Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অ্যাপিল কি ফুরিয়ে আসছে?

দিল্লি পুরসভার ৩ করপোরেশনেই বিজেপির কাছে আপের হার

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের রাজনীতিতে প্রায় ধূমকেতুর মতো উত্থান হয়েছিল আম আদমি পার্টি ও তার নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। কিন্তু যেভাবে চমক জাগিয়ে শুরু করেছিল তারা, সেভাবেই কি তারা পতনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে?
এই প্রশ্নটা উঠছে, কারণ গতকাল দিল্লির পুরসভা নির্বাচনে শহরের তিনটি করপোরেশনেই তারা বিজেপির কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। অথচ মাত্র দু’বছর আগেই তারা এই দিল্লিতে বিজেপিকে এক রকম ধরাশায়ী করে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল। ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতে জিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
শুধু দিল্লিতেই নয়, গত মাসে পাঞ্জাব ও গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনেও আম আদমি পার্টি মোটেই আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। আম আদমি পার্টি এক রকম ধরেই নিয়েছিল পাঞ্জাবে তারা সরকার গঠন করবে। অথচ ফল বেরোনোর পর দেখা গেছে ১১৭টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে মাত্র ২০টি আসন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল তার আগে বেশ কয়েক মাস ধরে দিল্লির রাজ্যপাট উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ শিশোদিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়ে পাঞ্জাবের মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। ওই রাজ্যে একের পর এক নির্বাচনী জনসভাও করেছিলেন তিনি।
কিন্তু পাঞ্জাব, গোয়া ও এখন দিল্লিতে এই নির্বাচনী ব্যর্থতার পর দলের ভেতরেও অনেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
পাঞ্জাবে পরাজয়ের পর তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। দিল্লিতে হারার পর গতকালও তিনি একই যুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তার দলেরই প্রথম সারির নেতা ও এম এল এ অলকা লাম্বা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইভিএমে কোনো কারচুপি হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। দলের ব্যর্থতার দায় নির্বাচনী যন্ত্রের ওপর চাপানো খোঁড়া অজুহাতের মতোই শোনাচ্ছে বলে পার্টিতেই অনেকে বলছেন।
আম আদমি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও একদা কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, দিল্লির মানুষ তাদের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ও তার বদলে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তার মতে, আম আদমি পার্টির ব্যাপারে মানুষের এতটাই আশাভঙ্গ হয়েছে যে, গত দশ বছর ধরে দিল্লির পুরসভাগুলোতে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি-র সম্পর্কে হতাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা আবার সেই বিজেপিকেই বেছে নিয়েছেন।
কিন্তু যে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের জের ধরে আম আদমি পার্টির উত্থান, সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কি তাহলে মানুষের মধ্যে আর তেমন সাড়া ফেলতে পারছে না?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নির্মলাংশু মুখার্জি মনে করেন সেটা আংশিকভাবে ঠিক। কিন্তু তার মতে, তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল দুর্নীতি-বিরোধিতার এজেন্ডাটা আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরোপুরি হাইজ্যাক করে নিতে পেরেছেন।
অধ্যাপক মুখার্জির কথায়, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে একটা সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা দিয়েছেন মোদি। এতটাই যে, মানুষ এখন তাকে বিজেপির চেয়েও বেশি বিশ্বাস করছে। যে কারণে পৌরসভার নির্বাচনেও এই প্রথমবার দেখলাম আগাগোড়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকেই ব্যবহার করে যাওয়া হল’।
উল্টোদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নানা জনমুখী উদ্যোগ নিলেও তার এমন একটা ইমেজ বা ভাবমর্যাদা তৈরি হয়েছে যে, তিনি আসল কাজের চেয়ে প্রচারটাই বেশি ভালবাসেন।
দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢিলেমি করেছেন, এমনও অভিযোগ উঠেছে। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির বেশ কয়েকজন বিধায়ক দুবছরের মধ্যেই দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন। তাহলে কি ধরেই নেয়া যায়, আম আদমি পার্টি নামক ‘রাজনৈতিক এক্সপেরিমেন্ট’টার দিন ঘনিয়ে আসছে? কোনো কোনো বিশ্লেষক অবশ্য এত তাড়াতাড়ি তাদের মৃত্যু ঘোষণা করতে রাজি নন। তাদের বক্তব্য, ‘দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এখনও বছর তিনেক সময় আছে। দুর্নীতিবরোধী আন্দোলন দিয়ে কিছু হবে না, কিন্তু সরকার যদি এই সময়টায় ঠিকঠাক কাজ করতে পারে, তাহলে পারফরম্যান্স দিয়ে তাদের পক্ষে আবার ঘুরে দাঁড়ানো অবশ্যই সম্ভব’! সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ