Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্র পরিচালনার তিনটি স্তম্ভের মধ্যে সমঝোতা নিয়ে চলতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একে অপরের দোষারোপের পথে না হেঁটে সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমঝোতার মাধ্যমে আরও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করলে রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার এই তিনটি স্তম্ভের মধ্যে একটা সমঝোতা নিয়ে চলতে হবে। একটি আরেকটিকে দোষারোপ করে কোনোদিন একটা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। এই বিষয়টায় সবাইকে আমি একটু সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিচারপ্রার্থীদের প্রতি আরও মানবিক হতে এবং সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি আহŸান জানান। তিনি বলেন, শুধু আইন আর অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি করে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো সম্ভব নয়। আমাদের বিচারক এবং আইনজীবীদের আরও মানবিক এবং জনগণের প্রতি সেবার সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ বিষয়টিতে সবাইকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেন।
বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই আন্তরিক।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে ধনী-দরিদ্রের কোন বৈষম্য থাকবে না এবং জনগণ সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারবেন।
শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সংবিধানে সুবিচার ও সাম্যের বাণীকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেন। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে ভুক্তভোগী ছিলেন বলেই সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেন। সংবিধান থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং সবাই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। আবার ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।
সবকার প্রধান বলেন, বিনাদোষে এবং বিনাবিচারে বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর জেলখানার নির্জন সেলে একাকী বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসনও হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের  রোজনামচা’ পড়লে আমরা জানতে পারি কী দুঃসহ দুঃখকষ্ট তাকে সহ্য করতে হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর বিচার কাজ চলতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ জনগণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া, এসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠীর জনগণও এই আইনগত সহায়তা পেয়ে থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আদালতগুলোতে এবং শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম আদালতসমূহে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টেও সরকারি আইনি সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে শুধু আইনি সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে আমরা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। বিচারপ্রার্থী জনগণের কল্যাণে এটিকে আমরা ‘এডিআর কর্ণার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে কাজে লাগাতে চাই। আপস-মীমাংসা বা সমঝোতার মাধ্যমে স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিস কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
মামলাজট নিরসন ও মামলার দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে সরকার আইনি সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহ বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি খাতে একজন জেলা জজসহ সাত সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এবং এ খাতের সব বিরোধ প্রচলিত আদালতের পরিবর্তে এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার বিচার বিভাগে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করেছে। এতে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, দাগী আসামিদের আদালতে আনা-নেয়ার পৃথক যানবাহন থাকবে এবং কারাগার থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অধস্তন আদালতে ৫৮৬ জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩শ’৫০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং নতুন নতুন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ণ সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ৫শ’৪০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধস্তন আদালতের দেড় হাজার বিচারকের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য স¤প্রতি ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি
জাতীয় আইন সহায়তা দিবস উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আলহাজ নূর আলম ভ‚ইয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির  নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ সেলিম রেজা, মহাসচিব জোবায়ের আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগকে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। পাশাপাশি গরীব-দুঃখীদের পাশে থেকে আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ দলিল লেখক সমতির নেতৃবৃন্দ।



 

Show all comments
  • Nur- Muhammad ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ৭:৩৫ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধান মন্রী, আপনার কথার সাথে জনগণ এক মত। সংসদ, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ সমেন্বয়ে কাজ করলে, দেশ চরম উন্নতীর শিখরে পৌঁছবে। এটা বাস্তব ও সত্য। তবে এই সমেন্বয়, উন্নত গণতন্রেই সন্ভব। আমি ই প্রধান মন্রী বা প্রেসিডেন্ট থাকব, এই নীতিতে সন্ভব নয়। ক্ষমতার লোভ দেশ ও জাতীকে একে বারে তালানীতে নিয়ে যায়। নামে মাত্র গণতন্র থাকে। কিন্ত জনগণ গণতন্রের কোন স্বাদই পায় না। যা আমাদের দেশকে এমনি ভাবেই গ্রাস করে ফেলছে। আসুন ব্যাখা করিঃ---- ( ক) সংসদ- সংসদের মূল উপাদান জনগণ। জনগণের ভোটের নির্বাচিত যোগ্য লোকই সংসদে থাকবে। জনগণের যোগ্যতা সন্পন্ন এমপি রা, জনপ্রতিনিধিত্ব ও আইন প্রনয়ন করবে। কিন্তু দূখঃ জনক হলে ও সত্য, ২০১৪ সালে এক প্রহসনমূলক পন্থায় এমপি রা আমাদের সংসদ দখল করে বসে। এখানে জনগণের নূন্যতম কোন সংন্পিক্ততা ছিল না। তাই এই এমপি, মন্রীরা জনগণের কল্যাণ না করে, আখের ঘুছানোতে ব্যাস্থ হয়ে পড়ছে। (খ) বিচারঃ-- বিচার বিভাগের মূল উপাদান বাদী, বিবাদী। এই বাদী, বিবাদী আবার জনগণের একটা অংশ। জনগণের এই অংশের উপর ন্যায় অন্যায়ের প্রতিফন ঘটানো হয়। বিচারক এটা আইন ও বিবেক দিয়ে করে থাকে। এখানে দলীয় প্রভাব থাকলে সকল উলট পলট হয়ে যায়। জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বন্ঞ্চিত হয়। আমাদের দেশে বিরুধী মতের উপর এমন গঠনা ঘটে। তাই ত আঃ লীগ সরকারের সময় বিএনপি নেতাদের উপর আর বিএনপির সময় আঃ লীগ নেতাদের উপর অসংখ্য মামলা মোকদ্দমা ঝুলে। (গ) নির্বাহীঃ--- নির্বাহী বিভাগের উপাদান হলো জনসেবা। যারা এটা করবে, তারা জনগণের ট্যাক্স এ চলে। এরা সবায়ই সরকারী কর্মচারী। আমাদের দেশে এখন সরকারী চাকরী নিতে ৫--২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। চাকরীর পর তারা সেবার পরিবর্তে জনগণের উপর জোড়জুলুম করে প্রদেয় ঘুষের চেয়ে হাজার গুন নিতে থাকে। এতে জনগণ সরকারী সেবা পেতে সর্বসান্ত ও নার্ভিশ্বাস হয়ে উঠছে। পাকিস্তানি শাসকরা বিনাবিচারে বঙ্গবন্ধুকে দিনের পর দিন আটকে রাখছিল। আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করছিল। তাই ত আমাদের দামাল ছেলেরা অস্র হাতে নিল। দেশ স্বাধীন করলো। তবে এখন কেন আমাদের জাতীয় নেতা নেত্রীরা মিথ্যা মমলার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। নাকানি চুবানি খাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে দলিল লেখক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিল। তারা কি পেল বা দিলো তার কোন ব্যাখ্যা পেলাম না। পরিশেষে বলব, মাননীয় প্রধান মন্রীর কথার প্রতিফলন ঘটবে যখন ভোটাধিকার ও গণতন্র ফিরে আসবে। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    akdom thik kotha bolesen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ