Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনিয়মের কথা স্বীকার করছে পাউবো -দুদক

হাওরের বাঁধ নির্মাণ

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টাও : সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়মের কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক। পাউবোর মহাপরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলছেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণবেক্ষণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থার প্রচন্ড গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, তারা যথাযথভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ডিজি থেকে শুরু করে সবাই তা স্বীকার করে বলেছে, পানিতে বাঁধ ডুবে যাওয়ার কারণে বাঁধগুলো সম্পর্কে মেজারমেন্ট করতে পারেনি। ওই প্রকল্পগুলোতে অনিয়মের তদন্তকারী জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সুনামগঞ্জের ৩৭টি হাওরের ডুবে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয় ৬৫ কোটি টাকার। কাজ পেয়ে দুইজন ঠিকাদার বাঁধ নির্মাণ কাজ ঠিকমতো করেনি। তারপর এবারও তারা এই কাজ পেয়েছে বলেন মুনীর চৌধুরী।
গত ৩১ মার্চের মধ্যে এবারের প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল। মার্চের শেষেই বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তলিয়ে যায় হাওরগুলো। সুনামগঞ্জসহ আশপাশের ছয়টি জেলার হাওরাঞ্চলের মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮ টি পরিবার।
দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দায়ী বলে অভিযোগ ওঠার পর সংস্থাটির তিন প্রকৌশলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২০১৬ সালের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাউবো মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল হাই আল বাকী, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ এবং সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আব্দুল হাই ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীন বৃহস্পতিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. খলিলুর রহমানও ছিলেন।
মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে দুদকের একটি দল বেলা সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ৩ টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুনীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও সিনিয়র অফিসারদের ডেকেছিলাম সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যে অনিয়ম হয়েছে তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা যেসব বাস্তবতা উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি তা হল- বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রচন্ড গাফিলতি ছিল। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাউবো চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়ন, মনিটর ও কাজ আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকল্পে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা তারা স্বীকার করেছে।
পাউবোর একজন প্রকৌশলীকে ওসডি করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও তারা তা করেনি বলে জানান মুনীর চৌধুরী। জিজ্ঞাসাবাদের পর পাউবোর ডিজির বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে দুদকের উপপরিচালক (গণসংযোগ) প্রণবকুমার ভট্টাচার্য জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে গতবছর এপ্রিলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। ১০ মাস পর গত ফ্রেরুয়ারিতে তারা দুদকে প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই এই কর্মকর্তাদের তলব করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ