ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আফতাব চৌধুরী : বাংলাদেশ মৌসুমী বায়ুর দেশ। এই বায়ুর প্রভাবে এ দেশে বছরের একটি সময়ে দু’তিন মাস ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়ে আসছে যে জন্য বাংলার ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল বলে চিহ্নিত হয়েছে। ১০/১৫ বছর আগেও বর্ষাকালে ৮/১০ দিন পর্যন্ত একটানা বর্ষণ হতো এবং কখনও ভারী বর্ষণও হতো। কিন্তু তখনও সিলেট মহানগরীতে পানি জমে যাওয়ার দৃশ্য কাউকে দেখতে হয়নি। সিলেট শহর এখন মহানগরীতে পরিণত হয়েছে, সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হয়েছে, নগরীতে শত শত বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। অথচ সমান তালে উন্নয়ন হয়নি নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার। ফলে এখন মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে মহানগরীর ৫০ শতাংশ এলাকা ডুবে যাচ্ছে। এ অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মহানগরীর অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় মানুষ বসবাসই করতে পারবে না।
যে কোন স্থানেই পানি জমে যাওয়ার মূলে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থার অভাব। সিলেট মহানগরীতে কিছু দিন আগে যে নজিরবিহীন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণও যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ত্রæটি তা অস্বীকার করা যাবে না। বর্তমানে মাঝারি বর্ষণেও নগরীর নিম্নাঞ্চল যেভাবে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে তাতে এ নগরীতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহানগরীর এ দুর্দশা দেশ ও জাতির দৈন্যকেই বিশ্ববাসীর কাছে প্রকট করে তোলে। প্রকৃত পক্ষে সিলেট মহানগরীর এমন বেহাল অবস্থার সৃষ্টি একদিনে বা এক বছরে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে নগর জুড়ে অপরিকল্পিতভাবে প্রাসাদ-সৌধ-বহুতল ভবন গড়ে তোলা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় সুপরিকল্পনার অভাব, পাহাড় নিধন ইত্যাদি চলতে দেওয়ার ফলে আজ নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মহানগরীর বিরাট এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খাল ও ছড়া। বর্তমানে এসব খাল ও ছড়া পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনে অক্ষম। খালগুলো সংস্কারের জন্য গত ২০ বছর ধরে নানা কাজ, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। অভিজ্ঞমহলের অভিযোগ হলো, এসব খাল সংস্কারের নামে কেবল রাজনীতি ও লুটপাটই চলেছে।
দেখা যায়, বিভিন্ন খালের মাটি কেটে খাল পাড়েই রাখা হয়, ফলে বৃষ্টিতে সে মাটি আবার খালে গিয়েই পড়ে। এভাবে খালের মাটি ক্রমেই খালে গিয়ে খালের বুক ভরিয়ে তোলে। তাছাড়া খালের উপর অবৈধভাবে বাড়িঘর, দোকান-পাট গড়ে তোলা, নির্বিচারে পলিথিনসহ খালে বর্জ্য ফেলার কারণে এবং নিয়মিত পানি অপসারণ কাজ না চললে খাল ভরে যেতেই পারে। বলতে গেলে সিলেট নগরীর খাল কোনদিনই সুপরিকল্পিতভাবে খনন করা হয়েছে বলে দাবি করা যাবে না। নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান অবলম্বনটি নিয়েই যদি এমন অবাঞ্ছিত কাজ-কর্ম চলে তা হলে নগরীতে জলজট তো হতেই পারে। তাছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন নালানর্দমার অধিকাংশই অবৈধ দখলদারদের নির্মিত ভবন, দেয়াল, দোকানপাটের অংশ হয়ে গেছে। নতুন গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাশনের নালার ওপর কালভার্ট রয়েছে। এসব কালভার্টের সংস্কার তো হয়ই না বরং বর্জ্যে ভরে যায়। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড়ী ঢল ও মাটি নেমে এসে নি¤œ এলাকা প্লাবিত করে, উপরন্তু পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথগুলোও রুদ্ধ করে দেয়। এতসব অনিয়ম, ত্রæটি ও অব্যবস্থা বছরের পর বছর চলতে থাকলে নগরবাসীর পানিবন্দী না হয়ে গতি কোথায়?
বস্তুত সিলেট মহানগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে সুপরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব সর্বাধিক হলেও প্রশাসনেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। নগরে জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠবেই। কিন্তু যেনতেন প্রকারে, নির্বিচারে পাহাড় বা তার পাদদেশ কেটে বস্তি গড়ে উঠলে জলাবদ্ধতা বন্ধ করা যাবে না। বাড়িঘর তৈরির ক্ষেত্রটি বা উন্নয়ন সিটি কর্তৃপক্ষেরই এক্তিয়ার। বিভিন্ন খালসহ মহানগরীকে ঘিরে যেসব ছোট ছোট খাল রয়েছে সেগুলোর পরিকল্পিতভাবে সংস্কার যেমন জলজট দূর করার জন্য অপরিহার্য, তেমনি খনন কাজে রাজনীতি ও লুটপাটের মনোবৃত্তি না থাকাটাও একান্ত প্রয়োজনীয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য বছর কয়েক আগে প্রণীত মহাপরিকল্পনাটিও সরকারের বিবেচনায় আনা দরকার। মোট কথা সরকার, স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থাগুলোসহ সকলেই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে না এলে চলবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।