Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংসদের সমাপণী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতি কীভাবে বললেন, দেশে আইনের শাসন নেই

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৭, ১২:১৪ এএম

বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এদেশে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাধীনতা রয়েছে, বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বশীল হতে হবে। একজনের যেটা অধিকার, আরেকজনের জন্য সেটা দায়িত্ব। কারো অধিকার ক্ষুণœ করার নাম স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা যদি কেউ ভোগ করতে চায়, তাহলে তাকে সেই দায়িত্ববোধ নিয়েই করতে হবে। এটাই বাস্তবতা।’
গতকাল দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সা¤প্রতিক এক রিপোর্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ৩৪টি টেলিভিশন, ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। অথচ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এদেশে নাকি মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে বসে টকশোতে দিন-রাত সরকারের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে। টকশো, আলোচনায় যে এতো কথা বলা হচ্ছে, কেউ কি তাদের বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে, অসত্য তথ্য দেয়, কারো যদি চরিত্র হরণ করা হয়, নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরও অধিকার রয়েছে, সে মিথ্যাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করার। কিন্তু এখানে কেউ যদি বলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, তা ঠিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কিছু মানুষ রয়েছে, যারা এক সময় মনে করতো দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে এ সুযোগ কম থাকে। তাদের স্বাদ আছে ক্ষমতায় আসার, কিন্তু জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার সাধ্য নেই। অনেকে চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু জনগণের সাড়া পাননি। জনগণ যদি সাড়া না দেয়, সে দোষ কার? এরাই নানান কথা বলে বেড়াবে, এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য থেকে যে কোন সাধারণ মানুষ তার ব্যাপারে অসত্য তথ্য ছাপা হলে তিনি সম্মানহানির মামলা করতে পারেন। তবে কেউ যদি মনে করে যে সে অপরাধী না, তাহলে সে প্রমাণ করবে যে সে অপরাধী না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বদনাম করাই তাদের চরিত্র। তারা মনে করে বদনাম করতে পারলেই তারা এসে তাদের নাগরদোলায় চড়িয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সে আশায় তারা বসে থাকে। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। সেটা আর বাংলাদেশে হবে না।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির সা¤প্রতিক এক বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, তিনি কীভাবে এটা বললেন, এদেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই একজন নেত্রীর মামলায় ১৪০ দিন সময় দিয়েছে আদালত। আমাদের যদি এ ধরনের মানসিকতা থাকতো তাহলে এটা দিতে পারতো না। একই মামলায় যদি ৪০ বা ৫০ বার রিট হয় এবং তা যদি গৃহীত হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই কোথায়। স্বাধীনতা না থাকলে এটা হতো না। এটাই বড় দৃষ্টান্ত। আর যারা এ সুযোগ নিচ্ছেন। তারাও এর সাথে তাল মিলিয়ে বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরলেই বিএনপি নেত্রী তাদের জন্য মায়াকান্না করেন। এর সাথে যোগসূত্র কী। বিএনপির সাথে জঙ্গিদের সম্পর্ক কোথায়? অবশ্য বিএনপির সময় জঙ্গিবাদের সূচনা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখানে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা এগুলো হচ্ছে। তবে এখন হাওরে যে অকাল বন্যা হয়েছে, এ বন্যা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সবকিছুই করা হবে। তিনি বলেন, সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশে সংসদ চলছে। এখন এখানে কোন খিস্তিখেউড় নেই। সংসদে সঠিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা হচ্ছে। বিএনপি সংসদে থাকতে যেগুলো হয়েছে তা এখন আর নেই। সুন্দর একটি পরিবেশ বিরাজমান। বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি শক্ত ভিত্তির উপর অবস্থান করছে। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের আন্দোলন মানেই হচ্ছে মানুষ খুন এবং জনগণকে হত্যা করা। তাদের আগুনে দগ্ধ মানুষগুলো এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা আগুন দিয়ে কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। তাদের হাত থেকে শিশু, গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে কেউ রক্ষা পায়নি। নির্বাচনে তারা যায়নি। এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। এর খেসারত কেন জনগণ দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে জনগণের জন্য কিছুই করেনি। মানুষ হত্যা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে। এখন মামলায় হাজিরা না দিয়ে সময় নিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের মানুষ এখন খেয়ে পরে ভাল আছে। এখন আর হাড্ডি চর্মসার দেহের মানুষ নেই। দরিদ্র্যতা দেখিয়ে এখন আর বিদেশ থেকে সাহায্য আনা হচ্ছে না। বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। তিনি বলেন, সরকার কৃষকের কল্যাণে কাজ করছে। মাত্র ১০ টাকায় প্রায় ১ কোটি কৃষককে কৃষি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ দিতে কৃষি উপকরণ কার্ড দেয়া হয়েছে কৃষককে। অথচ সারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। মাছ, ফল, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশে এখন অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি গৃহহীন মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশ যেতে ইচ্ছুকরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারছে। এখন আর কাউকে ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ যেতে হয় না। তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে আশা করছি। স্কুল-কলেজে এখন অনলাইনে ভর্তি হতে পারছে। ১০টি ভাষা শিক্ষার জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত এদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতেও বাধা দিয়েছে। ১৪০০ সাল পালনের জন্য কবি সুফিয়া কামালকে আহবায়ক করে একটি উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠান করার কথা থকলেও তৎকালীন বিএনপি সরকার তার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আমরা সেদিন ট্রাকের উপরে মঞ্চ করে ১৪০০ সাল উদযাপন করেছি।
#



 

Show all comments
  • S. Anwar ৯ মে, ২০১৭, ৮:৫৬ এএম says : 1
    ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক কিংবা মুখ ফসকে হোক, যেভাবেই বলেন কেন প্রধান বিচারপতি অকাট্য সত্য কথাটি বলে ফেলেছেন। নৈমিত্তিক বিচার বহির্ভূত হত্যা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে গুম, ঘর থেকে ধরে নিয়ে খুন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, প্রকল্পের নামে লুটপাট, সরকারী কোষ আত্মসাত, দলীয় দাপটে চাঁদাবাজি, আত্মীয়করন, দলীয়করন, নিয়ন্ত্রনহীন দ্রব্যমূল্য সহ সর্বৈভ হেন কোন্ অপরাধ সংঘটিত হয়নি আওয়ামী শাসনামলে আওয়ামী সমর্থক কর্তৃক? প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আওয়ামী সমর্থকদের উৎপাতে সাধারন গরীবেরাও আজ অতিষ্ঠের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। প্রধান বিচারপতির সাথে আমরাও একবাক্যে বলি, আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য স্ব-প্রণীত আইন ছাড়া এদেশে সাংবিধানিক আইন বলতে কিছুই নেই। এই যদি হয় আওয়ামী সরকারের আইনের শাসন, তবে বিএনপি-র শাসন কালকে আমরা (বাংলাদেশের জন্য) হযরত উমর এর স্বর্ণ যুগের সাথে তুলনা করতে পারি। গরীবের পেটের উপর পা রেখে যে শাসন চলে তাকে স্বৈরশাসন বিনা আইনের শাসন বলে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ismail hossain (Merchandising Manager) ৯ মে, ২০১৭, ১:২২ পিএম says : 0
    কথাটি 100% সত্য, এদেশে আইনের শাসন নেই। নেই-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------- নেই------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------- নেই----------------
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ১০ মে, ২০১৭, ১০:০৯ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধান বিচারপতি সংবিধান ও বিবেক দিয়ে কাজ করে এবং কথা বলে। হয়ত আইনের শাসনের ক্ষত্রে সংবিধানের ব্যাতয় ঘটছে। তাই মাননীয় প্রধান বিচারপতি ক্ষোভের সহিত এমন উক্তি করছেন। আশা করি প্রধান বিচার পতির উক্তিতে সবার বিবেক জাগ্রত হবে, দেশে পুরাপুরি আইনের শাসন সুপ্রতিষ্টিত হবে। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ