Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চলে রমজানের আগেই চাল ও নিত্যপণ্যে আগুন

মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ধান এখন ব্ল্যাক মানি ম্যানদের গোডাউনে
আবু হেনা মুক্তি : রমজানের আগেই নিত্য পণ্যে আগুন। আর চালের বাজার চড়া। নানা কলা কৌশলেও যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাজার দর। টিসিবি নামলেও এখনো লাগাম টেনে ধরা যায়নি। গোশতের দামও উর্ধ্বমুখী। কোন কোন বাজার বিশ্লেষকের মতে মধ্যস্বত্তভোগী সিন্ডিকেটই উপকূলীয় জনপদ বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। আর তাতেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস চরম পর্যায়ে। একটি কুচক্রী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই স্থানীয় বাজারকে ক্রমাগত অস্থিতিশীল করে তুলছে। স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে দুর্যোগ কবলিত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশার সীমা থাকবে না। বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে দফায় দফায় চাল আসছে। গত বছর গুলোতে শুধুমাত্র সিদ্ধ চাল আসত। এবার ভারত থেকে আতপ চালও আসছে। এখন ইরি বোরো ভরা মৌসুম। হাটে বাজারে ধান চাল। তার পরেও লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে চালের দাম। শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনায় গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা এবং চিকন চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের মূল্য বাড়ার পেছনে কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাঙ্খিত আমন উৎপাদন হলেও বাজারে তার ছড়াছড়ি নেই। তাছাড়া হাওড় অঞ্চলের দুর্যোগকে পুঁজি করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। অপরদিকে জেলা মার্কেটিং অফিস বলেছে, মিল মালিকরা মজুদ করছে। এই অসাধু মজুদদার কারা? তাদের চিহ্নিত এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কমের কারণে দাম বেড়েছে। তাছাড়া ইদানিং এ সেক্টরে মহানগরীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে না। এদিকে একটি সূত্র বলছে, বিগত জোট সরকারের আমলে যারা অঢেল বø্যাক মানি কামিয়েছেন তারা বিভিন্নভাবে মার্কেটে টাকা দিয়ে মৌসুমের শুরুতেই ধান কিনে মজুদ করছে। ফলে ধান চলে যাচ্ছে বø্যাক মানিওয়ালাদের গোডাউনে। সরকার ফেয়ার প্রাইসে চাল গম সরবরাহ করলেও বাজারে সরবরাহ কমই থাকছে। যে কারনে ঢাক ঢোল পিটিয়ে কোন ভাবেই চালের বাজার কব্জায় আনা যাচ্ছে না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গতকাল খুলনা নগরীতে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮-৪০ টাকা, মাঝারী ৪২-৪৫ টাকা, চিকন (মিনিকেট) ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবারও ছিল একই চিত্র ।
এেিদক রমজানের বাকী ৮ দিন। ইতোমধ্যেই নিত্যাপণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে মাছ মুরগী সব্জি থেকে শুরু করে চাল ডাল সকল ভোগ্যপণ্যের দাম এক দফা বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। গরুর গোশতের দাম এখন ৪শ’ টাকার পরিবর্তে ৪শ’৭০ থেকে ৪শ’৮০টাকা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে খুলনায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে গত ১৫ মে থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করে। এ বছর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন সংস্থাটি। কোনো ডিলার অনিয়ম করে তাকে কোনো ভাবেই ছাড় দিবে না সংস্থাটি। এমনকি তাকে আইনের আওয়তায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন খুলনার অফিস প্রধান।
টিসিবি খুলনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, পিরোজপুর জেলায় ইতোমধ্যে ৪শ’ ৮৪ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগরীর ১৫টি পয়েন্টে ৫টি ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ বিপণন কেন্দ্রে সয়াবিন তেল, চিনি, মশুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি। তবে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন নির্ধারিত মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।
স¤প্রতি টিসিবি প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এ বছর ভোক্তাদের মাঝে চিনি ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মশুর ডাল ৮০ টাকা ও খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। তবে বিভাগীয় শহরে ৫টি করে এবং বাকি জেলা সদরগুলোতে ২টি ট্রাকে করে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। একজন ভোক্তা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৩ কেজি মশুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি ছোলা ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি চিনি, আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ কেজি মশুর ডাল, ৩শ’ থেকে ৪শ’ লিটার সয়াবিন তেল, ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি ছোলা এবং বিশ থেকে ত্রিশ কেজি খেজুর বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া নিয়মিত পরিবেশকরা ৫শ’ থেকে ৬শ’ কেজি চিনি, ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি মশুর ডাল, ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি সয়াবিন তেল, ৫শ’ থেকে ৬শ’ কেজি ছোলা পাবেন। নগরীর ১৫টি পয়েন্টে ৫টি ট্রাকে এসব পণ্য ভোক্তাদের মাঝে বিক্রি করা হবে। পয়েন্টগুলোর মধ্যে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় ও শান্তিধাম মোড়ে একটি ট্রাক, নিউমার্কেট, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ও বয়রা বাজার মোড়ে একটি ট্রাক, খালিশপুর গোলচত্বর, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও চিত্রালী বাজার একটি ট্রাক, ময়লাপোতা মোড়, নতুন বাজার ও লবণচরা বাজারে একটি ট্রাকে করে এসব পণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হবে।
দায়িত্বশীল সূত্রমতে, উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের এমনিতেই ক্রয় ক্ষমতা অন্যানা স্থানের তুলনায় নাজুক। ভৌগোলিক কারনে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার দরুন বাজারটি সিন্ডিকেটের কব্জায় আনা অতি সহজ। সরকারের ভাবমুর্তি পদ্মার এপারে বিশেষভাবে ভূলুন্ঠিত হয় এমন মিশন নিয়ে চক্রটি সোচ্চার বলে একটি বিশেষ সংস্থা আভাস দিয়েছে। এসব বিষয়ে সংস্থাটি চুলচেরা বিশ্লেষন করে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে সজাগ করা ও সমাধানের পথ বাতলানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে উপকুলীয় অঞ্চলের স্ট্যাবিলাইজার ছাড়াই চলবে ওয়ালটন ফ্রিজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে
ব্ল্যাক মানি হোল্ডার গোডাউন মালিকদের চিহ্নিত করে এবং একটি নিদির্ষ্ট পরিমানের বেশি ধান চাল মজুদ না রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা গ্রহন এখনই জরুরী। তা না হলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্তভোগীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহনেরও সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ