Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীর সমস্যার সমাধান দরকার সম্পৃক্ত হতে চাই : এরদোগান

তুর্কি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ভারতের নাকচ

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১:৫৬ এএম

ডি ডব্লিউ
একদিকে যখন বাইরে থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান অন্যদিকে তখন তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার বহু সম্ভাব্য বিষয় রয়েছে যেমনটা আভাস মিলেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের কাশ্মীর বিষয়ক মন্তব্যে। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাতকারে এরদোগান বলেন, কাশ্মীর সমস্যার বহুমুখী সমাধান হওয়া দরকার। তিনি এতে তুরস্কের সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহের কথা জানান। এ বক্তব্য হচ্ছে তার অনেকগুলো অবস্থানের একটি যা ভারতের সাথে কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণ হতে পারে। ভারত তার এ বক্তব্য বিভেদ সৃষ্টিকারী বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার নয়া দিল্লীতে পৌঁছার আগে ভারত ভিত্তিক টিভি চ্যানেল উইওন-এর সাথে রোববার এক সাক্ষাতকারে এরদোগান এ কথা বলেন। সাক্ষাতকার কালে এরদোগান বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অব্যাহত অচলাবস্থার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সাক্ষাতকারে এরদোগান বলেন, আরো প্রাণহানি ঘটতে দেয়া আমাদের উচিত নয়। দু’দেশের মধ্যে বহুমুখী সংলাপ জোরদার করতে আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি। তিনি বলেন, আমি মনে করি, বহুমুখী সংলাপের মাধ্যমে আমরা এ সমস্যার চির সমাধানের পথ খুঁজে পাব।
এরদোগান বলেন, এই কাশ্মীর প্রশ্ন, এই প্রশ্ন গভীরভাবে আমাদের ব্যথিত করে। এটা সংশ্লিষ্ট দু’দেশকেই বিপর্যস্ত করে। কাশ্মীর চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারলে তা বিশ^ শান্তির ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখবে।
দুর্বল সম্পর্ক
কাশ্মীর সম্পর্কে এরদোগানের মন্তব্যের ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রুচি ঘনশ্যাম সপ্তাহান্তে বলেন, আমরা সব সময় জোর দিয়ে বলে আসছি যে ভারত-তুরস্ক সম্পর্ক নিজেদের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের বিশ^াস যে তুর্কি পক্ষও আমাদের মত একই মনোভাব পোষণ করে।
তবে ব্যক্তিগতভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্তা এতে বিস্মিত। একজন ঊর্ধ¦তন কর্মকর্তা ডি ডবিøউকে বলেন, আমরা জানি উভয় দেশই বহু বিষয়ে একমত পোষণ করে না, বিশেষ করে কাশ্মীর সমস্যা এবং পাকিস্তানের সাথে তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা বড় বিষয়। এ ধরনের কথা বলার জন্য এরদোগানের ভারত সফর আদর্শ উপলক্ষ নয়।
কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ বলেন, তারা তুর্কি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস আনাসতাসিয়েডস-এর ভারত সফরের কাছাকাছি সময়ে এটা ঘটার কারণে।
সাইপ্রাসের উত্তরাংশ ১৯৭৪ সাল থেকে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে। সাইপ্রাস ও তুরস্ক উভয়ের সাথেই ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক সাইপ্রাসকে স্বীকার করে না। অন্যদিকে এরদোগান সাইপ্রাসের ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানের জন্য পরিচিত।
পাকিস্তানের ভালো বন্ধু
ভারত সব সময়ই ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে, অন্যদিকে পাকিস্তান কাশ্মীর ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য অব্যাহত ভাবে মধ্যস্থতা চেয়ে আসছে।
এরদোগান বলেন, তিনি নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রæপে (এনএসজি) ভারতের সাথে পাকিস্তানের প্রবেশের পক্ষে। তিনি বলেন, ভারতের এতে আপত্তি করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েরই এনএসজির সদস্য পদ চাওয়ার অধিকার আছে। আমি মনে করি, ভারতের এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। তুরস্ক যদি এ জন্য পাকিস্তানকে সমর্থন করে, ভারতকেও করবে।
এনএসজি হচ্ছে ৪৮ জাতির একটি ক্লাব যারা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সহায়ক স্পর্শকাতর সামগ্রীর রফতানি, পুনঃ স্থানান্তর ও সুরক্ষা তদারকির মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ভারত ও পাকিস্তান কেউই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর দেয়নি। তারা উভয়েই এনএসজির সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে।

কূটনৈতিক উত্তেজনার উৎস
এরদোগানের দিলীø পৌঁছনোর আগে ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি আর্মেনিয়ার তিতসারনাকাবার্ড স্মৃতিসৌধে আর্মেনিয়ার গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
দিল্লীর জওয়াহরলাল নেহরু বিশ^বিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রফেসর পি. আর. কুমারাস্বামী ডি ডবিøউকে বলেন, এরদোগান নতুন আহমাদিনেজাদ হয়ে উঠছেনÑ বিতর্কিত ও বিভেদ সৃষ্টিকারী। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সংলাপের জন্য তার ডাক বইরের দুনিয়ার জন্য, তুর্কি নাগরিকদের জন্য নয়। তিনি বলেন, ভারতের জন্য সময় এসেছে তুরস্কের সাথে সম্পর্কে ঢিল দেয়া এবং আর্মেনিয়া ও সাইপ্রাসের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া। তিনি বলেন, তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ , এরদোগান নয়।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য অলকা আচার্য ডি ডবিøউকে বলেন, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতির উপর ভারতের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। এরদোগান কেন এসব কথা বলছেন সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এরদোগানের সাক্ষাতকার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের মত মনে হতে পারে। আমাদের চালুনি দিয়ে গম থেকে আবর্জনাগুলো সরিয়ে দিতে হবে।
ভারত ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৬.৫ বিললিয়ন ডলার। তবে বাণিজ্যিক ভারসাম্য ভারতের দিকেই বেশী। নরেন্দ্র মোদি ও এরদোগানের মধ্যে আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাস দমন ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় , বিশেষ করে সিরিয়ার উদ্বাস্তু সমস্যা গুরুত্ব লাভ করে।
সমস্যার কাশ্মীর
গত বছরের জুলাই থেকে কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে সহিংসতা চলছে। দ’ুসপ্তাহ আগে পুলিশ দক্ষিণ কাশ্মীরে বিরাট দমন অভিযান চালায় ও ১৩৫ জনকে আটক করে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরের মুক্তিকামী জনপ্রিয় তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানিকে গুলি করে হত্যার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে কাশ্মীর অচল হয়ে পড়ে।
১৬ এপ্রিল এক বিতর্কিত গণভোটে এরদোগান জয়ী হন যা তাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাকে ব্যাপক নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী করবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৮ সালে ভারত সফর করেন।

 



 

Show all comments
  • মোঃ আব্দুল গাফফার ৩ মে, ২০১৭, ১০:৫১ এএম says : 0
    আসলে সারা বিশ্বের সব খানেই মুসলিমদের যে কেউ নির্বাচনে বিজয়ী হলে বর্তমান খবরটার শেষ প্যারার মত মন্তব্য অনেকেই করে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ