Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে ভূ-গর্ভস্তর নিচে নামায় গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অসহনীয় তাপদাহ : খাল বিলে পানি নেই
আবু হেনা মুক্তি : জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রভাব এখন উপকূলীয় অঞ্চলে। গেল শীতে যেমন শীতের দেখা ছিল না, আর এখন প্রচন্ড খরতাপ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল। কিন্তু চৈত্রের শুরুতেই প্রচন্ড খরা অনুভূত হতে থাকে। এখন চলছে অসহনীয় তাপদাহ। বৃষ্টির দেখা নেই দীর্ঘদিন। তীব্র খরায় মাটির রস শুষে নিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতি এমনভাবেই রুক্ষ হচ্ছে, রুষ্ট হচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী পর্যন্ত ওঠানামা করছে। খাল-বিল কোথাও পানি নেই। যে কারণে গ্রীষ্মকালের শুরুতেই খুলনার ভূ-গর্ভস্থ পানি এতোটাই নিচে নেমে গেছে যে, গভীর নলকূপেও পানি আসছে না। তবে পানির স্তর কি পরিমাণ নেমে গেছে বা কারেন্ট পজিশন সম্পর্কে ওয়াসা কিছ্ইু বলতে পারছে না। শুধু নগরী নয়, বৃহত্তর খুলনার অধিকাংশ গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। উপকূলের এতো কাছাকাছি অবস্থানেও এমন বিপর্যয় গত এক দশকে কখনই দেখা যায়নি। পানির জন্য খুলনা মহানগরীসহ এ অঞ্চলে হাহাকার পড়ে গেছে। পানির স্তর মাপার যন্ত্র এবং লোকবল থাকা সত্তে¡ও খুলনা ওয়াসা এসব বিষয়ে কোন ভ্রæক্ষেপই করছে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট বাড়ছে। যে সকল স্থানে পূর্বে ১৪-১৬ ফুট পানি ছিল, সেটি গত এক সপ্তাহে ৩৩-৩৪ ফুটে নেমে এসেছে। ফলে নির্ধারিত স্তর থেকে পানির স্তর নিচে নামায় অনেক জায়গাতেই পানি উঠছে না। কোথাও কোথাও পানি উঠলেও তা পূর্বের তুলনায় অর্ধেক।
সূত্রমতে, নগরীর বেনীবাবু রোড, মির্জাপুর, শেখপাড়া, বানরগাতি, গোবার চাকা, বাগমারা, বসুপাড়া, মুসলমান পাড়া, সামছুর রহমান রোড, পশ্চিম বানিয়াখামার, জিন্নাহপাড়া, মৌলভীপাড়া, মিস্ত্রী পাড়া, ধর্মসভা, লবণচরা, মুজগুন্নী, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের পেছন এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় পানির স্তর এতটাই নীচে নেমে গেছে যে গভীর নলকূপেতো পানি উঠছে না বরং যারা পাম্পের সাহায্যে পানি তুলত তাদেরও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, পানির স্তর প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। অনেক গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। ওয়াসার সূত্র বলছে, প্রতিদিন তাদের দপ্তরে পানি না পাওয়ার অভিযোগ জমা পড়ছে। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে টেলিফোনে প্রতিদিনই অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা নির্বিকার। তাদের মতে, পানির ভূ-গর্ভস্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি মানন্ধাতা আমালে স্থাপিত উৎপাদক নলকূপের অধিকাংশই উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে। লবণাক্ততার কারণে পানির পাইপগুলো অনেকাংশেই মরিচা ধরে বøক হয়ে আছে। পানির যে একটা প্রেসার থাকে পাইপগুলো সেই প্রেসার নিতে পারছে না। ওয়াসা সূত্রে প্রকাশ, মহানগরীর প্রায় ১৬ লাখ লোকের দৈনিক পানির চাহিদা ৩ কোটি গ্যালন হলেও খুলনা ওয়াসা ১ কোটি গ্যালন সরবরাহ করতে গেলে হিমশিম খাচ্ছে। ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার ও বৃষ্টি কম হওয়ায় পানির ভূ-গর্ভস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উৎপাদক নলকূপগুলো স্বাভাবিক গতিতে কাজ করতে পারছে না। ফলে নগরীতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা স ম এনায়েত কবীর বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি, নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদীর উৎসমুখ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের তুলনায় তা স্তরে জমা না হওয়ার কারণে পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে যেসব এলাকার মানুষ ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল তারা প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পাচ্ছেন। তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে খুলনার ৯টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে গড়ে ৮-৯ ফুট পানির স্তর নেমে গেছে। খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তেরখাদা, রূপসা, ডুমুরিয়া উপজেলায় ১২ ফুট, পাইকগাছা উপজেলায় ১০ ফুট বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৯ ফুট, দাকোপ উপজেলায় ৬ ফুট, দিঘলিয়া উপজেলায় ১৭ ফুট ও ফুলতলা উপজেলায় সর্বোচ্চ ১৮ ফুট পানির স্তর নেমে গেছে। গড়ে প্রতিবছরই এ স্তর ২-৩ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, উপকূলীয় নদী বিধৌত এলাকাগুলোতে পানির স্তর কম নেমে গেছে। আর যেসব উপজেলায় নদী নালা খাল বিল কম সেখানে পানি বেশি নীচে নেমে গেছে। মহানগরীতেও আনুপাতিক হারে পানি স্তর অপেক্ষাকৃত বেশি নেমে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, সিটি কর্পোরেশন থেকে ওয়াসাকে পৃথক করা হয়েছে ৯ বছর আগে। খুলনার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ওয়াসা একটি নতুন নাম যোগ হয়েছে মাত্র। কর্পোরেশন আমলের তুলনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেড়েছে। পানি তীব্র সংকট নিরসনে প্রতিদিন ওয়াসার দপ্তরে একাধিক আবেদন জমা পড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে অচিরেই সংকট নিরসন হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ