Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপ্রতিরোধ্য বায়ুদূষণ

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সরদার সিরাজ : বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ঢাকার পরেই রয়েছে পাকিস্তানের করাচি ও চীনের বেইজিং। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর বায়ু দূূষণের কারণে শিশুমৃত্যু হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। অনেক দিন ধরেই ঢাকা বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি। আবারো সেই তকমাই জুটেছে ঢাকার কপালে। বিশ্বের ২৩১টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান হয়েছে ২১৪তম। ঢাকার নিচে রয়েছে বাগদাদ, সিরিয়া, সানার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত কয়েকটি শহর। আর আছে আফ্রিকার অতিদরিদ্র কয়েকটি দেশের রাজধানী শহর। বসবাস যোগ্যতার মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মার্সার এর গবেষণা প্রতিবেদনে এটা বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পবার চেয়ারম্যানের অভিমত হচ্ছে : ঢাকায় বর্তমানে ধুলা দূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে ধুলাজনিত রোগ ব্যাধির প্রকোপ। রাস্তার পাশে দোকানের খাবার ধুলায় বিষাক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপরন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু মিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও য²াসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে’। ময়লা-আবর্জনা, পয়:প্রণালী ঠিকমতো নিষ্কাশন না হওয়া, প্রয়োজনীয় গাছপালা না থাকা, নির্মাণসামগ্রীর ব্যাপক ধূলিকোনা, যানবাহন, কলকারখানা এবং ইটভাটার কালো ধোয়া ইত্যাদি কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা ব্যাপকতর হয়েছে। অথচ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, দূষিত বায়ু থেকে মানবজীবনের যে ঝুঁকি সেটা এইডস বা ইবোলার ঝুঁকির থেকেও মারাত্মক।
যাহোক, ঢাকায় মারাত্মক বায়ু দূষণের জন্য বর্ণিত কারণগুলো সঠিক। এর সাথে আরো কিছু কারণও রয়েছে। আর গাছপালা শুধু ঢাকা শহরেই কম নয়, সারাদেশেই কম। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশেই মোট আয়তনের ২৫% বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এদেশে আছে সরকারি মতে ৮%। আর বেসরকারি মতে ৬% বলে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজোয়ানা হাসান বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, দেশে কোনো সময়োপযোগী বন আইন নেই। ১৯২৭ সালের  আইন দিয়েই চলছে। সর্বোপরি যে বনাঞ্চল আছে, তাও উজাড় হয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়েই। দ্বিতীয়ত, ২০০০ সালে প্রণীত জলাশয় রক্ষা আইনের কোনো কার্যকারীতে এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে একের পর এক জলাশয় দখল/ভরাট হচ্ছে। অর্থাৎ বায়ু দূষণ একটি মৃত্যুফাঁদ। এ ফাঁদ থেকে জীবনকে রক্ষা করা প্রয়োজন। নতুবা ব্যাধি নির্মূলে যতই ব্যয় বৃদ্ধি করা হোক না কেন, ব্যাধি নির্মূল হবে না। বরং ব্যাপকতর হতেই থাকবে। তাই যেকোনো মূল্যেই হোক, বায়ু দূষণ রোধ করা আবশ্যক। এ জন্য প্রয়োজন যথাশিগগির যানবাহন, কল-কারখানা ও ইটভাটার কালো ধোঁয়া নির্গমণ বন্ধ, ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার ও পয়:প্রণালী ভালোভাবে নিষ্কাশন। এছাড়া, প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল সৃষ্টি করা। কিন্তু দেশ ছোট। তাই ভূমি কম। সর্বোপরি দেশটি কৃষিনির্ভর। তাই কৃষি জমিতে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবে, যা কাম্য নয়। তাই যেটুকু বনাঞ্চল রয়েছে, তার সবটুকুই সদ্ব্যবহার করা এবং গাছ কাটাবন্ধ করা প্রয়োজন। উপরন্তু চীনাস্টাইল প্রবর্তন করা দরকার। উল্লেখ্য, চীন বায়ু দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য গাছ ভবন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে তা বাস্তবায়ন করা শুরু করেছে। এব্যাপারে ডেইলি মেইল ও নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, চীনের পূর্ব উপক‚লবর্তী শহর নানজিংয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে দুটি ভবন, যেখানে ভবনের প্রতি ধাপে রোপণ করা হবে সবুজ গাছ। ৩৫০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার একটি ভবনে থাকবে ১১ হাজার সবুজ গাছ।
 লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন