Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি!

ঢাকায় চিটিং সিটিং বিড়ম্বনা চলছেই

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীতে সিটিং চিটিং বিড়ম্বনার যেনো শেষ নেই। পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর সিটিংয়ের নামে চিটিং বাণিজ্য আবারও শুরু হয়েছে। বেড়েছে যাত্রীদের ভোগান্তি। চিটিং সিটিং বিড়ম্বনা নাটক ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ বাস মালিকদের। তারা এর নেপথ্যে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পরিবহন ব্যবসা দখলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার অভিজাত বাস আনার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার এক মেয়র। ভারতীয় টাটা কোম্পানির বাংলাদেশের এজেন্ট প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীও কয়েক হাজার ভারতীয় বাস আমদানি প্রায় চ‚ড়ান্ত করে রেখেছেন। সব মিলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের দোহাই দিয়ে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার নেপথ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কাজ করেছে বলে বেশ কয়েকজন মালিক জানিয়েছেন।
রাজধানীতে আবার চালু হওয়া সিটিং সার্ভিসে আগের মতোই মনগড়া ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গাড়িতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। গতকাল বন্ধের দিনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বাক-বিতন্ডা হয়েছে। একবার বন্ধ হওয়ার পর ফের চালু হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের দাপট অনেকটাই বেড়েছে। কয়েকজন যাত্রী জানান, অবস্থাটা এমনটাই দাঁড়িয়েছে যে, এখন আর বাড়তি ভাড়া নিয়ে তাদের সাথে কথাই বলা যায় না। ভাবখানা এমন যেনো ওরা সবকিছু জয় করে ফেলেছে। পরিবহন শ্রমিকদের দাপটের কারণে তাই এখনও সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে রয়েছে অধিকাংশ যাত্রী। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও বাসে ওঠার সুযোগ সীমিত থাকায় সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়ার পক্ষে তারা।
রাজধানীর মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী এক যাত্রী জানান, এভারেস্ট নামে গুলিস্তানগামী বাসে আগের মতোই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেটের ভাড়া নিয়েছে ১৫ টাকা। বাসে ভাড়ার চার্টও নেই। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের নিয়ম হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়ি ছাড়ার পরে আর কোথাও থেকে যাত্রী উঠানো যাবে না। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে। ওই যাত্রীর মতে, বিআরটিএ ঘোষণা দিয়ে অভিযান বন্ধ করায় এদের স্বেচ্ছাচারিতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সিটিং সার্ভিসই হোক বা লোকালই হোক সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি এরা নিতে পারে না। বিআরটিএ সেটা দেখলেও তো পারত।
যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া পাঁচ টাকা। কিন্তু ট্রান্সসিলভা ও ৮ নম্বর বাসে ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে শিকড় পরিবহন নিচ্ছে ৭ টাকা। অথচ বিআরটিএ-এর অভিযানের সময় এসব কোম্পানির বাস কিছুটা কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেছে। এখন প্রকাশ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের এক হেলপার বলেন, মালিকরা যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই ভাড়াই আদায় করছি। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কারণে অধিকাংশ বাসেই হেলপার, কন্ডাক্টরদের সাথে যাত্রীদের বাগি¦তÐা লেগেই আছে। প্রজাপতি পরিবহনের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য তিনি প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে উঠেছিলেন। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া পাঁচ টাকা দিতে গেলে বাসের কন্ডাক্টর ১০ টাকা দাবি করেন। কন্ডাক্টরের ওই যাত্রীকে বলেন, আপনি এয়ারপোর্ট নামেন আর জসীম উদ্দিন রোড নামেন ভাড়া দিতে হবে শেওড়া পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত ১০ টাকাই ভাড়া দিতে হয়েছে ওই যাত্রীকে। ওই যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, দিন দিন বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত এই সেক্টরে নজর দেয়া।
অনেক যাত্রী মনে করেন, মালিক সমিতির সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল মূলত একটি নাটক। বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে নেয়ার কৌশল। যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে কিছুদিন পর এমনিতেই ভাড়া বাড়িয়ে পরিবহন কোম্পানিগুলো পুনরায় সিটিং সার্ভিস চালু করত। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, বসুমতি পরিবহনের বাসে শেওড়া থেকে কালসী মোড় পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া রাখা হতো। এই পথের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে ভাড়া ১০ টাকা ২০ পয়সা হয়। অন্যদিকে, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিলগামী দীপন বাস সার্ভিস আবার সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। তবে তারা ভাড়া বাড়ায়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য আগে হাফ ভাড়া ছিল, এখন সেই সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হচ্ছে আগের মতো ১০ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিংয়ের নামে এখন প্রকাশ্যে চিটিং যেভাবে ফের চালু হলো তাতে দিনি দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহের ৫দিন চিটিং ও সিটিং বিড়ম্বনার নেপথ্যে ঢাকার পরিবহন ব্যবসা দখলের চেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন সাধারণ বাস মালিকরা। হঠাৎ করে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণার পর পরিবহন সেক্টরে সৃষ্ট নৈরাজ্য এবং যাত্রীদের ভোগান্তি এরপর আবার পিছু হটে সিটিং চালু করার পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাত আছে বলে মনে করছেন অনেক মালিক। একজন মালিক বলেন, মনে হচ্ছে সবকিছুই পরিকল্পিত। মানুষকে হয়রানিতে ফেলে বাস সার্ভিস উন্নত করার নামে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই ব্যবসা দখল করতে চাচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে ঢাকার এক মেয়র এক সাথে চার হাজার বাস আনার ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতীয় টাটা কোম্পানির এজেন্ট আরেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতা কয়েক হাজার ভারতীয় বাস আমদানি প্রায় পাকাপোক্ত করে রেখেছেন। সবকিছু করা হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মালিকদেরকে বিতাড়িত করার জন্য। মিরপুর রুটের এক মালিক বলেন, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে পরিবহন সেক্টরকে পুঁজি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা ঢাকার সবগুলো লাভজনক রুটে নিজেদের গাড়ি চালান। ঢাকার বাইরেও তারা কয়েকশ’ বিলাসবহুল বাস নামিয়ে একচ্ছত্র ব্যবসা করছেন। এখন আমাদেরকে বিতাড়িত করে করার জন্য হাজার হাজার বাস আনার ঘোষণা আসছে। দেখা যাবে যাত্রীদের ভোগান্তির দোহাই দিয়ে একদিন ওই সব প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাবে পরিবহন সেক্টর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ