Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি সঙ্কট নদী ও খাল খনন নেই

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাউবো একযুগেও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি
আবু হেনা মুক্তি : বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। বিকল্প উৎস হারিয়ে বৃহত্তর খুলনার বোরো ধান ও গমসহ শীতকালীন ফসল চাষে এমনকি চৈত্র বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে শাকসবব্জি রোপণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হচ্ছে দেদারছে। এ অঞ্চলের চাষাবাদ দিনে দিনে সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে ৩ হাজার কোটি ঘণফুটের ওপর ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহার হয়েছে। এখনো চলছে সবজির ক্ষেতে পানি উত্তোলন। অথচ কৃষি স¤প্রসারন বিভাগ এ সম্পর্কিত কোন বিশেষ প্রকল্প গত ১ যুগেও গ্রহণ করেনি। তাছাড়া পাউবো নদী ও খাল খননে গত একযুগেও তেমন কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। দু’একটি প্রকল্প গৃহীত হলেও কাজের চেয়ে হরিলুট হয়েছে বেশি। নদী খননের ক্ষেত্রে দেখা গেছে দু’পাশের মাটি কোন রকম কেটে পাড় তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু নদী খনন হয়নি। চাল গম আর প্রজেক্টের অর্থ ব্যয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ধরনের কর্মকান্ডের মধ্যে খুলনার নালুয়া নদী, ডুমুরিয়ার কপোতাক্ষ নদ, মাংঙ্গা নদী, বটিয়াঘাটার ঝপঝপিয়া নদী, হেতালবুনিয়া খাল অন্যতম। এছাড়া বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জমিভূক্ত এবং সরকারের খাস খতিয়ানে থাকা কয়েক হাজার খাল সংস্কারের অভাবে এবং পলি পড়ে পানি সংরক্ষণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খালগুলোর অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। অনেক খাস খাল ও জলাখাল এখন ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু খালের অস্তিত্ব বর্ষাকালে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পানি উৎস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত এক দশকের ব্যবধানে খুলনাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহারে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে চাষী অধিক মাত্রায় বোরো চাষে ঝুকছে। আর সবজির আবাদও বাড়ছে। সবজি এখন সারা বছরই হয় এবং তা সেচ নির্ভর। গত বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার কোটি ঘণফুট ভূগর্ভস্ত পানি ব্যবহার হয়েছিল। কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বোরো চাষে গড়ে একরে ৮০ ইঞ্চি পানির প্রয়োজন হয়। ঐ হিসাব অনুযায়ী এক একরে ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ ঘনফুট পানির প্রয়োজন পড়ে। সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলায় প্রায় পৌনে ১ লাখ অগভীর (শ্যালো মেশিন) এবং ৬ শতাধিক নলকুপ সেচ কাজে ব্যবহারে হয়েছে এবং এখনো অনেক জায়গায় হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলের চাষীরা অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্রতত্র নলক‚প স্থাপন করায় সমস্যা আরো ঘনিভূত হয়। পাশাপাশি কৃষি বিভাগেরও রয়েছে যথেষ্ট উদাসীনতা । প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায় “১৪ সালের এ অঞ্চলে প্রায় পৌনে ৩শ’টি গভীর এবং প্রায় ১৮ হাজার অগভীর নলক‚প (শ্যালো মেশিন) সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা প্রায় চারগুন। বোরো ধানের চারা রোপনের পর থেকে বোরো ক্ষেতে সেচদান শুরু হয়। বিপুল পরিমান ধান চাষে পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি ভান্ডারে টান পড়ে। পানিরস্তর প্রতিবছর বোরো আবাদকালে নীচে নেমে যায়। ইরি বোরো চাষ মৌসুমে কমে যায়। এ পানি ভান্ডারপূর্ণ পূরণ হয় বৃষ্টি ও নদীর পানিতে। কিন্তু এবার যদি যথেষ্ট বৃষ্টিপাতও হয় তবুও জমিতে খালের মত রিজার্ভ টাঙ্কি না থাকায় এই সময় সঙ্কট তৈরী হয়। ফলে বৃষ্টি পানিতে এবার ভূগর্ভস্থ পানি ভান্ডারের তেমন পূর্নভরনের সম্ভাবনা নেই। অপরদিকে ফারাক্কার প্রভাবে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ নদীগুলো আজ মৃত। নদীতে পানি থাকে না। কোন কোন নদীতে একটা ক্ষীণধারা বহমান থাকে। কোথাও হাটু বা কোথাও কোমর পানি থাকে। নদীগুলোর বুক জুড়ে ধান চাষ হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হলে প্রয়োজন ভূগর্ভস্থ পানির উৎস বৃদ্ধি করা। আর এ জন্য দরকার মৃত নদীগুলোকে জীবিত করা। কিন্তু মৃত নদীগুলোকে ফের জীবিত করতে সমন্বিত পানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে এ অঞ্চলে পানি সম্পদ উন্নয়নে তেমন কোন বাস্তবমুখী প্রকল্প নেই। খুলনার নাগরিক নেতা শেখ আশরাফ উজ জামান ইনকিলাবকে বলেন, সবকিছুই হতে হবে পরিকল্পিত মাফিক। অন্যথায় পানির স্তর খুব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে যাবে। যা ভবিষ্যতের জন্য হবে চরম হুমকিসরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব মো: আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বাস্তবমুখী প্রকল্প এখনই গ্রহণ না করলে গোটা বৃহত্তর খুলনাঞ্চল জুড়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হবে তা আগামী ৫০ বছরেও উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে না। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোকে যথা সময়ে ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ