Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কয়েকজন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ
বিশেষ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচ্চপর্যায়ের টিম। দুদক পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গতকাল (বৃহস্পতিবার) সুনামগজ্ঞের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেন।
এদিকে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) খলিলুর রহমানকে দিয়ে গঠিত এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গতকাল সুনামগজ্ঞে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। আগামী সপ্তাহে যাবেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) এ কে এম মমতাজ উদ্দিনকে আহŸায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিও আগামী সপ্তাহে সুনামগঞ্জ যাবেন। তবে পাউবোর এডিজিকে দিয়ে গঠিত এই তদন্ত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, দুদক পরিচালক বেলাল হোসেন বুধবার সিলেট জোনের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো: আবদুল হাই, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় ৭০ কোটি টাকার হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে বিল পেমেন্টে অনিয়ম হয়েছে কী না, কোন ঠিকাদার কাজ করছে, কাজের অগ্রগতি, কাজে গাফিলতি হয়েছে কী না, এসব বিষয় নিয়ে দুদক কর্মকর্তা তাদের কাছে জানতে চান।
সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষাবাঁধে পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেলেই আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।
সুনামগজ্ঞ প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা সার্কিট হাউজে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে দুদক পরিচালক বেলাল হোসেন বলেনÑ দুদক নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি থাকে আমাদের দেন, তাহলে সেটিও আমরা কাজে লাগাতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমাদের তদন্তের পাশাপাশি দুদকের ইঞ্জিনিয়াররাও অধিকতর তদন্ত করবেন। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর যদি দেখা যায় যে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা বলেন, সম্পূর্ণভাবে কাজ না করে আইনগতভাবে বিল উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শিরিন পারভিন, উপ-পরিচালক রেবা হালদার ও উপ-সহকারী পরিচালক রণজিত কর্মকার।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে সিলেট পৌঁছে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. নাজমানার খানুমের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন দুদক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা। বৈঠকে তারা হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, হাওর রক্ষাবাঁধের অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানে গত ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক বেলাল হোসেনকে প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন দুদকের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি। এছাড়া দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামানকে অনুসন্ধান তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রায় সবকটি হাওরের বোরো ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। সরকারি হিসাব মতে, ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ এক হাজার হেক্টর ধানী জমি তলিয়ে যায়। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তবে সরকারের এ হিসাব মানতে নারাজ কৃষক ও হাওর বিশেষজ্ঞরা।
তাদের দাবি, তলিয়ে গেছে প্রায় ২ লাখ হেক্টরের ফসলি জমি, যার ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা। হাওরডুবির পর থেকেই বাঁধ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার ও জেলাকে দুর্গত ঘোষণার দাবিতে জেলার সর্বত্র প্রতিনিয়ত মানববন্ধন-সভা-সমাবেশ ঝাড়ু মিছিল করে আসছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-জনতাসহ বিভিন্ন সংগঠন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ