Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সরকার সৈন্যদলে যোগ দেয়ার লোক পাচ্ছে না : সিরীয় তরুণরা বেশি বিপদের শিকার

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট : ২৩ এপ্রিল লিওনেল মেসি শেষ মুহূর্তে যখন বার্সিলোনার পক্ষ হয়ে রিয়েল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে গোল করলেন তখন সিরিয়ার উপকূলীয় শহর টারটুসে টিভিতে খেলা দেখতে থাকা ফুটবল প্রেমীরা আনন্দ করতে রাস্তায় নেমে আসে। এটা যে কত বড় ভুল হয়েছিল তা বোঝা গেল কিছুটা পরেই। তাদের মধ্যে যাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার বয়স ছিল, সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সবাইকে আটক করে। কতজনকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছিল জানা যায়নি। তবে একবার সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। নিহত বা আহত হওয়ার ঝুঁকিই বেশী। সিরিয়া সরকার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার লোক পাচ্ছে না, সৈন্যদলে যোগ দেয়া সেখানে ভীষণ আতংকের বিষয়।
সেনাবাহিনীর চাকুরি ও তা পরিহারের পন্থা সিরিয়াতে প্রধান আলোচনার বিষয়। সিরিয়ার ৬ বছরের গৃহযুদ্ধে সরকার, কুর্দিরা ও সরকার বিরোধীরা সবাই সৈন্য খুঁজছে। সৈন্যদের প্রাণহানির সংখ্যাও খুব বেশী।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর ১ লাখ ১২ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়। সিরিয়ায় পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান হলে অথবা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হলে সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়ানো যায়। তারপরও তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়।
সৈন্যদের খাবার মান খুবই নি¤œ। তারা মাত্র ৫০ ডলার সম মানের সিরীয় মুদ্রা পায়। তাই তারা অধিকাংশই ঘুষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। চেক পয়েন্টগুলোতে তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। ইরাকি ও সিরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেন, আইএস ও আল কায়েদা বোমা হামলাকারীরা যে সুরক্ষিত শহরগুলোর মধ্যে বিস্ফোরক ভরা যান নিয়ে প্রবেশ করে তাদের নিজেদের উড়িয়ে দিয়ে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয় তার অন্যতম কারণ এটা।
মসুলের দক্ষিণে গৃহহীনদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশাল হাম¥াম আল-আলিল শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের একজন মহিলা সাহায্য কর্মী বলেন, এ যুদ্ধে মহিলা ও শিশুরা প্রধান শিকার। কিন্তু আমি তরুণদের জন্য বেশী উদ্বিগ্ন, কারণ তারা বেশী বিপদের শিকার। তিনি বলেন, তারা কোনো সশস্ত্র গ্রæপের সদস্য হোক আর না হোক, তরুণদের সব সময়ই সন্দেহ করা হয়। তিনি তাদের কয়েক ডজনকে দেখেছেন যাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাইয়ের জন্য নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি আমার জীবনে এত ভয়গ্রস্ত মানুষকে দেখিনি। তিনি বলেন, তাদের ভয়তাড়িত হওয়ার সব কারণই ছিল। কারণ, কয়েকদিন আগে তিনি মসুলে কয়েক ঘন্টা আগে ধরে নিয়ে যাওয়া দু’যুবকের অজ্ঞান ও রক্তাক্ত দেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেন।
সিরিয়া ও ইরাকের সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে এবং তারা বিরামহীন ভাবে আইএসের প্রতিষ্ঠিত ¯িøপার সেলের কথা আলোচনা করে। এ ¯িøপার সেল হঠৎ আত্মপ্রকাশ করে এবং তাদের শত্রæদের হত্যা করে। এ ভয় বিরাজ করা সত্তে¡ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল যার কারণ দুর্নীতি। চেকপয়েন্টগুলো অভ্যন্তরীণ শুল্ক চৌকি হিসেবে কাজ করে। ছোটগুলো গাড়ি চালকদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে সিগারেট ও অল্পস্বল্প টাকা নেয়। আর বড় চেকপয়েন্টগুলো বড় অংকের টাকা নেয় যা লাখ লাখ পাউন্ড বা ডলারের সমপরিমাণ। এ বিরাট অংকের টাকা সিনিয়র কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও বিভিন্ন পক্ষকে দেয়া হয়।
কিরকুক থেকে বাগদাদের দূরত্ব ১৬৫ মাইল। মার্চ মাসে এ পথে চলাচলকারী লরি চালকরা ধর্মঘট করে যে বাগদাদের বাইরে প্রধান চেক পয়েন্টে প্রতি ট্রাক থেকে অবৈধ ফি আদায়ের পরিমাণ ১৫০০ ডলারে পৌঁছেছে আগের চেয়ে যা তিনগুণ। ফ্রিল্যান্স ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার হিসেবে কাজ করা দালাল আহমেদ বলেন, এ টাকা লরি চালকরা দেয় না, এ টাকা আসে পণ্যের মালিকদের কাছ থেকে যারা এ টাকা আদায় করে বাগদাদের ভোক্তাদের কাছ থেকে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, চালকরা ঘুষের প্রতিবাদে ধর্মঘট করেনি, করেছে চেকপয়েন্টগুলোতে বিলম্ব করানোর প্রতিবাদে। কারণ বাগদাদ-কিরকুকে যাওয়া-আসায় যেখানে ৩ দিন লাগে সেখানে এখন লাগে ১৫ দিন।
যুদ্ধের দীর্ঘ বছরগুলোতে ইরাকে অপরাধপ্রবণতা হচ্ছে একটি কারণ যে জন্য যুদ্ধ না থাকলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে পারছে না। দুর্নীতির শীর্ষস্থানে রয়েছে যুদ্ধবাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। যতটা দাবি করা হয় সামরিক সাফল্য ততটা নয় বলে সকলপক্ষেই বিশ^াসী সৈন্যের সংখ্যা সীমিত। সিরীয় সেনারা একবার শুধু একটি অভিযানই চালাতে পারে , এটা তাদের অন্য রণাঙ্গনে দুর্বলতা প্রকাশ করে। দীর্ঘ অবরোধের পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব আলেপ্পো দখল করলেও দ্বিতীয়বারের মত আইএসের কাছে পালমিরা হারায়। পূর্ব সিরিয়ার বৃহত্তম শহর দেইর এজ্জর দখলের জন্য তাদের লড়াই করতে হয়েছে। পূর্ব ঘুটার শক্তঘাঁটি থেকে টানেল ব্যবহার করে বিদ্রোহীদের দামেস্কে আকস্মিক হামলা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
টারটুসে ফুটবল অনুরাগীদের আটকের ঘটনা সিরিয়ার সেনাঘাটতির কথা প্রমাণ করে। সেখানে সৈন্যদলে যোগ দেয় আতংকের বিষয়। আইএস ও আল কায়েদার নিকট থেকে এলাকা পুনর্দখল এবং ধরে রাখার জন্য তাদের সৈন্য সংখ্যা অতি অল্প। ইরাকেরও অনুরূপ সমস্যা রয়েছে। যদিও তাত্তি¡কভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অনেক, আসলে যোদ্ধার সংখ্যা অনেক কম। বহু সৈন্যকেই ইরাক ও সিরিয়ার চেক পয়েন্টগুলোতে মোতায়েন সৈন্যদের অংশ হিসেবে রাস্তার পাশে দেখা যায় যারা বেসামরিক লোকদের শোষণ করে, কিন্তু কারো বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ