পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : এ যেন এক অন্যরকম নেতা। ৪৫ বছরে দেশে অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এমন ব্যাতিক্রম নেতৃত্ব দেশবাসী দেখেনি। চলন-বললে আবহমান বাংলার নারীর প্রতিচ্ছবি। নেতৃত্বে দৃঢ়তা, রাজনৈতিক কৌশলে দূরদর্শিতা সিদ্ধান্তে দৃঢ়চেতা এক ব্যক্তিত্ব। পায়ের জুতা খুলে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে অনায়াসে সাগরের সৈকতে নেমে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখেন; চলতে ফিরতে পথেঘাটে ছোট্ট শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন, অবনতমস্তকে বয়োবৃদ্ধদের জড়িয়ে ধরেন; দলের নেতাদের কর্মকান্ডের দায়ভার কাঁধে তুলে নেন; আবার দৃঢ়তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের নিজের কঠোর বার্তা দেন। এই হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনায় পরিচয়। নেতাকর্মীদের শাসন-সোহাগ করা মা-মাটি-মানুষের নেত্রী। তাঁর দৃঢ়তাপূর্ণ ক্যারিশমাটিক কর্মযজ্ঞে নিন্দুকেরাও মোহিত হন; প্রতিপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। যাপিত জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। এই না হলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা! তাঁর যাপিত জীবনের পরতে পরতে দেখার-বোঝার-শেখার-অনুসরণ-অনুকরণীয় অনেক কিছুই আছে। যা অনেক প্রবীন নেতার মধ্যে দেখা যায় না।
ঝাঁঝালো মিছিল নয়; বাতাসে এখন নির্বাচনী আবহ। শেখ হাসিনা যেখানেই যাচ্ছেন নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের জনগণমুখী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তৃণমূলে বসবাসরত মানুষের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক গড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর মধ্যে রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, দিকনির্দেশনা এবং এমপিদের সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পদ্ধতি ও কৌশল সবাইকে চমৎকৃত করেছে। আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য নিয়েই কার্যত সর্বত্র চলছে আলোচনা। শুধু মিডিয়ায় নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা হচ্ছে। দলের এমপিদের আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজের বার্তা দিয়ে জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব নিতে পারবেন না। সংসদ সদস্যদের নিজ যোগ্যতাবলে জনগণের ভোটে পাস করে সংসদে আসতে হবে। নির্বাচনে কারা দলের (নৌকা) মনোনয়ন পাবেন তা জানার জন্য ৬ মাস পর পর সারাদেশে জরিপ করা হচ্ছে। মাঠের চিত্র দেখা হচ্ছে। জরিপে যাদের ইমেজ ও অবস্থান ভালো, তারাই নৌকার প্রার্থী হিসেবে আগামীতে মনোনয়ন পাবেন। মুখ দেখে কাউকে প্রার্থী করা হবে না। শুধু এ বার্তাই নয়; একই সঙ্গে তিনি কার্যত এমপিদের পরীক্ষার মুখোমুখি করেন। বলা যায় এমপিদের কর্মদক্ষতা, জবাবদিহিতা ও জনসম্পৃক্ততার পরীক্ষা নেন। তিনি বিভিন্ন খাতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের তথ্য জানতে এমপিদের নাম ধরে ধরে প্রশ্ন করেন। বেশিরভাগ এমপিই এসব প্রশ্নের নির্ভুল জবাব দিতে পারেননি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হতাশ হয়ে বলেন, আমি এত কাজ করেছি। অথচ উন্নয়নের সঠিক তথ্য আমার এমপিদের কাছে নেই! আপনাদের কাছে যদি সঠিক তথ্য না থাকে, তাহলে জনগণকে জানাবেন কী করে? তিনি উন্নয়ন সম্পর্কে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে কিছু পরিসংখ্যান চান। কয়েকজন এমপি কিছু প্রশ্নের আংশিক জবাব দিলেও দু’একজন ছাড়া কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এমনকি একজন মন্ত্রীকে তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রশ্ন করেও সঠিক জবাব পাননি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ল্যাপটপ চালু করে কোন কোন বিষয়ে কী কী উন্নয়ন করেছেন, তার তথ্য তুলে ধরেন। অনেক এমপি এখনো ল্যাপটপ ধরতে জানেন না; অথচ প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী নিজেই ল্যাবটপ ব্যবহার করেন। অনেক এমপি নিজ নির্বাচনী এলাকার খবর রাখেন না। অথচ সরকার পরিচালনার হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও ৩শ সংসদীয় আসনের খোঁজ-খবর তাঁর নখদর্পনে।
এর আগে দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলেই তিনি সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের আভাস দিয়েছিলেন। গত ফেব্রুয়ারী মাসে সংসদীয় দলের সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নিজ নিজ এলাকায় জনগণের মন জয় করার জন্য দলের এমপিদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, জনসম্পৃক্তা বৃদ্ধি, নিজেদের মধ্যেকার দ্ব›দ্ব-বিভেদ নিরসন, দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, তৃণমুল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন এবং সরকারের উন্নয়ন-সফলতার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসসহ সব অপকর্মগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। ওই বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কেউ নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কে কী করছেন, কার কী অবস্থা সব রিপোর্টই আমার কাছে আছে। জনগণ থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হলে পার পাবেন না। তাই জনগণের কাছে যান, ভাল কাজের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। প্রধানমন্ত্রীর এই যে বার্তা সেটা তাঁর দলের নেতাকর্মী তো বটেই; দেশবাসীর কাছেও মনে হয়েছে ‘ইতিবাচক’। যে কারণেই হোক ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ওই নির্বাচন ভাল হয়নি, জনগণ ভোাট দিতে পারেনি, ১৫৩ আসনে ভোট ছাড়াই এমপি হয়েছে, অন্যান্য আসনে নৌকার প্রার্থীরা হেসে খেলে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। সরকার গঠনের পর দিল্লীর সর্বাত্মক সমর্থন পেলেও প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো যে সেটা ভালভাবে নেয়নি; এখনো ভাল চোখে দেখছে না সেটা তিনি বুঝতে পারেন। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন কার্যত প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ছিল না সেটা তিনি অবলীলায় স্বীকার করে নেন। এই স্বীকার করে নেয়ার মধ্যেও উদারতা, আত্মউপলব্ধি ও মহানুভবতা আছে। এটাই হলো গণমানুষের নেতার চরিত্র। এমন নেতাই দেশের মানুষ চায়। প্রধানমন্ত্রী জানেন এবং মানেন যে আগামীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৫ জানুয়ারীর মতো প্রার্থী বিহীন ভোটারবিহীন ‘ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া’ সম্ভব হবে না। সে ধরণের চেস্টা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ এবং ব্যাক্তিগত তিনি করবেন না ইমেজ রক্ষার জন্য। যে দেশের জনগণ তাকে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ ‘জননেত্রী’ উপাধি দেয় সে দেশের জনগণকে তিনি ভোটের অধিকার থেকে বঞ্ছিত করতে পারেন না। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর এবং বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলের ভাবমূর্তি তো রয়েছেই। তিনি জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই দলীয় নেতাদের তৃর্ণমূলে গিয়ে গণমানুষের মন জয় করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষিত নেতাদের জন্য কঠোর বার্তা এবং স্তবকদেরও তিনি সতর্ক বার্তা দেন।
কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের ‘কিং অব চিটাগং কনভেনশন হলে’ দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা ভালো নয়। টাকা-পয়সা বেশি দিন থাকবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। কী, সেটা কি ভাবেন না? যা আয় করেছেন জনগণের কাজে ব্যবহার করুন। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই স্পষ্টভাষী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে এ ধরণের কথাবার্তা প্রকাশ্যে না বলার পরামর্শ দেন। সিনিয়রদের এ ধরণের প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী ভালভাবে নেননি। ওবায়দুল কাদেরের বার্তায় যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন সেটার সুত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় দলের সভায় এমপিদের এই বার্তা দিয়েছেন। ‘কম গণতন্ত্র অধিক উন্নয়ন’ শ্লোগান নিয়ে অগ্রসর হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের এই দীর্ঘ শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে রক্ত ঝড়ানো, প্রাণহানি অনেক ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমান হলেও হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। মাঠে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকায় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়েছেন। তারই ফলোশ্রুতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রায় দেড়শ নেতাকর্মী নিজেদের হাতেই প্রাণ হারিয়েছে। তাছাড়া টানা কয়েক বছর ক্ষমতায় থাকায় দলের নেতাকর্মীদের নেতিবাচক ও ভীতিকর কর্মকান্ডে জনগণ থেকে গণমূখী দলটির দূরত্ব বেড়েছে। এ জন্য আতেœাপলব্ধির মাধ্যমে শুধরে দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনের আগেই জনগণের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করবেন সে প্রত্যাশাা থেকেই তিনি কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের কার্যত প্রধানমন্ত্রীর সেই বার্তা ফেরি করে বেড়াচ্ছেন। তাইতো গতকালও তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কঠোর সমালোচনা করে বক্তৃতা দেন। কয়েক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং সে সব বার্তা দিচ্ছেন তা মেনে দলের নেতারা অগ্রসর হলে দলের ভাবমূর্তি যে কিছুটা বাড়বে এবং জনগণ থেকে সৃষ্ট দূরত্ব কমে আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১৪ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জ্যোতিষশাস্ত্রের যে ‘শনির দশা’ বা ‘শনির দৃষ্টি’ বর্তমান সরকারের ওপর পড়ে তা শেখ হাসিনার দৃঢ় ক্যারিশমাটিক নের্তৃত্বেই কাটিয়ে ওঠা গেছে। উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অগ্রগতি, ভারতের সঙ্গে বিনিয়োগের ২২ চুক্তি, চীনের সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি এবং সব বিতর্ক টেক্কা দিয়ে তিনি শক্ত হাতেই নৌকার হাল ধরে এগিয়ে চলছেন। দলের জাতীয় কাউন্সিলে দলকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত। ১৯৮১ সালে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩৬ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের কান্ডারী। যোগ্য নের্তৃত্বে শত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে দলকে তিন বার রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় এনেছেন। বয়সের কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চাওয়ায় কাউন্সিলে দলীয় নেতাকর্মীরা যেভাবে তাকে আকড়ে ধরার আকুতি করেছে তা সত্যিই বিরল। একজন নেত্রীর প্রতি দলের নেতাকর্মীদের অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ থাকলে যা হয় সে চিত্র ভেসে উঠেছে দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে। এ অবস্থায় তিনিও দলের নেতাকর্মীদের জন্য কিছু করতে চান। আর সে জন্যই আসন্ন নির্বাচনের দেড় বছর আগে তার এই কঠোর বার্তা। এ বার্তা নেতাকর্মীরা কিভাবে নেন সেটাই এখন দেখার জন্য দেশবাসীর অপেক্ষা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।