পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দি নিউ আরব : ইরাকি সেনাবাহিনী মসুল পুনর্দখলে আরো কিছু সাফল্য লাভের দাবি করছে। সাত মাস ধরে চলা অভিযান এ মাসের মধ্যেই তারা শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে। ইরাকি সেনাবাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল ওসমান আল-গণি বলেছেন, মসুল সম্পূর্ণ হাতের মধ্যে পেতে আর তিন সপ্তাহ লাগবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই স্পষ্ট যে মসুল বা রাক্কার পতনে আইএস নিশ্চিহ্ন হবে না, বরং আরেকটি নতুন লড়াই শুরু হবে। অন্যদিকে ইরাকের সাথে অন্য দেশের বিরোধ বাড়ছে।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রীসহ ইরাকি কর্মকর্তারা যখন মসুল পুনর্দখলের ব্যাপারে প্রচন্ড আশাবাদী ভবিষ্যদ্বাণী করে চলেছেন তখন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছেন যে মসুল পুনর্দখলের লড়াই এই গ্রীষ্মেরই কোনো এক সময়ে শেষ হবে। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) মসুল যুদ্ধে হয়ত পরাজিত হতে পারে , কিন্তু উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়া অনেক দূরের ব্যাপার।
আইএস তাদের শক্তির প্রমাণ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মসুলে তাদের আইইডি হামলায় এক মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে। ২৫ এপ্রিল তারা আনবার গভর্নরেটে তারা হামলা করে, হাইওয়ের কিছু অংশ দখল করে নেয়, সাফল্যের সাথে রুতবার কাছে সৈন্যদের উপর হামলা চালিয়ে ১০ সৈন্যকে হত্যা করে। কয়েকদিন পর আইএস বাগদাদের প্রাণকেšেদ্র গাড়ি বোমা হামলা চালালে ৪ জন নিহত হয়।
ইরাকি বাহিনীর মসুল অভিযান চলাকালে আইএস প্রমাণ করেছে যে তারা ইরাকের যে কোনো স্পর্শকাতর স্থানে তাদের হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা যে মসুলের পতন ঘটলে এবং হাবিজা, তাল আফার, ও পশ্চিমাঞ্চলীয় আল কাইম শক্তঘাঁটি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এ ধরনের হামলা সম্ভাবনা বাড়বে।
ইরাকি সেনাবাহিনী মসুল পুনর্দখলে তাদের অগ্রগতির ভালো খবর দিয়ে মিডিয়া প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার তারা পশ্চিম মসুলের অন্যতম বৃহৎ তেনেক এলাকা দখল করে। পরদিন তারা ঘোষণা করে যে রাষ্ট্র অনুমোদিত বিতর্কিত পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের (পিএমএফ) অধীনস্থ শিয়া মিলিশিয়ারা ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত প্রাচীন শহর হাত্রা পুনর্দখল করেছে।
গত সপ্তাহে ইরাকে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা থেকে দেখা যায় যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানই নয়, ইরাক এখন তুরস্ক ও কাতারেরও মনোযোগের কেন্দ্র্।
বরাবরের মতই ইরাক বিষয়ে ইরানের কিছু বলার আছে। তারা ২০০৩ সালে ইরাকে অবৈধ আগ্রাসন ও দখল বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ইরাকি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে উৎসাহিত করছে। ইরান ট্রাম্প প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য ইরাকিদের দুর্দশাকে ব্যবহার করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বাগদাদের উপর ইরাকি প্রভাব খর্ব করবে বলে ঘোষণা করেছে। তবে ইরান ২০১৪ সাল থেকে ইরাকে আইএস বিরোধী বিমান হামলায় শত শত ইরাকি নিহত হওয়ার ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।
২০১৫ সালে ইরানের অনুগত শিয়া মিলিশিয়ারা ২৪ জন কাতারিসহ ২৬ জনকে জিম্মি করে। দীর্ঘদিন আটকা থাকার পর লাখ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে কাতার তাদের মুক্ত করে। এ ঘটনায় ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি কাতারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বাগদাদের অনুমোদন ছাড়াই কাতার জিম্মিকারীদের এ অর্থ প্রদান করে। কিন্তু কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল সানি তার এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বুধবার সন্ধ্যায় আল জাজিরা টিভিকে বলেন, সবকিছুই ইরাক সরকারের পূর্ণ অবগতি ও অনুমোদনে হয়েছে। উল্লেখ্য, ইরান সমর্থিত বদর সংগঠন নিয়ন্ত্রিত ইরাকের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় জিম্মি ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে না পারলেও কাতারি রাজপরিবারের সদস্যসহ জিম্মিরা ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রæপসহ অন্যদের সাথে কাতারে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর ছাড়া পান।
এ ঘটনায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রকাশ্যে যতটা দেখা যায়, তার চেয়ে ইরান অনেক বেশী গভীরভাবে জড়িত। মনে হয় না যে তেহরান জিম্মি অপহরণ বা তাদের কোথায় রাখা হয়েছে তা জানত না।
এদিকে তুরস্ক ইরাকে তার ব্যস্ত সপ্তাহ পার করেছে। তারা ইরাকে আশ্রয় নেয়া পিকেকে জঙ্গি বিরোধী অভিযান সম্প্রসারিত করেছে। ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় কান্দিল পর্বতে পিকেকে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে তুরস্ক অনেকদিন থেকেই হামলা করে আসছে। গত মঙ্গলবার তুর্কি বিমান আগের চেয়ে ইরাকের আরো গভীরে হামলা চালায় এবং সিনজারে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। এ হামলায় শুধু পিকেকে জঙ্গিরাই নিহত হয়নি, দুর্ঘটনাক্রমে পার্শ্বস্থ পেশমের্গা ইউনিটও হামলার শিকার হয় যারা তুরস্ক সমর্থিত ইরাকি কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) প্রতি অনুগত।
এ হামলার ঘটনায় কয়েক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন পিকেকে-কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করলেও এ হামলার নিন্দা করেছে। কে আর জি এ এলাকাকে অস্থিতিশীল ও উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য পিকেকে-কে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
সবচেয়ে কৌতূহলজনক হচ্ছে বাগদাদের প্রতিক্রিয়া। যদিও একজন ইরাকি মন্ত্রী আরব নিউজকে বলেন, বাগদাদ সম্ভবত তুর্কি দূতকে তলব করবে , তবে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেবে না। সিনজারের মেয়র মাহমা খলিল বলেন, ইরাকিরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পিকেকে-কে সমর্থন দিচ্ছে।
বাগদাদ যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান সহ কয়েক ডজন দেশকে তার দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে দিয়েছে তখন মসুলের কাছে বাশিকা শিবিরে সৈন্য মোতায়েন নিয়ে তুরস্কের সাথে তার দীর্ঘ বিরোধ চলছে। তুরস্ক বলেছে, কেআরজির আমন্ত্রণে তারা সেখানে গিয়েছে। বাগদাদ অবিলম্বে তুর্কি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানালেও দাবি জানালেও আংকারা তা অগ্রাহ্য করেছে।
ইরাক তুরস্কের উপর সরাসরি তা ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে অসমর্থ। এখন ইরাক পিকেকে-কে সামরিক ও লজিস্টিক সমর্থন প্রদান করছে বলে সিনজারের মেয়রের অভিযোগ সঠিক হয় তা ইতোমধ্যে দু’ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট অচলাবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটাতে পারে।
দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় আইএসের কার্যত রাজধানী রাক্কার পতনকে আইএসের কাফনে শেষ পেরেক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, কিন্তু তাদের নির্মূল করা এত নিশ্চিত নয়। এ দুই নগরের পতনের অর্থ আইএসের খিলাফতের সংকোচন ঠিকই, তারা বিরাট এক জনসংখ্যাও হারাবে। তবে তারা একটি দক্ষ গেরিলা শক্তি। আকাশে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা একটি শক্তির অস্ত্রশক্তির সামনে তারা দাঁড়াতে সক্ষম নয়। তাই ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আইএস মসুল ও রাক্কা থেকে তাদের যোদ্ধা ও কর্মকর্তাদের গ্রাম এলাকায় সরিয়ে নিতে শুরু করেছে যাতে তারা সহজে লুকাতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।