Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢামেকে অর্থ লোপাট

সিভিল অডিট অধিদপ্তরের আপত্তি

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ৩ মে, ২০১৭

হাসান সোহেল : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডক্টর ক্যান্টিন-২ এবং স্নাক্স কর্নারের ইজারাদার লিজা এন্টারপ্রাইজ। ইজারাদার ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ইজারার ২৫ লাখ ৮ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিলেও ভ্যাটের ২ লাখ ২৫ হাজার ১২০ টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের অডিটে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল গনি ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য লিজা এন্টারপ্রাইজকে চিঠি দেন।
এখানেই শেষ নয়; হাসপাতালটিতে ২০১৫-১৬ এবং ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বেশি রোগী দেখিয়ে পথ্যের নামে বিল পরিশোধ, এসআর রেট থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয়, ভাড়ার টাকা আদায় না করা, যন্ত্রপাতি মেরামত ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জামানত গ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৬ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে বলে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিভিল অডিট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু তাহের-এর নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ অডিট সম্পন্ন করেন। অডিট রিপোর্টে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ১৮টি খাতে মোট ৪ কেটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৬ টাকা এবং ২০১৪ জুলাই থেকে ২০১৫ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১৪টি খাতে মোট ৩ কোটি ৯১ লাখ ৯ হাজার ২৪০ টাকা সরকারের ক্ষতির অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত খাতগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অডিট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক মো. আবু তাহের ইনকিলাবকে বলেন, অডিট একটি চলমান প্রক্রিয়া। ঢামেক হাসপাতালের বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে তাই অডিট আপত্তি দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যে জবাব পাঠিয়েছে তা তিনি হাতে পাননি বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রতিবছরই অডিট হয়, আপত্তি আসে। কিছু মীমাংসা করতে হয়। আর কিছু ক্ষেত্রে অর্থ আদায় করতে হয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আছে- যেসব অডিট আপত্তি মীমাংসা যোগ্য নয়, সেগুলোর অর্থ আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিঠি প্রদান করা। আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা জবাব দিলে তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় সবকিছু দেখে ব্যবস্থা নিবে।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাপড় ধোলাইয়ের কাজে ঠিকাদার নির্বাচিত করতে সর্বনিম্ন দরদাতাকে নিম্ন দরদাতা না দেখিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে সর্বনিম্ম দরদাতা দেখিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। এরপর সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয় ৩০ লাখ ২১ হাজার ৩১৩ টাকা।
বেশি দামে এমএসআর সামগ্রী ও বাল্ব ক্রয়
কোন কারণ ছাড়াই নিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দামে এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ের কারণে সরকারের ৮ লাখ ৩ হাজার ৩৫০ এবং উচ্চ মূল্যে বৈদ্যুতিক বাল্ব কেনায় ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে।  
এসআর রেট থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয়
হাসপাতালে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এসআর রেট অনুযায়ী ক্রয়ের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ঠিকাদারের সঙ্গে জোগসাজস করে এসআর রেট থেকে বেশি মূল্য ট্রলির চাকা কেনায় ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে। একই অনিয়ম হয়েছে রি-এজেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও। এসআর রেট থেকে বেশি মূল্য রি-এজেন্ট ক্রয় দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করায় সরকারের ২৯ হাজার ৯৬০ টাকা ক্ষতি হয়।
ডক্টরস ডরমেটরির ভাড়া আদায়ে অনিয়ম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডক্টরস ডরমেটরিতে যেসব কর্মকর্তা বসবাস করেন তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় না করায় সরকারের ক্ষতি হয় ৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আবার হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের ভাড়া আদায় না করায় সরকারের ৮ লাখ ৪০ হাজার ক্ষতি। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরীন ক্যান্টিন ভাড়ার ওপর ভ্যাট আদায় না করায় সরকারের ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
মেশিন মেরামতে অনিয়ম
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের এমআরআই মেশিন ক্রয়ের পর ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ওয়ারেন্টি থাকা স্বত্তেও ওই সময়ের মধ্যে মেশিন বিকল হওয়ায় মেরামতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। একইভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন মেরামতের ক্ষেত্রেও। মেশিন ক্রয়ের পর ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে মেশিন বিকল হওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয় ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জামানত গ্রহণে অনিয়ম
ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রম টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। টেন্ডারের অংশ গ্রহণের পর যারা ঠিকাদার বা সরবরাহকারী নির্বাচিত হয়; কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক তাদের নিরাপত্তা জামানত হিসেবে নির্ধারিত হারে টাকা জমা রাখতে হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা টেন্ডার শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা না করা সত্তে¡ও আর্নেস্টমানি বা পূর্বের জামানত বাজেয়াপ্ত না করায় সরকারের ১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫২ টাকা ক্ষতি হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরবরাহে অনিয়ম
টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে ঠিকাদার নির্বাচিত হওয়ার পর নির্ধারিত দামে মালামাল সরবরাহ না করলে টেন্ডারের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারের জামানত থেকে অতিরিক্ত ব্যয়িত আদায় করা হবে। কিন্তু এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর কারণে সরকারের ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়া নির্বাচিত ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে কার্যাদেশ বাতিল ও জামানত গ্রহণ না করায় সরকারের ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭০ টাকা ক্ষতি হয়।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট শাখা, সাবেক স্টোর কিপার বর্তমানে এ্যাকাউন্টস অফিসার এম এম আরিফুর রহমান ও পরিচালক হাসপাতালের যোগসাজশে এ অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি চেকে তাদের কাছ থেকে ১ থেকে ২শতাংশ কমিশন দিতে হয়েছে ক্যাশিয়ার মো. আলমগীরকে।  
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরচিালক বিগ্রেডিয়ার মিজানুর রহমান অডিট আপত্তির বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, অডিট আপত্তি সব অফিসেই আসে। জবাব দেয়া হয়েছে। অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

Show all comments
  • সাব্বির ৩ মে, ২০১৭, ১১:২৬ এএম says : 0
    অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ