Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আপনাদের পাশে থাকবো সুনামগঞ্জের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী থাকি আর না থাকি

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজিজুল ইসলাম চৌধুরী ও আব্দুল বাছির সরদার, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকে : হাওরবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোন গাফিলতি হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওরাঞ্চলের মানুষ এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি জানি ফসল নষ্ট হলে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আছে, একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি আর না থাকি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে সব সময় আপনাদের পাশে থাকবো। গতকাল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সাহিদ আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ডিলার নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য যে পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন হবে, সেই পরিমাণ খাবার আমরা দিতে পারবো। দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে, সরবরাহ করাও হচ্ছে। প্রয়োজনে ভিজিএফের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। যতদিন হাওরাঞ্চলের মানুষের প্রয়োজন থাকবে, ততদিন আমরা এটি চালু রাখবো।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার শাহানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও আহমদ হোসেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরুদ্দীন আহমদ কামরান, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল প্রমুখ।
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে সুনামগঞ্জের শাল্লার সাহিদ আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ সামগ্রি বিতরণের আগে উপস্থিত সুধিজন ও ত্রাণ নিতে আসা অভাবী মানুষের উদ্দেশে ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জেলার হাওরগুলোর ক্ষতিগ্রস্তের চিত্র তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ৩০ মিনিটের বক্তব্যে আরো বলেন, হাওরাঞ্চলের মানুষ এক ফসলের উপর নির্ভরশীল থাকায় তাদের দুর্দশা বেশি হয়েছে। এজন্য এক ফসলের উপর নির্ভর না করে বহুমুখী ফসলের চিন্তা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হাওরাঞ্চলের মানুষের উদ্দেশে বলেন, প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে ফসল ফলানোর চিন্তা করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমাদেরকে বাঁচতে হবে। হাওরাঞ্চলে ফসলের হানি ঘটায় গো-খাদ্যের সংকট তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে, গো-খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের মানুষকে আগামীতে সার-বীজসহ কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়ে রেখেছি। যারা মৎস্য ও কৃষি খাতে ঋণ নিয়েছে, তাদের ঋণের সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। অনেক ব্যাংকের ঋণ আদায়ও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে এনজিও ঋণ আদায় করা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি হাওরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট বুঝি, গোপালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ একই প্রকৃতির। হাওর-বাঁওড় ও বিলাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাও কষ্টের। এ অঞ্চলের হাওর বাঁচিয়ে রাখতে হবে। খাল-বিল পলি মাটিতে যাতে ভরাট না হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ পানির সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয়। তাই পানির মধ্যে যে ধান হয়, সে জাতের ধান ফলানো যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। লবণাক্ত এলাকায় লবণ সহিষ্ণু ফসল ফলানো ও খরা এলাকায় খরা সহিষ্ণু ধান ফলানোর গবেষণা চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। তাই হাওরাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। চরাঞ্চলেও অনুরূপভাবে আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে সেটিরও উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও অবৈতনিক করা হবে। তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলের যে সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, সে সকল এলাকায় সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। গৃহহারা মানুষদের জন্য বিনামূল্যে গৃহ নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সেচ কাজের জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি অব্যাহত আছে। ফসল নষ্ট হওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষদেরকে কষ্ট দেয়। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎরতা আমরা বরদাশত করবো না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দুঃখি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষ কিছু পায়। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে। কিন্তু তাকে ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হলো। আমার মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি স্বজনহারা, নিঃস্ব। তৎকালীন সময়ে আমাকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে। আমি সরকারে এসেই বলেছি আমরা আর ভিক্ষা করে আনবো না। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। দেশে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছি। মৎস্য উৎপাদন বাড়ানো ও প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ৩১টি উপজেলা ও ৩৩৩টি ইউনিয়নের ফসল ডুবেছে। ডুবে ডুবে কৃষকরা যে ধান কেটেছে, তা দিয়ে কৃষকদের চলবে না। ত্রাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, খাদ্যের কোন অভাব নেই, আপনারা যা চাইবেন শেখ হাসিনা তাই দিবেন। আমি সুনামগঞ্জের হাওরের মানুষের দুর্দশা দেখেছি। মানুষের সাহস দেখে আমি উজ্জীবিত হয়েছি। একটি মানুষও যেন না খেয়ে থাকে, আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছি।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য মজুদ আছে। ওএমএস চালু করেছি। প্রধানমন্ত্রী যতদিন চালানোর নির্দেশ দিবেন, ততদিন তা চলবে। দেশে কোন খাদ্য সংকট নেই, খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক আছে। তিনি বলেন, হাওরবাসীর সাহায্যে আমরা পাশে আছি। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ২৯ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিপাতে ১৫/১৬ ফুট পানি বেড়ে যায়। ফলে ব্যাপক ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাওর রক্ষা বাঁধের দুর্নীতির বিষয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিন স্তরে তদন্ত করা হচ্ছে। কোন অন্যায়-অনিয়ম পাওয়া গেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আামদের পূর্ব পুুরুষেরা হাজার বছর ধরে প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যে সংগ্রাম করে চলেছেন। সুনামগঞ্জের ফসলহারা মানুষের এই অবস্থায় সরকার ইতিমধ্যেই কিছু কর্মসূচি নিয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১ মে, ২০১৭, ১১:০৩ এএম says : 0
    আমি যদিও নিজ চোখে কিছুই দেখলামনা কিন্তু সাংবাদিক ভাইয়ের লিখা পড়লাম এবং বুঝলাম। আমি জানতাম জননেত্রী শেখ হাসিনা একবার দূর্গত এলাকায় যদি যায় তাহলে সেখানকার সকল প্রকার ব্যাবস্থা তিনি অবশ্যই করবেন। তিনি সেখানে যে যে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন ছিল সবাইকে সাথে নিয়ে গেছেন এবং সেখানে বসেই সকল প্রকার নির্দেশ দিয়ে এসছেন এবং বলেও এসছেন। আমি বিশ্বাস করি ওনার এই নির্দেশ প্রতিটি মন্ত্রী অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। তবে মন্ত্রীরা বললেই সেটা হবে না যদি এসব এখন সচিব থেকে তার নিম্নের কর্ম কর্তারা সহযোগিতা না করেন। আমি দেখেছি হওয়া কাজও হয়না নানা রকম অফিসিয়াল কায়দা কানুনের জন্য। আমি দেখেছি অফিস আদালত মানুষ মারা যাচ্ছে তাকে বাচানোর ব্যবস্থা না করে কাগজ পত্র সঠিক কিনা এসব বাজে বিষয়ে সময় নষ্ট করে মানুষকে মেরে ফেলে পরে দোষ দেয়া হয় নিয়মের বা সরকারি দলের...... যাদের এসব কথা বলা মাত্রই কাজ শুরু করার কথা তারা কাজ শুরু করার জন্য চান এটা সেটা...... চাপ দিলেই বলেন ওনারা পাবলিক খুশি করে চলেগেলেন কিন্তু আমরা আইনের বাইরে যেতে পারিনা ইত্যাদি ইত্যাদি...... এখন ওনারা মানে যাদের দায়িত্ব এসব কাজ করা তারা যদি কোন রকম কৈফিয়ত না দিয়ে সোজা সুজি কাজ করেন তাহলে আমি নিশ্চিত দূর্গত এলাকায় মানুষ কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে এতে কোন রকম ভুল নেই এটাই সত্য। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের যারা প্রকৃত জনগণের খেদমতগার হিসাবে বেতন ভাতা খাচ্ছেন তাদেরকে তাদের বেতন হালাল করে খাবার ক্ষমতা দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরুল ১ মে, ২০১৭, ১২:১২ পিএম says : 0
    কথায় নয় জনগণ বাস্তবে দেখতে চায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ