পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
“এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এই ফসল অর্জিত হয়েছে”- প্রধানমন্ত্রী
চলতি অর্থবছরে ৭.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি; মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৬০২ ডলার : আগামি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ এবং সর্ববৃহৎ ৫০ অর্থনীতির মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্জিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ যা ‘নেক্সট ইলেভেন’ আর ‘এশিয়ান টাইগারে’র সার্থক উপস্থাপন। পরিকল্পনামন্ত্রী এই অর্জনের কৃতীত্ব দিয়েছেন এদেশের কৃষক, শ্রমিক- ১৬ কোটি আপামর জনতাকে। আর এই অর্জনের সম্মুখ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার- এমন বক্তব্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের।
এই অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলো দেশ। পাশাপাশি আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে পরাপর দুই বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। গতবছর ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ; আর এবার ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। রেমিটেন্সের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি আর নি¤œ রপ্তানিহারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমালোচকদের অবাক করে বিশ্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ। এবার বিশ্বের সর্ববৃহৎ ৫০টি অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে প্রবৃদ্ধির হারে ইরাক ও ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য বেশি, ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর সারাবিশ্বের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হারে ইরাক, মায়ানমার, আইভরি কোস্ট, ভারত ও লাও’র পরে বাংলাদেশের অবস্থান।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভাশেষে উচ্ছাসিত পরিকল্পনামন্ত্রী উচ্চকিত কন্ঠে সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করলেন এই অভূতপূর্ব অর্জন।
“৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ঘরে যাওয়া আমাদের স্বপ্ন ছিল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ‘৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফাঁদ’ থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছি। চলতি অর্থবছরে আমরা ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এটা অসাধারণ সাফল্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে পৃথিবীতে ভারতের পরেই আমাদের অবস্থান। বিশ্বের দুটি দেশের মধ্যে (প্রকৃত ৩টি বা ৬টি দেশের মধ্যে) যখন অবস্থান হয় তখন সবারই ভালো লাগে। আশা করি এই অর্জন সবার ভালো লাগবে।”
“২০২১ সালের মধ্যে আমরা স্বপ্নের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবশ্যই পৌঁছাব”Ñ বলেন উৎফুল্ল পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই অর্জনের কৃতীত্ব দিয়েছেন সবাইকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি’র বৈঠক শুরুর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এই ফসল অর্জিত হয়েছে।”
এই অর্জনের ঘোষণা শেষ হতে না হতেই পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকাশ করেন আরেকটি সাফল্যের তথ্য যা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে আরেকধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এবার মাথাপিছু আয় ১৩৭ ডলার বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার। গতবছর এটা ছিল ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার।
এরপর পরিকল্পনামন্ত্রী ঘোষণা করেন বাংলাদেশের আরেকটি মাইলফলক স্পর্ষের তথ্য। সরাসরি অর্জনের তথ্যটি না জানিয়ে তিনি কিছু ভূমিকা বলে শেষে জানান পরিসংখ্যানটি।
“অনেকের আশংকা আমরা এসব অর্জন ধরে রাখতে পারবো না, কারণ আমাদের দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ কম। বিনিয়োগের হার জিডিপি’র ৩০ শতাংশে না নিতে পারলে অর্থনীতি টেকসই হবে না। গতবছর বিনিয়োগের হার ছিল জিডিপি’র ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর এবার এই হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপি’র ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ (গতবছর এই হার ছিল ২২ দশিমিক ১ শতাংশ); আর সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।”
তবে এত অর্জনেও আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না পরিকল্পনামন্ত্রী। “আমরা এখনও রানওয়েতে দৌঁড়াচ্ছি। এখনও টেকঅফ (উড্ডয়ন) স্টেজে আসিনি। অর্থনীতিতে অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে আমাদের কাজ করা হয়নি। তাই আমরা ধীরে এগুচ্ছি।”
সব প্রস্তুতি ছাড়াই উড্ডয়নের নেতিবাচক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রবাহে ভারতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমেছে; চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমেছে। তাই আমরা কিছুটা সাবধানে এগুচ্ছি। আমরা সমন্বিতভাবে জিডিপি’কে উপরে নিয়ে যেতে চাই যাতে আর কখনো নিচে নামতে না হয়।”
১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট
আসন্ন নতুন অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে সরকার, যাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও জ্বালানি খাত। পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য আরও ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ ধরলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়ায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।
অনুমোদন পাওয়া এই এডিপি চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, বা ৩৯ শতাংশ বেশি।
এনইসি সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মসূচি জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার যোগান আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল বা দেশীয় উৎস থেকে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৬৩ শতাংশ। আর প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় পাওয়া যাবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ।
এবার এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন খাতে। পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের চাহিদা পূরণে এ বিশাল বরাদ্দ।
এর মধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা আর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল নির্মাণে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, কাঁচপুর মেঘনা এবং গোমতি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎখাত। এ প্রস্তাব মোট আকারের ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ খাতের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্যই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এডিপিতে।
ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য।
এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে প্রায় ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার।
স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১০ হাজার ২০১ কোটি টাকা এবং খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে মোট ৬ হাজার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এর আগে প্রতি অর্থবছর শেষে বরাদ্দ কমিয়ে এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু মূল বরাদ্দ ঠিক রেখে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হলেও বৈদেশিক সহায়তা ৪০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।