Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিটিআরসির বিটিএস নীতিমালা

লক্ষ্য : সীমান্তে অপরাধ রোধ

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : সীমান্তে অপরাধ রোধে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে নীতিমালা করেছে সরকার। সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মায়ানমারের অধিবাসী ও দুষ্কৃতকারীরা অবৈধ সুবিধা নেয়ায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর (এনএসআই), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাথে আলোচনা করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সর্বশেষ সভায় বেইজ ট্রানসিভার স্টেশন (বিটিএস) নির্মাণে নীতিমালা চ‚ড়ান্ত করে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত বিটিএসের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ, অবৈধ কার্যকলাপ এবং মায়ানমারের অধিবাসী/দুষ্কৃতিকারীদের অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই এই নীতিমালা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত বিটিএসের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এবং মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনকে অবহিত করা হয়। বাংলাদেশের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্তার লাভ করেছে এমন তথ্য জানিয়ে ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে একটি চিঠি নিয়ে বিটিআরসি কাজ শুরু করে। ওই চিঠিতে বলা হয়, কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল ও সিটিসেল মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক মায়ানমারের অভ্যন্তরে ৩০-৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে। এ সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মায়ানমার অধিবাসী ও দুষ্কৃতকারীরা অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্য এসব এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়ে বিটিআরসির প্রচলিত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আনার কথা বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিশন বিটিএস স্থাপনে নতুন নীতিমালা/নির্দেশিকা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, কমিশনের সর্বশেষ সভায় (২০৩তম) বিটিএস স্থাপন নিয়ে নতুন যে নীতিমালা হয়েছে সেখানে ১১টি নির্দেশিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। নির্দেশিকার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোতে বলা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকা বলতে দেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে সীমান্ত রেখা হতে ভেতরে আট কিলোমিটার বোঝাবে। এই আট কিলোমিটারকে আবার শূন্য থেকে তিন কিলোমিটার এবং তিন থেকে আট কিলোমিটার এই দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়। কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধার জন্য দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে দুইভাবে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সীমান্ত অঞ্চল এবং এসব জেলা ব্যতীত অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চল। নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো সীমান্তবর্তী এলাকায় বিটিএস বসানোর জন্য অপারেটরদের বিটিআরসির কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে বিটিএসের ভৌগলিক তথ্য, এন্টেনার উচ্চতা, ধরণ, ডিরেকশন, টাইমিং অ্যাডভান্স ভ্যালু, বর্ডার হতে দূরত্ব, কাভারেজ এরিয়া, নিকটবর্তী বিটিএসের তথ্য ইত্যাদির উপর টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন প্রদান করবে।
অপারেটর যে স্থানে বিটিএস বসাতে চায় সেটি যদি সীমান্তের শূন্য থেকে তিন কিলোমিটার এর মধ্যে হয় তাহলে বিটিআরসি এটি স্থাপনের বিষয়ে মতামত প্রদানের অনুরোধ করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে জানাবে। ৩০ দিনের মধ্যে মতামত না দিলে স্বাভাবিক নিয়মেই বিটিএস স্থাপনে অনুমোদনের কার্যক্রম চলবে। আর নেতিবাচক মতামত দিলে কমিশন বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার শূন্য থেকে তিন কিলোমিটার এর মধ্যে বিটিএস স্থাপনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাবিষয়ক মতামত গ্রহণের জন্য প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর (এনএসআই), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নিকট চিঠি দেয়া হবে। সকল নিরাপত্তা সংস্থা হতে ছাড়পত্র পেলেই বিটিআরসি হতে বিটিএস স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হবে। তবে এসব এলাকায় বিটিএস স্থাপনের আবেদনটি কমিশনের নিকট বিবেচনাযোগ্য হলে সংস্থাগুলোর অনুমোদন সাপেক্ষে বিটিএস স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে।
এই চার জেলা ব্যতীত অন্য জেলার সীমান্তের শূন্য থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বিটিএস স্থাপনের ক্ষেত্রে বিটিআরসি বিজিবি সদর দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে বিটিএস স্থাপনের অনুমতি প্রদান করবে এবং অনুমতি পত্রের অনুলিপি অবগতির জন্য ডিজিএফআই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনএসআইকে প্রেরণ করবে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা সংস্থাসমূহের কোনো আপত্তি থাকলে তা এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে। আর চিঠিটি এসব সংস্থাকে পাঠানোর হলে পরবর্তী এক মাস পর অপারেটরগণ বিটিআরসিকে অবহিত করে বিটিএস স্থাপনের কাজ করতে পারবে। একইভাবে (চার জেলা ব্যতীত) সীমান্তের তিন থেকে আট কিলোমিটারের মধ্যে বিটিএস স্থাপনের আবেদনটি বিটিআরসির বিবেচনাযোগ্য হলে অনুমোদন দিবে। অনুমোদনের অনুলিপি সংস্থাগুলোর কাছে প্রেরণ করবে এবং তাদের মতামত এক মাসের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে। এই সময়ের পরে অপারেটরগণ নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে এবং কমিশনকে তা অবহিত করবে। বিটিএস ‘অন এয়ার’ (ট্রাফিক আগমন/নির্গমন শুরু) হওয়ার পর বিষয়টি কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স এবং স্পেকট্রাম বিভাগকে অবহিত করে বিটিএস পরিচালনা করবে।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিং এর ভিত্তিতে অপারেটরগুলো বিটিএস স্থাপন করলে বিটিআরসির অনুমোদন নিবে। এক্ষেত্রে একটি বিটিএস স্থাপনের দুই বছরের মধ্যে অন্য কোনো অপারেটর বিটিএস স্থাপন করতে চাইলে নিরাপত্তা সংস্থার ছাড়পত্র লাগবে না, কেবল তাদের অবহিত করলেই হবে। অপারেটরগণ কেবল পূর্বের পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদন করবে এবং ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিং ফরম এ ও বি এবং কমিশন থেকে ইনফ্রাস্টাকচার প্রোভাইডার এর অনুক‚লে প্রদান করা বিটিএস স্থাপনের অনুমতিপত্রের অনুলিপি কমিশনে প্রদান করবে। একইভাবে একবার জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিলে পরের বার আর অনুমতি লাগবে না। প্রথম অপারেটর বিটিএস স্থাপনের অনুমতি প্রাপ্তির পর বিটিএস স্থাপন না করলেও সেখানে দ্বিতীয় অপারেটর প্রথম অপারেটরের অনুমোদনক্রমে বিটিএস স্থাপন করতে পারবে।
এর আগে এই খসড়া নির্দেশিকার উপর মতামত গ্রহণের জন্য গত ১৪ আগস্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে একটি সভা করেছে বিটিআরসি। একই দিনে মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দেশের সকল মোবাইলফোন অপারেটরদের প্রতিনিধিদের নিকট থেকে নির্দেশিকার বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ