‘লাইলাতুল ক্বদরের’ মাস, যে রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই সাওয়াবের বোনাস নিয়ে প্রতি বছর এ মাস ফিরে আসে মু’মেনদের কাছে জান্নাতের পয়গাম নিয়ে।
‘রমযান’ শব্দটি পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারায় একবার এসেছে যার অর্থ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া, অর্থাৎ রোযা পালন করলে আল্লাহ পাক বান্দার গুনাহ খাতা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তাকে নিষ্কলুষ করে দিবেন। আর ‘সিয়াম’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে এসেছে ১৩ বার, যার অর্থ বিরত থাকা সুতরাং খাওয়া-দাওয়া, অন্যায়-অত্যাচার, যেনা-ব্যভিচার ও যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।
রাসুল (সা.) শুরুতে মাসে তিন দিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে কেউ পালন করতো- কেউবা ফিদিয়া (অন্যকে খাবার দিয়ে) তা পালন করতো, কিন্তু দ্বিতীয় হিজরির রমযান মাসে সুরা বাকারার ১৮৩নং আয়াতের মাধ্যমে এক মাস সিয়াম পালন বান্দার জন্য ফরয করে দেওয়া হয় এবং সফরকারী ও রুগ্ণ ব্যক্তি ছাড়া অন্যরা ফিদিয়া (খাদ্য বিনিময়) দিলেও তা হবে না- মর্মে আইন করে দেন। যুদ্ধকালে রোযা পালন রাসুল (সা.) নিষেধ করতেন যাতে শত্রুর সাথে কোন প্রকার দুর্বলতা প্রদর্শিত না হয়, হযরত ওমর (রা.) বলেন, বদর যুদ্ধের সময় আমরা অনেকেই রোযা পালন করি নাই। মাক্কা বিজয়ের সময় রাসুল (সা.) ঘোষণা করেন, শত্রুর সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে হবে তাই তোমরা রোযা পালন করবে না, যাতে তোমাদের লড়াই করার ক্ষমতা অক্ষুণœ থাকে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মাঝে  রযমান মাস উপস্থিত। এটা অত্যন্ত বরকতময় মাস, মহান আল্লাহতায়ালা এ মাসের রোযা তোমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আকাশের দুয়ারসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং বড় বড় শয়তান গুলোকে আটক করা হয়। আল্লাহতায়ালার জন্য এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ মাসের কল্যাণ (ফজিলত) থেকে বঞ্চিত হবে, সে অতি দুর্ভাগা। (নাসাই, বায়হাকি, আহমদ)।
শয়তান মানুষের বড় শত্রু। আল্লাহতায়ালাকে শয়তান বলেছিল, আমি আদম সন্তানের সম্মুখ থেকে ধোঁকা দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করবো, ব্যর্থ হলে পেছন থেকে আসবো, তাতেও যদি ব্যর্থ হই ডান দিক দিয়ে আসবো না পারলে বাম দিকে থেকে আসবো। উপর কিংবা নিচ থেকে এসে তাকে ধোঁকায় ফেলে বিভ্রান্ত করে ছাড়বো। আমি মানুষকে সঠিক পথে (সিরাতাল মুস্তাকিম) থাকতে দিব না। তাকে জাহান্নামে নিয়ে ছাড়ব, শয়তানের এই চ্যালেঞ্জ এবং ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কুরআনের পথে অবিচল থাকতে হবে এবং কুরআন বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করতে হবে। রমযান সেই কুরআন নাজিলের মাস হওয়ায় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য এক মাসের বিশেষ ট্রেনিং কোর্সের ব্যবস্থা করেছেন। সেটি হলো ‘শাহরে রামাদান’ রোযা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণের ট্রেনিং দেয়, যে ট্রেনিং মানুষকে তাকওয়া (আল্লাহর আইন মেনে চলার নীতি) শিক্ষা দেয়। সে জন্য আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে ঈমানদারগণ। তোমাদের জন্য রোযা পালন ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের (নবীদের উম্মতদের) উপর ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়ার (আল্লাহকে ভয় করার নীতি) গুণ অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা: ১৮৩)
মুসলিম ভাই-বোনেরা আসুন, পূর্ণ এক মাস সিয়াম পালনের মাধ্যমে আমরা এই দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
১) এটাই জীবনের শেষ রমযান হিসাবে গ্রহণ করে খালেসভাবে রোযা পালন করি। পবিত্র কুরআন সহিহ-শুদ্ধ ও বুঝে পড়ার চেষ্টা করি।
২) যারা পড়তে জানি না, তারা ভালো আলেমের নিকট গিয়ে লজ্জা শরমের তোয়াক্কা না করে জাহান্নামের ভয়ে কুরআন পড়তে শিখি।
৩) রমযানের প্রতিটি সিয়াম যথাযথভাবে (হক আদায় করে) পালন করি।
৪) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে একাগ্রচিত্তে আদায় করি।
৫) রাতে তাহাজ্জুদ কিংবা ‘কিয়ামুল-লাইল’ আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে হৃদয় দিয়ে আদায় করি।
৬) সেহেরির পরে এবং ইফতারের পূর্বে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর নিকট দোয়া করি।
৭) গরিব, নিঃস্ব, অসহায় ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
৮) পরিবর-পরিজন ও আত্মীয়দের নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করি।
৯) ফিতরা যাকাত যথাযথভাবে আদায় করি এবং দান-সাদকা যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেই।
১০) রমযানের মাসলা-মাসায়েল ও সহিহ হাদিসসমূহ গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করি।
১১) পবিত্র কালামুল্লাহ (কুরআন) মুখস্ত ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ অধ্যয়ন করি। কুরআনের আলোকে জীবনকে গড়ে তুলি।
১২) সর্বোপরি জীবনকে পরিশুদ্ধ করি এবং খালেস নিয়তে তাওবা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন