পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : হাওর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো আরও বেশি প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেস বিফ্রিংয়ে এবং একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান, সবাই যেন ত্রাণ পায়, সে জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চারটি মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে।
বৈঠকে হাওরের বন্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রিলিফ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট যে মিনিস্ট্রি রয়েছে তারা যাতে একটু তৎপর হয় সে ব্যাপারে অনুশাসন দেয়া হয়েছে।
কোন ধরনের তৎপরতার কথা বলা হয়েছে- এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, যা প্রয়োজন পুনর্বাসনের জন্য, জনগণ যাতে সন্তুষ্ট হয় যে আমাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান করে ফেলেছে, কাজও করছে। তারপর যেটা করছে সেটা যাতে সবাইকে জানানো হয়।
বাঁধ নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাঁধ নিয়ে আলোচনা হয়নি। অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে মানুষ ঠিকভাবে রিলিফ পাচ্ছে কিনা’?
শফিউল আলম বলেন, পর্যবেক্ষণ হচ্ছে রিলিফ মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পৌঁছেছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই স্টেপ নিয়েছে, মানুষ ফিল করছে যে কিছু কাজ হয়েছে। আলোচনা হয়েছে যে অনেক কাজ হচ্ছে, এটাকে একটু প্রচারে নিয়ে আসা- এটা প্রধানমন্ত্রীর ম্যাসেজ।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে বা অন্যান্য দেশের মতো ইপিজেডে ভিন্ন নামে ট্রেড ইউনিয়ন করার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ইপিজেড আইন নিয়ে কথা উঠলে তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য চাপ দিচ্ছেন, সেসব দেশে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকর নেই। যা আছে তা হলো ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। আপনারাও দেখেন অন্য নামে করা যায় কিনা।
বৈঠকে হাওর এলাকার পানিতে ইউরেনিয়াম ও মাছের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। মন্ত্রীদের কয়েকজন বলেছেন, পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, হাওরের পানিতে ইউরেনিয়াম পাওয়া যাচ্ছে। ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলেতো ভালো। ইউরেনিয়াম অনেক দামি। এটা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
হাওরে মাছ মারা যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে হাওরে মাছ মারা গেছে, এর হিসাব হলো কীভাবে? কোন পরিসংখ্যান দিয়ে এর পরিমাপ করা হলো? মাছ মারা যাওয়ার হিসাব করা হলো কীভাবে?
জীবাণুসহ মাছ-পোনা আমদানিতে কারাদন্ডের আইন হচ্ছে
আমদানি করা মাছ, পোনা বা রেণুুর মাধ্যমে রোগজীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত মাছ আমদানি ঠেকাতে নতুন একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনের মাধ্যমে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো মৎস্য, মৎস্যপণ্য, উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্য আমদানি করতে পারবে না। এই আইন অমান্য করলে দোষীরা অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এসব বিধান রেখে ‘মৎস্য সঙ্গ নিরোধ আইন ২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের কথা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাছ জাতীয় জিনিস এখন আমরা নিজেরা নিজেরা নিয়ে আসছি। কিন্তু ভবিষ্যতে আনতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। আমদানির অনুমতিপত্র এবং মৎস্যবিষয়ক সনদপত্র গ্রহণ, সংশোধন, বাতিলের এখতিয়ার দেয়া আছে কর্তৃপক্ষকে। এগুলো কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এটা একটা নতুন আইন। বিভিন্ন দেশ থেকে মৎস্য পোনা, রেণু আমদানি করা হয়। সেগুলোতে যেন রোগজীবাণু বা ক্ষতিকর কিছু না থাকে সেজন্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ আইন করার বিষয়টি এসেছে।
তিনি আরো বলেছেন, আমাদের দেশে যেসব মৎস্য জাতীয় প্রাণী আসা নিষিদ্ধ সেগুলো যেন না আসে। যেমন-পিরানহা, আফ্রিকান মাগুর এগুলো আনা আমাদের আইনে নিষিদ্ধ। যদি ভুলক্রমে চলে আসে তবে এ আইন প্রটেকশন দেবে।
শফিউল আলম বলেছেন, আইনে সঙ্গনিরোধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মৎস্য রোগের প্রাদুর্ভাব বা বিস্তার রোধে আমদানির মাধ্যমে আনা মৎস্যপণ্য, উপকারী জীবাণুু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি পৃথকীকরণ এবং পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত কোনো স্থান বা আঙিনায় মৎস্য সঙ্গ নিরোধ কর্মকর্তার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অন্তরীণ বা পর্যবেক্ষণে রাখাই হচ্ছে সঙ্গনিরোধ।
শফিউল আলম বলেছেন, সরকার জনস্বার্থে সময়ে সময়ে মৎস্য, মৎস্যপণ্য বা উপকারী জীবাণুর আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
তিনি আরো বলেছেন, মৎস্য সঙ্গনিরোধের বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ দিতে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মৎস্য সঙ্গনিরোধ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করতে পারবে। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত বন্দরে মৎস্য সঙ্গনিরোধ স্টেশন করতে পারবে।
শফিউল আলম বলেছেন, কোনো পুকুর, দীঘি বা জলাশয়ে বা কোনো আঙ্গিনায় মৎস্য সঙ্গনিরোধবিষয়ক রোগ-জীবাণু হিসেবে পরিচিত বা অনুমিত রোগ-জীবাণু পাওয়ার ক্ষেত্রে মালিককে নিকটস্থ মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। এ আইনের অধীনে অপরাধের জন্য পুলিশ সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, তা আবার জামিনযোগ্য হবে। বিচারিক আদালতের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও এ আইনের অধীনে করা অপরাধের বিচার করতে পারবে।
এখন বিদেশ থেকে আসা মাছ সঙ্গনিরোধ করা হচ্ছে কীনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যে বিদেশ থেকে মাছ আসছে তা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় চেক করা হয়। এখন সেটা কার্যকর করার জন্য এই আইনটি হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কমেছে
চলতি বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১০১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪৭টি। ৫৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। অপরদিকে গত বছরের একই সময়েও ১৩টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৭৯টি। এর মধ্যে ৪৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন ছিল ৩০টি। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ।
মন্ত্রিসভায় লাকি আখন্দের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব
মন্ত্রিসভায় মুক্তিযোদ্ধা এবং কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লাকি আখন্দের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে একটি শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রিসভায় বলা হয়, লাকি আকন্দের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। বঙ্গবন্ধুর আহŸানে ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে লাকি আখন্দের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করার অবদানের কথা স্মরণ করেন মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভায় বলা হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সুমধুর সুরে নতুন ধারার গানগুলো মুিক্তযোদ্ধাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মন্ত্রিসভায় লাকি আখন্দের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।