ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মোহাম্মদ আবু নোমান : সম্প্রতি র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের আক্রমণে কম্পিউটার লক হয়ে যাওয়াসহ মনিটরে একটি বার্তা ভেসে ওঠে। এতে কম্পিউটার চালানোর জন্য ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে সমস্ত ডেটা, এনক্রিপশন উড়িয়ে দেয়া হবে। এ যেন অপহরণের পর মুক্তিপণ চাওয়া! ‘র্যানসম’ ও ‘ম্যালওয়্যার’ মিলিয়ে এই হানার নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যানসমওয়্যার’। ‘ট্রোজান ভাইরাসের’ মতো এ ধরনের ম্যালওয়্যার এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে বহু দেশ নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করছে। আক্রমণ না হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এ ধরনের আক্রমণ মনিটরিং বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, জাতীয়ভাবে মনিটরিং করার তেমন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
ছিঁচকে চোরের মতো নিরিবিলি কাজ সারার মোক্ষম অস্ত্র সাইবার হামলা। এ হামলার কার্যকারিতা ব্যাপক। অথচ সাইবার যুদ্ধে ধ্বংস বা রক্তপাত নেই, সবচেয়ে বড় কথা, নেই কোটি ডলার খরচের খড়গও। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো আজ যেমন তাদের শক্তি ও সক্ষমতা দেখিয়ে থাকে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ছাড়াও সময়োপযোগী বিভিন্ন সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী নিয়ে। তেমনি আজ প্রতিটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এমনকি পারমাণবিক গবেষণাগারও সাইবার হামলার হুমকির মুখে। ২০১০ সালে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা ব্যহত করতে সাইবার হামলায় ‘স্টাক্সনেট’ নামে একটি ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এ গুপ্তচরবৃত্তি ধরা পড়ে অনেক পরে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে সাইবার অপরাধী দমনে নিরাপত্তাখাতে স্থায়ীভাবে যোগ হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা শাখা। কারণ সাইবারের গুরুত্ব সামরিক গুরুত্বের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সাইবার ইস্যু আজ পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও বেশি আলোচিত। যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে হিরোশিমা নাগাসাকির পারমাণবিক বিপর্যয়ের চেয়েও মারাত্মক ও ভয়াবহ কোন বিপর্যয়।
যে কোন রকম যুদ্ধ বা সন্ত্রাসী হামলা নয় বরং সাইবার হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সবচাইতে বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হ্যাকিং বা ইমেইল আইডির গোপন সব তথ্য জেনে নেয়া, এ ধরনের সাইবার হামলায় একটি দেশের অর্থনীতিও ডুবিয়ে দেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব সাইবার হামলা হয়েছে সেসবের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের’ (কেপিআই) বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর অবস্থা কেমন তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। আমাদের রয়েছে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, এছাড়াও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, সামরিক ও বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যবস্থা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের নিজস্ব নেটওয়ার্ক, বন্দর ব্যবস্থাপনাসহ রয়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র। এ বছর আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উদ্বোধন করা হবে। তখন এই সব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে? আর এদের নিরাপত্তাই বা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে? এখন থেকেই সেসব চিহ্নিত করতে হবে যাতে আপদকালীন সময়ে করণীয়গুলো কী কী আগে থেকেই জানা যায়। কখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কার কী দায়িত্ব হবে, সেগুলো এখনই ঠিক করে ফেলতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্রাউডস্ট্রাইকের গবেষক অ্যাডাম মায়েরস জানিয়েছেন, একবার এ ভাইরাস কোনো নেটওয়ার্কে কার্যকর হতে পারলে তা দ্রæত পুরো অবকাঠামোটিতেই ছড়িয়ে পড়ে। তখন এটিকে আর কেউ আটকাতে পারে না। আক্রান্ত দেশগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না হলেও ওই তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, এ তালিকায় বাংলাদেশ থাকার ঝুঁকি রয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার হামলার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। খোদ ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘র্যানসমওয়্যার’ সফটওয়্যার ছড়িয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার। অনেক দেশের স্বাস্থ্য, টেলিকম বা যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত এ হামলার শিকার।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, পরিচিত ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর এ সফটওয়্যার প্রোগ্রামটি কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনের মতো যন্ত্রে ঢুকিয়ে দিতে পারলে সেটির নিয়ন্ত্রণ চলে আসে হাতের মুঠোয়। তখন ব্যবহারকারীকে নিজের কম্পিউটারে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। অনেক সময় হার্ডডিস্কের অংশ বা ফাইলে পাসওয়ার্ড দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। পরে তা থেকে মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করে হ্যাকাররা। ইন্টারনেটের সর্বব্যাপী প্রভাব যেভাবে বিশ্বজুড়ে আমূল বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনমান, কাজের ধারা তেমনি রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি তৈরি হচ্ছে এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। মানুষ যত বেশি সভ্যতার আলোক পাচ্ছে, তত বেশি করে আনন্দের সামগ্রী খুঁজে ফিরছে। এর সাথে আধুনিক যুগের প্রাণ প্রাচুর্য ও বিভিন্ন পন্থা আবিষ্কারের সাথে তত বেশি করে জীবনকে উপভোগ করছে। কেননা সময় ও যুগোপযোগী কৃষ্টি কালচারের ভোগ-উপভোগ অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ধারণ করছে জীবন চলার পথে প্রতিটি মানুষ। সাইবার আক্রমণকে এক সময় কল্পকাহিনী মনে করা হতো। এখন আর কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়, ইতোমধ্যে এরকম হামলার শিকার হয়েছে বহু দেশ।
তথ্য চুরির মতো অপরাধ এখন আর কোনো নতুন খবর নয়। রতœ পাথর বা দামি কষ্টি পাথরের মূর্তি না, তারা চুরি করছে তথ্য। যেখানেই যুদ্ধে জড়িয়েছে, সেখানেই কম্পিউটারগুলোর ব্যবচ্ছেদ করে হাতিয়ে নিয়েছে নানা তথ্য। ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার সময় ব্যপকভাবে কম্পিউটারগুলোর মেমোরি হাতিয়ে নেয়া হয়। ২০১৪ সালের এক সাইবার হামলায় হ্যাকাররা ৫০ কোটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছিল বলে জানিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইয়াহু।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।