Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভোট পেতে জনগণের কাছে যান

গণভবনে নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নকে জনগণের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণকে বুঝাতে পারলে তারা আবারও ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনবে। তাই ভোট পেতে জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য তিনি আবারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভেদ এবং দ্ব›দ্ব ভুলে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রচার করতে হবে প্রতিটি ভোটারের কাছে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যে পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে দুঃখী মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন না হচ্ছে সেই পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন,আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন পাবে এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীর দায়িত্ব জাতির পিতার সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।
শেখ হাসিনা বলেন,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিসাব নিকাশ করে এবং জরিপ অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,নৌকার প্রতীক যাদের দেব সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। কেউ অন্য কাউকে সমর্থন দেবেন না। সংগঠনকে গতিশীল করতে সব সাংগঠনিক জেলাকে প্রতি বছর প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশও দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এক ঘন্টার অধিক সময়ের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি রাজনীতির নামে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কারণেই দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে ।
আওয়ামী লীগের ভেতরে অনেকেই উপদল সৃষ্টির চেষ্টা করছেন জানিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দল ভারী করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের দাগী আসামিদেরকেও আওয়ামী লীগে জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। দল ভারী করতে এর কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, যারা আমাদের নেতাকর্মীদের ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে অত্যাচার নির্যাতন করেছে তাদের অনেকে দলে টেনেছে। এরা দলের ভেতরে এসে ক্ষতি করে। এমনকি আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যার সঙ্গে পর্যন্ত জড়িত হয়। এসব তৎপরতা আর না চালাতে দলীয় নেতাদেরকে সতর্ক করে দেন শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘উপদল ও দল ভারী করার স্বার্থে আবর্জনা দলে টানবেন না। আমার কাছে তথ্য আছে, যারা দল ভারীর জন্যে দলের টানেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মনে রাখবেন এরা দলের ঢুকে কমিশন খাওয়ার লোভে। দলে ঢুকে এরা বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়, এদের কনুইয়ের গুঁতায় আমার দলের নিবেদিতরা টিকতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দেন। পেশিশক্তি বাড়াতে জামায়াতের কাউকে ঢোকানোর বিষয়েও হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের পর তারই মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে জাতির জনকের খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করেছিলেন।
সূচনা বক্তব্যের পর দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উন্মোচন এবং নিজের সদস্যপদ নবায়ন করেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ‘অনুসরণ করে’ ‘ভিশন ২০৩০’ দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের জন্য খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আসা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তবুও তো তারা একটা পথে এসেছে।
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলটির রূপকল্প নিয়ে শেখ হাসিনা এতদিন কোনো কথা না বললেও গণভবনে দলের বর্ধিত সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দিয়েছি বলেই তারা দিয়েছে। মানুষ তো মানুষকে দেখেই শেখে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগের গুরুত্ব তুলে ধরে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। তার কাছ থেকে সবাই শিখবে। এটা খুব স্বাভাবিক কথা। সেজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। অন্তত এত যুগ পরে তাদের একটু মাথায় এসেছে এবং তারা ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। তারা শিখেছে। যদি নকল করেও পাস করতে চায়, করতে পারবে। সেটা বাংলাদেশের মানুষ বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, যারা অর্থ সম্পদ লুটপাট করে, মানি লন্ডারিং করে, এতিমের টাকা চুরি করে খায়; তারা এদেশে দেবেটা কী? তিনি বলেন,আমি যদি বিএনপি শাসনামল,২০১৩,২০১৪ ও ২০১৫ সালের তুলনা করি, তবে এই ভিশন একটা ভীষণ অগ্নিকান্ড করে মানুষ হত্যাকান্ড করা মাথায় আসে.. সামনে এসে যায় বিভীষিকাময় অবস্থা, যা সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। যারা এই অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো, তারা জাতিকে কিছুই দিতে পারে না; এটাই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন,অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পর হিন্দু স¤প্রদায় ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এবং পরের বছর বিএনপি জোটের সরকার হটানোর সহিংস আন্দোলনে গাড়িতে ছোড়া পেট্রোল বোমায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসংযোগ বাদ দিয়ে জাতির সামনে কিছু তুলে ধরেছে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই ‘লুটপাট করবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন.. নতুন ভবন খুলবে।
দেশ পরিচালনায় বিএনপি ব্যর্থ হওয়ার বিপরীতে তার দলের সফলতা দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন,আওয়ামী লীগ যা বলে, তা করে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, এটা এমনি এমনি হয়নি, আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ চালাই না। আমরা দেশ চালাই, দেশের সমস্যা আমরা জানি। আমরা জানি, এদেশের মানুষের সমস্যা কী। আমরা জানি কোন এলাকায় কী অবস্থা আছে। বর্ধিত সভায় উপস্থিত জেলা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখতে হবে যে, আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে, জাতিকে আমরা একটা উন্নত জীবন দেব। জাতির কাছে দেওয়া ওয়াদা আমাদের পূরণ করতে হবে। যাতে শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে এদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের তৃণমূল নেতাদের বলেন, “ক্ষমতা ভোগের বস্ত না। ক্ষমতা হচ্ছে; দায়িত্ব পালন করার একটা সুযোগ। এই সুযোগটা আমরা পেয়েছি। কি পেলাম তা না ভেবে কি দিতে পেরেছি তা ভাববেন। জনগণের কল্যাণে প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মাস, প্রতিটি বছর জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এর আগে, আমাদের কোনো বিশ্রাম নাই।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এরসঙ্গে যেই জড়িত থাক, আমার দলের কেউ জড়িত থাকলেও তাকে ছাড়ব না।
এই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি মরলেই খালেদা জিয়া আহা উহু করে। তাদের সাথে যোগাযোগটা কী বের করতে হবে।
এই বর্ধিত সভায় মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটি এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, উপ-দপ্তর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • মুস্তাফিজ ২১ মে, ২০১৭, ২:০১ এএম says : 0
    জনগণ কি আদৌ ভোট দিতে পারবে ???????????????
    Total Reply(0) Reply
  • রিফাত ২১ মে, ২০১৭, ২:০২ এএম says : 0
    জনগণের কাছে যাওয়ার মত মুখ কী তাদের আছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ