Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চাষীদের স্বপ্নপূরণে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার -প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম

পাট থেকে পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন

| প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৭, ১১:৪০ পিএম

স্টাফ রিপোর্টার : সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাটচাষীদের সোনালি স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে পলিব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, ঢাকা-৫ আসনের এমপি মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান, বিজেএমসি চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজেএমসির বিভিন্ন  স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত¡াবধায়নে পাটের  তৈরি পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছে বিজেএমসির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ। উদ্ভাবিত পলিব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাটচাষীদের সোনালি স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত এ পলিব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও  টেকসই। পাটের সূ² সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি পলিথিন মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই পাট দিয়েই বিশ্বে সুপরিচিত হবে। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আগামীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাটের পলিথিন উৎপাদন শুরু করা হবে। তিন মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে আনা হবে যন্ত্রপাতি। সবকিছু করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে। সরকারি ভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারি ভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হবে এই ব্যাগ। বাজারে  যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টেকসই এবং ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে এই পাটের পলিথিনে। বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে এই পচনশীল ব্যাগ তৈরির একটি সেমি অটোম্যাটিক পাইলট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত এই পাট পলিব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। তাই এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে কিছু ছোটখাটো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দেশীয় প্রযুক্তিতে বড় মেশিন তৈরির জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে, যা দিয়ে পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। এতে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালন করা সম্ভব হলেই বাণিজ্যিকভাবে এই পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশের দূষণের পাশাপাশি নগরে জলবদ্ধতা তৈরির একটি মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। সস্তা ও অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় নানা সরকারি উদ্যোগ সত্তে¡ও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যবহৃত পলিথিন সুয়ারেজ পাইপ, ড্রেন, নদী, নালা ইত্যাদিতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সভায় জানানো হয়, পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ সেলুলোজ বিদ্যমান। তাছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আবিষ্কৃত এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। তাছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে। পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া এ ধরনের প্যাকেজিংয়ের বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বিজেএমসিতে এই পচনশীল ব্যাগ তৈরির একটি সেমি-অটোম্যাটিক পাইলট প্ল্যান্ট বসানোর কাজ চলছে। পাইলট প্ল্যান্টটি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হলে বাণিজ্যিকভাবে এই ব্যাগের উৎপাদন করার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ