Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পদে আবারও পরিবর্তন আসছে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : চার মাসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্বে আবারও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ব্যাংকটির অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। গত চার মাস ধরে ব্যাংকটির অদৃশ্যমান নেতৃত্বে এস আলম গ্রুপ থাকলেও বর্তমানে অন্য দুইটি শীর্ষ গ্রুপ নেতৃত্বে আসছে, যার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত এপ্রিলের শুরু থেকেই। আগামি ২৩ মে ব্যাংকটির এজিএম-এ নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেবেন; পরিবর্তন আসবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহ শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পদগুলোতেও। ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া গ্রুপ দুটি দেশে ওষুধ ও আবাসন শিল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
গত ৩০ মার্চ ইসলামী ব্যাংকে থাকা সাড়ে ৭ শতাংশের সাড়ে ৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেয় আইডিবি। এরপর গত ১১ মে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, যাতে তিনি উল্লেখ করেন ব্যাংকের ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার’ কাছে ব্যাংকটির পর্ষদের অসহায় হয়ে পড়ার কথা।
ওই স্ট্যাটাসে আহসানুল আলম লিখেছেন, “ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ব্যাংকটি থেকে তাঁর সরে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
এই সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করার জন্য ব্যাংকটিতে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রেও আমার কিছু দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটিতে কিছু বিষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যার কারণে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে।”
এ কারণে ব্যক্তিগতভাবে তিনি পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি এই সিদ্ধান্তের কথা তিনি ইতিমধ্যে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষকে’ জানিয়েছেনও। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম ২০১৬ সালের ৬ মে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পরিচালনা পরিষদের সভায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করলে তিনি নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, এস আলম গ্রæপ প্লাটিনাম এনডেভার্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, বøু ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চার, গ্রান্ড বিজনেস, এক্সেল ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, হযরত শাহজালাল (র.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটির নামে গতবছর প্রায় ৭শ কোটি টাকার শেয়ার কেনে। এগুলো ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১৪ দশমিক শুণ্য ৬ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ারধারণের পর গত জুনে এজিএম’এ নতুন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে হযরত শাহজালাল (র.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় আরমাডা স্পিনিং মিলের কাছে।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের সভায় ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল আনা হয়। পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পষিরদ। ওই চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোস্তফা আনোয়ার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে। তিনি এস আলম গ্রæপের মালিকানাধীন কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। কমার্স ব্যাংকের ৪০ ভাগ শেয়ার এস আলম গ্রæপ কিনে নেয়ার পর আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। ব্যাংকের নতুন এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. আবদুুল হামিদ মিঞাকে। তিনি এস আলম গ্রপের মালিকানাধীন আরেক ব্যাংক ইউনিয়নের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এস আলম গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম। ব্যাংকের কম্পানি সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কম্পানি সচিব জাহিদুল কুদ্দুস মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম যিনি এস আলম গ্রæপের চেয়ারম্যান ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক।
গত ২৪ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন আইডিবি প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জাজ। তিনি লিখেছিলেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ২০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে মাত্র দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রয়েছেন। অথচ ব্যাংকটিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের পরিমাণ ৫২ শতাংশ। পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি শেয়ারধারীরা মনে করেন, তাঁদের হাত থেকে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও স্বতন্ত্র পরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে উচ্চপর্যায়ের এই সাস্প্রতিক পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে এবং তাঁদের অমতে করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), জেদ্দা; ফিন্যান্স হাউস, কুয়েত; জর্ডান ইসলামিক ব্যাংক; ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন, দোহা; ইসলামিক ব্যাংক, বাহরাইন; ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং, লুক্সেমবার্গ; আল-রাজি কোম্পানি, সউদী আরব; শেখ আহমেদ সালেহ জামজুম, জেদ্দা; প্রয়াত ফুয়াদ আবদুলহামিদ আল-খতিব, সউদী আরব; দুবাই ইসলামিক ব্যাংক; পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোশাল সিকিউরিটি, কুয়েত; মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস, কুয়েত এবং মিনিস্ট্র অব আওকাফ অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, কুয়েত।
আইডিবি প্রেসিডেন্টের চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে ব্যাংকটির অর্ধেকের বেশি শেয়ার থাকার পরও তাদের না জানিয়ে ও অমতে বর্তমানে প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারা যাতে ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত হতে না পারেন সেজন্য অল্প সময়ের নোটিশে সভা ডাকা হচ্ছে- যা উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।
এরপর গত ৩০ মার্চ বোর্ড সভায় ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা আসলো আইডিবি’র পক্ষ থেকে।
#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামী ব্যাংক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ