Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারিবারিক জীবনের আদর্শিক রূপরেখা

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাফেয মুহাম্মদ জাফর সাদেক : মানব জীবন সাধারণত চার ভাগে বিভক্ত। এক- ব্যক্তি জীবন, দুই- পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবন, তিন- সামাজিক জীবন এবং চার রাষ্ট্রীয় জীবন। এ চার প্রকারের মানব জীবনের মধ্যে পারিবারিক জীবনই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিবারকে বাদ দিয়ে যেমন সমাজের কল্পনা করা যায় না তেমন সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রও অচিন্তনীয়, তাই সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক ভিত্তি এ পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। জাগতিক জীবনের আরাম-আয়েশ, শান্তি ও স্থিরতা, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনের উপর নির্ভর করে। পারিবারিক অশান্তি জীবনের অন্যান্য সব শান্তিকে ম্লান করে দেয়। পরিবার পরিজনের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও হৃদ্যতা এবং সহমর্মিতা বিদ্যমান থাকলে জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে দুঃখ-দুর্দশা ও চিন্তার শিকার হলেও তাতে সহনশীলতা ও ধৈর্য্যধারণ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। মানুষ যেহেতু অতি সূ² অনুভ‚তিসম্পন্ন জীব, সেজন্য আনন্দ অথবা দুঃখ তাকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে তার প্রয়োজন হয়  সুখ- দুঃখের অকৃত্রিম সাথীর যে তার আনন্দে আনন্দিত হবে, দুঃখে সমান দুঃখী হবে। নারী এবং পুরুষ উভয়েই সমানভাবে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকে। প্রয়োজন পূরণের জন্যেই নারী ও পুরুষের মাঝে স্থায়ী বন্ধন স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরুষ নারীকে নিয়ে ঘর বাঁধে, আর নারী হয় পুরুষের গড়া সে ঘরের কর্ত্রী। উভয়ই উভয়ের কাছ থেকে লাভ করে পারস্পরিক সহযোগিতা, কর্মের প্রেরণা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজে অগ্রসর হয় উদ্যমতার সাথে। নারী ও পুরুষের এ সহযোগ ব্যতীত মানবতার এ অগ্রগতি আদৌ সম্ভব নয়। ইসলামের আলোকে পারিবারিক জীবন, মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি। পারিবারিক জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর পরম শান্তি, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং পরিতৃপ্তি লাভের মাধ্যম। তাই এ মুখ্য উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন - তিনি ঐ সত্তা  যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী পয়দা করেছেন, যেন তোমরা তাদের কাছে শান্তি ও আরাম-আয়েশ সহকারে অবস্থান কর, আর তোমাদের মাঝে পারস্পরিক মায়া-মহব্বতের বন্ধন সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় ভালবাসাপূর্ণ পারিবারিক জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য কুদরতের নিদর্শনাদী (সূরা- রূম, আয়াত নং - ২১)
বিবাহ পদ্ধতিই এমন বিধান যা আদম সন্তানের মাঝে ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভালবাসার বন্ধন স্থাপন করে। বিবাহের পূর্বে যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন ধরনের সম্পর্ক ছিলনা ইজাব-কবুলের (বিবাহের প্রস্তাব ও তা গ্রহণ) পরপরই বর-কনের ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে মহব্বতের সম্পর্ক ও ভালবাসার বন্ধন গড়ে উঠে। উভয় খান্দানের মাঝে অপূর্ব সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার মন-মানসিকতা পয়দা হয়। তাইতো নবীগণ আন্তরিকভাবে দাম্পত্য জীবনকেই ভালবাসেন। রাসূল স. ইরশাদ করেন, নিকাহ করা আমার সুন্নাত, যে আমার এ সুন্নাত থেকে বিমুখ থাকে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। পক্ষান্তরে শয়তান দাম্পত্য জীবনকে নষ্ট এবং বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে স্বামীদেরকে সদা তালাক দেয়ার প্রতি প্ররোচিত করে। ফলে রাসূল স. বলেন আল্লাহর নিকট বৈধ বিষয় গুলোর মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত হলো তালাক। যেহেতু তালাকের দ্বারা দুই গোত্রের মাঝে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ফলে নবীগণ নিকাহ কে ভালবাসেন এবং তালাককে ঘৃণা করেন। রাসূল স. নয়জন বিবি শাদী করেছেন। যার কারণে নয় স্ত্রীর স্বজনদের সাথে রাসূলের গভীর ভালবাসা ও মহব্বত পয়দা হয়ে যায়। এর বরকতে কাফির গোত্র সমূহ দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ আরব দেশে আত্মীয়তার বন্ধনকে গুরুত্ব দেয়ার প্রথা প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত আছে। তারা আত্মীয়তার পারস্পরিক হক যথাযথ ভাবে আদায় করতেন, কয়েক জেনারেশনের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার মন-মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়। মিসর বিজয় হয়ে যখন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তখন মিসর থেকে কিছু কাফের গ্রেফতার করে মদীনায় আনা হয়। কয়েদীদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই ছিল। নারীদের মধ্যে একজন ছিলেন সফিয়্যা তিনি মদীনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অতএব রাসূল স. তাকে শাদী করেছেন। এর পর তিনি সমবেত সাহাবীদের সম্বোধন করে বললেন মিসর বাসীর সাথে এখন থেকে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। মিসর আমার শ্বশুরালয়। সুতরাং তোমরা মিসর বাসীদের সাথে ভালবাসা ও হৃদ্যতার সম্পর্ক স্থাপন করবে, তাদেরকে সম্মান করবে। বস্তুত, নিকাহের মাধ্যমে শ্বশুরালয়ের নারী-পুরুষের সাথে ভালবাসাপূর্ণ যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তা অন্য স্বজনদের মাঝে দেখা যায় না। এমন কি রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জাগতিক বিষয়াদী হতে তিনটি জিনিস আমার কাছে বেশি প্রিয়। এক- নারী (নারীকে যৌন তৃপ্তি মেটানোর উপায় হিসেবে মহব্বত করতেন না; বরং আত্মীয় স্বজনদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক, ভালবাসা ও হৃদ্যতা বজায় রাখার অপূর্ব মাধ্যম হিসেবে ভালবাসতেন ) কারণ নারীরাই আত্মীয় স্বজনদের সাথে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করে, তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ খবর রাখে। পক্ষান্তরে পুরুষরা সর্বদা আয়-রোযগারের অন্বেষণে ব্যস্ত থাকে। নারী যদি অসৎ ও মন্দস্বভাবের হয় তখন নারীর দ্বারা আতœীয়তার মাঝে মহব্বতের পরিবর্তে দুশমনির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাসূল সা. এর অপর দু’টি পছন্দনীয় বিষয় হলো - (২) সুগন্ধি (৩) নামায। আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্য থেকে মানুষের জুটি সৃষ্টি করেছেন আর একে আয়াত তথা কুদরতের নিদর্শন রূপে আখ্যায়িত করেছেন। আয়াত বলা হয়, ঐ কাজ যা আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না।পুরুষ থেকে নারী এবং নারী থেকে পুরুষ সৃষ্টি করা আল্লাহ ব্যতীত কেউ পারে না। তাই একে কুদরতের আলামত বলেছেন।
পারিবারিক জীবনে শান্তির মূল উৎস, স্বামী - স্ত্রী প্রত্যেকই স্ব-স্ব- দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা। স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকা। আর উভয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করলে কেউ কারো দ্বারা কষ্ট পায়না। পরিবার গঠনের জন্য যে, শারীরিক, অর্থনৈতিক বা সামর্থের প্রয়োজন, তা নারীর তুলনায় পুরুষের অধিক রয়েছে বলে পারিবারিক জীবনে পুরুষের কর্তা হওয়ার অধিকার আছে। অন্য দিকে নারীকে প্রকৃতিগত ভাবেই এমন করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যে কারণে তার জন্য পারিবারিক জীবনে পুরুষের হিফাযত ও তত্ত¡াবধানে থাকা উচিত। স্বামীকে পারিবারিক জীবনের কর্তৃত্ব অর্পণের সাথে সাথে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে , এটা যথাযথ ভাবে পালন না করলে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। পার্থিব জীবনেও স্বামীকে জবাবদিহি করতে হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বির্ণত, রাসূল্লাহ সা. বলেন- সাবধান ! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককেই তোমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং শাসনকর্তা তার অধীনস্থদের জন্য দায়িত্বশীল। এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাব দিহি করতে হবে। পুরুষ তার স্ত্রী, পরিবার-পরিজনের জন্য দায়িত্বশীল। এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের জন্য দায়িত্বশীল। এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর তোমাদের সকলকেই তোমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্র্কে মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র হলো ঘরের ভিতরে। পুরুষের দায়িত্ব হলো শ্রম সাধনার মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করা। নারীর দায়িত্ব হলো ঘর পরিচালনা, ঘর রক্ষণাবেক্ষণ ও সন্তান লালন পালন ইত্যাদি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী নিজেকে সম্পূর্ণরূপে হিফাযত করবে ও স্বামীর আমানতের খিয়ানত করবে না; বরং কাজে-কর্মে আচার-ব্যবহারে স্বামীর গুণের প্রতি আন্তরিক ভাবে স্বীকৃতি দান করবে। স্বামীর সব গোপনীয়তা রক্ষা করবে এবং তার মান সম্মানের হানি করবে না, এটাই সতী স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। এ দায়িত্ব সচেতনতা ও অধিকার দানের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হওয়ার একমাত্র মূল উৎস হলো পারস্পরিক ভালবাসা ও সহমর্মিতা। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে আন্তরিক ভাবে মহব্বত করলে পারস্পরিক সহানুভ‚তি ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুললে সাংসারিক জীবন সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনে পরিণত হয়। এ ধরনের পারিবারিক জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট মডেল হলো প্রিয় নবীর দাম্পত্য জীবন। তিনি হলেন মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনন্য আদর্শ, আদম সন্তান পারিবারিক জীবনে রাসূল স. এর আদর্শ অনুসরণ করলে কখনো অশান্তি ও দুঃখ-দুর্দশার শিকার হবে না। নেক স্ত্রীর গুণাবলী সম্পর্কে মহানবী স. বলেন, মুমিনের জন্য তাকওয়ার পর সবচেয়ে উত্তম জিনিস হচ্ছে নেককার চরিত্রবান স্ত্রী। এমন স্ত্রী, যে স্বামীর আদেশ মেনে চলে, স্বামী তার প্রতি তাকালে সন্তÍুষ্ট হয়ে যায়, স্বামী কোন বিষয়ে কসম দিলে সে তা পূরণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার নিজের ব্যাপারে ও স্বামীর সম্পত্তির ব্যাপারে স্বামীর কল্যাণকামী হয়। স্ত্রীর সর্বোত্তম গুণ কী ? এ ধরণের এক প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন -لاتخالفه فى نفسها ولاحالهابما يكره অর্থাৎ ,তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে স্বামীর মতের বিরোধীতা করবে না। এমন কাজ করবে না, যা স্বামী পছন্দ করবে না। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, একবার রাসূল স. হযরত আয়েশা রা: কে বললেন চলো আমরা প্রতিযোগিতার লক্ষে এক সাথে দৌড়াই। তারা উভয়ে দৌড় আরম্ভ করলেন। রাসূল স. আয়েশার আগে দৌড়ে গেলেন, হযরত আয়েশা পেছনে রয়ে গেলেন, অনুরূপ রাসূল স. শেষ বয়সে আর একবার দৌড় প্রতিযোগিতা দিলেন, তবে এবার হযরত আয়েশা রা: রাসূল স. এর আগে চলে গেলেন। তখন রাসূল স: তাকে সম্বোধন করে বললেন ( তিলকা বিতিলকা ) অর্থাৎ এবার ঐ বারের বিনিময় হয়ে গেল এবং প্রতিযোগিতায় উভয়ে সমান হয়ে গেলেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, দৌড় প্রতিযোগিতার সাথে নবীদের কী সম্পর্ক ? এটা তো এক প্রকার খেলাধুলা। নবীগণ খেলাধুলা করতে পারে না, এ প্রশ্নের উত্তর হলো, মূলত, রাসূল স. স্বীয় স্ত্রীর মনোরঞ্জন ও চিত্তবিনোদনের লক্ষ্যে এ দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। রাসূল স. এরশাদ করেন ‘‘যে সকল খেলাধুলা সাধারণভাবে হারাম তা বিবিদের মন সন্তুষ্টি ও তাদের সাথে কৌতুক ক্রীড়ার উদ্দেশ্যে জায়েয” । তিনি আরো বলেন -ان اكرم المومنين احسنكم اخلاقا الطفكم أهلا নিশ্চয় মুমিনদের মধ্যে বড় মর্যাদাবান ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র বেশী সুন্দর এবং যে স্ত্রীর সাথে বেশী নম্রতা ও উদারতার আচরণ কারী । মোট কথা - যে সদা বিবির সাথে নম্র আচরণ ও ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলে সেই সবচে বেশী সম্মানী।বর্তমান সমাজে অনেক পরিবার এমন আছে, স্বামী ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করে ও চেহেরায় মারমুখী ভাব প্রকাশ পায়। কথায় কথায় রেগে যায়, চোখ-মুখ রক্তিম হয়ে যায়। স্ত্রী মনে করে যেন ঘরে বাঘ ঢুকেছে। আর কেউ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় যে, স্ত্রীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে এবং ভয়-ভীতিতে রাখার জন্য এমন আচরণ করতে হয়। হযরত আঞ্জাশা রা:  নামক জনৈক সাহাবী একবার স্বীয় স্ত্রীকে প্রহার করেছে। রাসূল স. এখবর পেয়ে খুবই রাগান্বিত হলেন, এমনকি রাগে তার পবিত্র অবয়ব রক্তিম হয়ে গেল। অতঃপর তাকে সম্বোধন করে বললেন, হে আঞ্জাশা ! কাঁচের পাত্রকে ভেঙ্গে ফেলা বীরত্বের কাজ নয়। তোমার স্ত্রীকে প্রহার করা মানে কাঁচের-পাত্র ভেঙ্গে ফেলা। কারো সাথে লড়াই করার ইচ্ছা থাকলে তুমি প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করতে অথবা তোমার চেয়ে কোন শক্তিশালী মানুষের সাথে মোকাবেলা করতে । মহিলার গায়ে হাত তোলা বীবত্বের পরিচয় নয় এবং অভিজাত লোকের কাজ নয়; বরং তা অসভ্য ও অভদ্রতার পরিচয়। অর্থাৎ রাসূল স. তার উপর ভীষণ রেগে গেলেন। নবীদের আসল উদ্দেশ্য, স্বামী-স্ত্রী পারষ্পরিক, আন্তরিকতা, ভালবাসা ও সহমর্মিতার আচরণ করা। উভয়ের মাঝে ভালবাসার পরিবেশ গড়ে উঠলে, ছেলে-মেয়েদের মাঝেও তার প্রতিফলন ঘটে। এর প্রভাবে তারা পারষ্পরিক ভদ্র ও চমৎকার ব্যবহার করে, সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তখন পারিবারিক জীবন আদর্শ জীবনে পরিণত হয়। উভয়ের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে মহব্বতের সেতু বন্ধন তৈরী হয়। আর যদি পরিবারে ঝগড়া -ফাসাদ ও কলহ বিবাদ সদা লেগে থাকে। তখন পরিবার ও সমাজ জাহান্নামে পরিণত হয়। এমন কি স্বামী - স্ত্রীর মাঝে হতা হতের ঘটনা ঘটে, যা সাম্প্রতিক কালে  ব্যাপক ভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। পত্রিকার পাতা উল্টালে তার চিত্র নজরে পড়ে। রাসূল স. এরশাদ করেন, মানুষ সৌভাগ্যবান হওয়ার তিনটি আলামত। এক, দেশে বা ঘরের আশে পাশে আয়-রোযগারের ব্যবস্থা হওয়া। জিবিকা অন্বেষণের জন্য বিভিন্ন দেশে ঘুরে না বেড়ানো। দুই, বাসস্থান প্রশস্ত হওয়া, কেননা ঘর সংকীর্ণ বা অসংকুলান হওয়ার কারণে অন্তর সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাই ঘর বড় ও সম্প্রসারিত হলে হৃদয় -মন প্রফুল্ল ও আনন্দিত থাকে , যার ফলে মনে উদারতা পয়দা হয়। তিন, বিবি সতী- সাধ্বী ও ধর্মভীরু হওয়া। এ প্রসঙ্গে একটা চমৎকার ঘটনা এখানে উল্লেখ যোগ্য - তাহলো- আরবী ভাষার ব্যাকরণ শাস্ত্র ‘‘ ইলমে নাহুর বিজ্ঞপারদর্শী ও বড় ইমাম ইয়াহয়া ইবনে আকছাম রহ . একজন জগতখ্যাত আলিম ছিলেন । কিন্তু তার আকৃতি অত্যন্ত বিশ্রি, রং কালো, ঁেঠাট মোটা , চোখ ও দাঁত হলদে। অর্থাৎ কুৎসিত আকৃতির সব আলামতের সমন্বয় ঘঠেছে তার দেহে। তিনি শাদী করেছেন তৎকালীন সময়ের বিশ্ব সুন্দরী এক তরুনী কে, যার মধ্যে রূপ-লাবণ্যের কোন অভাব নেই। তারা এক সাথে বসলে মনে হয় এক পার্শ্বে দিনের আলো এবং অপর পার্শ্বে রাতের অন্ধকার। তারা যখন একে অপরের মুখোমুখী হয়ে বসতেন তখন ইয়াহয়া ইবনে আকছাম তাকে সম্বোধন করে বলতেন , আমরা উভয়ে নিঃসন্দেহে জান্নাতী, কেননা আমার মত কুৎসিত লোক তোমার মত রূপসী স্ত্রী পেয়ে এক মিনিট সময়ও আল্লাহর শুকর মুক্ত অতিবাহিত হচ্ছে না । আর তোমার মত সুন্দরী মেয়ে আমার মত কুৎসিৎ স্বামী পেয়ে এক মূহর্তও সবরহীন কাটছে না। অতএব, তুমি সবরের কারণে জান্নাতে যাবে, আর আমি শুকরের কারণে জান্নাতে যাবো। এমন সতী বিবির মর্যাদা তুলে ধরে রাসূল স. বলেন   الدنيا كلها متاع وخيرمتاع الدنيا المرأة الصالحة। অর্থাৎ পুরা দুনিয়া মানুষের সম্পদ, আর দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হলো সতী- সাধ্বী স্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন