Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিদ্যুৎ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুগ্ধ

পাক সাংবাদিক সমাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন এবং কারাবরণ করেছিলেন

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


দু’দেশের শক্তিশালী বন্ধুত্ব চান পাক সাংবাদিকরা
আহমদ আতিক, পাকিস্তান থেকে ফিরে : বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিদ্যুৎ, অর্থনীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানি সাংবাদিকরা। সেই সাথে ’৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে করা তাদের আন্দোলন এবং কারাবরণের স্মৃতিচারণও করেন। তারা চান বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। চান দু’দেশের মধ্যে ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব। দেশটির সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এশিয়ার মধ্যে সার্ক অঞ্চলের মানুষজন বঞ্চিত। রাজনীতির কোপানলে পড়ে এখানকার মানুষের জীবন নানা দুর্ভোগে পরিপূর্ণ। এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো সার্ক দেশগুলোর মধ্যে আরো বেশীমাত্রায় কানেকটিভিটি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানো। তাদের দাবী, পাকিস্তানের মিডিয়া বেশ স্বাধীন। যে কোন ধরনের সংবাদ প্রকাশে এবং সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রমের সমালোচনায় তারা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি স্বাধীনতাই ভোগ করে থাকেন।
পাকিস্তান পৌঁছার পর সুরক্ষিত হকি স্টেডিয়ামের ২য় তলায় করাচি কাউন্সিল অব পাকিস্তান নিউজ পেপার এডিটর’স (সিপিএনই) কার্যালয়ে হলো বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়। সিপিএনই’র মহাসচিব করাচির ডেইলি এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক আইজাজুল হক স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই দু’দেশের ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক। চাই এ অঞ্চলের উন্নয়নের আগ্রযাত্রায় যেন উপমহাদেশের সব মানুষ শরিক হতে পারে।
একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক আবদুল খালিক আলী বলেন, রাজনীতিবিদদের কারণে দু’দেশের মধ্যে সমস্যার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কের টেনশন কমাতে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে সার্ক অঞ্চলের মানুষজন বঞ্চিত। রাজনীতির কোপানলে পড়ে এখানকার মানুষের জীবন নানা দুর্ভোগে পূর্ণ। এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো সার্ক দেশগুলোর মধ্যে আরো বেশি মাত্রায় কানেকটিভিটি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। বালুচিস্তান প্রসঙ্গে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালুচরা এখনো অনেক অধিকার বঞ্চিত। তাদের অবস্থা এখন অনেকটা ৭১ সালের বাঙালিদের মতো।
ডেইলি আপিল সম্পাদক শের মো: খাওয়ার বলেন, পাকিস্তানে ৭১ সালের পরে বাঙালির সংখ্যা ছিল ২৭ লাখের মতো। তাদের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে এবং মর্যাদার সাথে আছে। বাংলাদেশের রুনা লায়লা এবং শবনম আমাদের খুব প্রিয়জন।
সিপিএনই’র সাবেক মহাসচিব ড. জাব্বার খাটাক বলেন, আমরা এখন ভিন দেশ এবং এটিই বাস্তবতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থনে করাচিতে আমরা মিছিল করি এবং অনেকেই গ্রেফতার হই। আমাদের এক নারী সাংবাদিকের মামা সে সময় পাক সরকার কর্তৃক নিহতও হন। এ সময় ডেইলি নওসিজ করাচির প্রধান সম্পাদক জাহিদা আব্বাসী বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের ২ নারী সাংবাদিককে সিন্ধী উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
পাকিস্তানি সিপিএনই’র নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা বলেন, বাংলাদেশ কারো সাথে বৈরিতা চায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপর বিভিন্ন মহলের চাপ থাকার পরও তিনি বলেছেন যে, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবে না। তারা বলেন, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মানবতাবিরোধী ঘটনাবলির বিচার বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষ এ নিয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপকে মেনে নেবে না। একই সাথে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণও দাবি করে।
করাচি প্রেসক্লাবে বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময় করেন করাচি প্রেসক্লাব এবং করাচি সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। ছিলেন অনেক প্রবীণ সাংবাদিকও। তাদের অনেকেই ঢাকার স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকার সাংবাদিকদের স্বাগত জানিয়ে করাচি প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সিরাজ আহমেদ বলেন, ১৯৫৮ সালে করাচি প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। মার্শাল ল’র সময়ও ক্লাবের নির্বাচন হয়। কোনো কিছুই ক্লাবটির নিয়মিত নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না।
তিনি বলেন, করাচির সাংবাদিকরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ৭১ সালেও তারা বর্তমান বাংলাদেশে পাক সামরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানের বিগত সামরিক শাসনের সময়কালেও করাচিতে প্রায় ২শ’ সাংবাদিক গ্রেফতার হন বলে জানান তিনি।
করাচির বাঙালিদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করাচিতে ৮৫ সালের দিকে দুটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা বের হতো। এখন আর নেই। এখানকার ৮০ ভাগ বাঙালি মাছ ধরার কাজ করে। স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বিদ্যমান। করাচিতে বেঙ্গলী কলোনি নামে একটি এলাকা রয়েছে। এছাড়া ২০ থেকে ২৫ জন কাউন্সিলরও বাঙালি রয়েছেন।
পিটিভি করাচি স্টেশন অনেকটা বিটিভির মতো। পিটিভির করাচি কেন্দ্রের জিএম মোহাম্মদ আমীন মেমন বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে দেখান পিটিভির বিভিন্ন কার্যক্রম এবং স্টুডিওগুলো। সেই সাথে নানা প্রশ্নেরও জবাব দেন। তিনি জানান, পিটিভি’র মোট ১০টি চ্যানেল রয়েছে। ইংরেজিতেও তারা একটি চ্যানেল পরিচালনা করেন।  
করাচির পর ইসলামাবাদ হয়ে লাহোরে। ফুলে ফুলে সুরভিত লাহোরের জনসংখ্যা ১২ মিলিয়ন হলেও শহরটির আয়তন বিশাল। মূলত লাহোর হলো পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী। পাকিস্তানের শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্পকলা এবং রাজনীতিতেও পাঞ্জাবের মানুষের প্রভাবই বেশি। কারণ, জনসংখ্যার দিক থেকে এ প্রদেশ এক নম্বরে। এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সাইয়্যেদ শাহবাজী জানান, লাহোরসহ পাঞ্জাবের ৫টি বড় শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে রয়েছে তার্কিশ কোম্পানী। আর দেশটির অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চীন এবং তুরস্কের কোম্পানিগুলো কাজ করছে।
লাহোর প্রেসক্লাবের বাইরে দাঁড়িয়ে চা পান করছিলেন বেশ কয়েকজন ফটো সাংবাদিক। ঢাকার সাংবাদিক শুনে তারা কোলাকুলি শুরু করেন। এরপর প্রেসক্লাবের ভেতরে নিয়ে আপ্যায়নের জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। ব্যস্ততার কারণে পরে কথা হবে বলে বিদায় নেয়া হয়। এরপর বাংলাদেশী সাংবাদিকরা ৭৭ বছরের পুরনো নাওয়া-ই-ওয়াক্ত গ্রæপের পাকিস্তানের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক দ্য নেশন-এর কার্যালয় পরিদর্শনে গেলে পত্রিকাটির সম্পাদক সেলিম বোখারী বাংলাদেশী সাংবাদিকদের স্বাগত জানান। তিনি বলেন, দু’দেশের মানুষের মাঝে আরো বোঝাপড়া দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম পাকিস্তানে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশ নিয়ে সংবাদ প্রকাশে পাকিস্তানে কোনো বিধিনিষেধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইস্যু কাভার করা যাবে না, আমাদের এখানে কেউ এমন কথা বলে না। বরং দেশটির যে কোনো আলোচিত সংবাদ গুরুত্ব সহকারে পাকিস্তানি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। হলি আর্টিজানের ঘটনা সেদিন লিড স্টোরি হয়েছিল। তবে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে অর্কাস্টেট্রেড। তারা কোনো ঘটনায় কোরাস তুলে।
তিনি বলেন, নাওয়া-ই-ওয়াক্ত গ্রæপের উর্দু দৈনিক নাওয়া-ই-ওয়াক্ত, রয়েছে ওয়াক্ত টিভি, ইংরেজি দৈনিক দ্য নেশন, ফ্যামিলি ম্যাগাজিন এবং ফান ম্যাগাজিন। এতগুলো সংবাদ মাধ্যম চালাতে আর্থিক সংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনো ব্যবসায়িক গ্রæপের অংশ নই। আমরা সংবাদ প্রকাশে নীতিমালা মেনে চলি। ফলে পাঠকই আমাদের ভরসার স্থল। তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক তাদের গ্রæপে কাজ করে এবং তাদের ৯৯ ভাগই তরুণ।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে পাকিস্তানিরা কীভাবে দেখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোদী পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। কিন্তু তোমাদের প্রতি যা করছে তা তোমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অনুধাবন করতে পারবে।
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ৭১ সালের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা যেমন ভুগেছি, তোমরাও ভুগেছ। এ থকে উত্তরণের জন্য দুই দেশকেই পজিটিভ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করতে হবে। একে অপরকে মাফ করতে হবে ও মেনে নিতে হবে। কারণ, আমাদের একের প্রতি অন্যের অনুভূতি এক। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।
বেসরকারি দুনিয়া টিভি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এলাহী কান্ড। বিরাট ফ্লোরে কাজ করছে বিভিন্ন টিম। বাংলাদেশ টিমে থাকা টিভি সাংবাদিকরাও প্রতিষ্ঠানটির আকার দেখে মুগ্ধ হন। টিভি চ্যানেলটির রয়েছে আলাদা ক্রিয়েটিভ ফ্লোর। দুনিয়া গ্রæপের পত্রিকার জন্যও একই সাংবাদিক সংবাদ তৈরি করছেন। এসময় টিভি চ্যানেলটির কর্ণধার মিয়া আমীর মাহমুদ এবং অন্যান্যরা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগ ঘুরিয়ে দেখান বাংলাদেশী সাংবাদিকদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩
১৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ