Inqilab Logo

সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের সফট স্কিল সংকট প্রকট

বিআইবিএম’র পর্যালোচনা

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : একজন ব্যাংক কর্মকর্তার যোগাযোগ, সৌজন্যতা, নমনীয়তা, সততা, আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ, টিমওয়ার্ক, কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং নেতৃত্ব মনোভাব হল সফট স্কিল। হাভার্ড বিজনেস স্টাডি অনুযায়ী, ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে সফট স্কিলে ৮০ শতাংশ দক্ষতা থাকতে হবে। আর হার্ড স্কিলে এর পরিমাণ ২০ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের সফট স্কিল সংকট প্রকট। কিন্তু এ খাতটির কর্মীদের সফট স্কিলের ওপর মাত্র ৪ শতাংশ প্রশিক্ষণ হয়েছে। আর হার্ড স্কিল প্রায় ৯৬ শতাংশ।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬ সালের ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে হার্ড স্কিল হল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড পেমেন্ট, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, শিক্ষাগত সনদ, ট্রেজারি অপারেশন, ঋণ ব্যবস্থাপনার মতো দক্ষতা। যা ব্যাংকিং খাতের একজন কর্মীর মোট দক্ষতার ২০ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এক্ষেত্রে উল্টো চিত্র। এতে আরও বলা হয়েছে, সিআইবির আদলে ব্যাংক কর্মীদের তথ্যভাÐার গড়ে তুলতে হবে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মনস্তাত্তি¡ক পরীক্ষা নেয়ার পাশপাশি নৈতিকতা যাচাই করতে হবে। একই সঙ্গে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে।  
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক  ইয়াছিন আলি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এহসানুল হক এবং ওয়ান ব্যাংকের অতিরিক্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সরকার।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের মানব সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকের নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা এবং দিবা যত্ম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে।  তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে মানব সম্পদ বিভাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭-০৮ সালে আর্থিক সংকটের পিছনে মানব সম্পদ বিভাগের কিছু ভুল নির্দেশনা অনেকাংশে দায়ী।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, মানব সম্পদ বিভাগকে শুধু বদলির জন্য ব্যবহার না করে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতের মানব সম্পদ বিভাগের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করছে বিআইবিএম। যা আগামী দিনে গতিশীল ব্যাংকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে সৎলোক প্রয়োজন। খারাপ ব্যাংকে ভালো লোক নিয়োগ পেলে মুনাফায় ফিরতে পারে। আবার বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো ব্যাংকে খারাপ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়ায় ক্ষতি হতে পারে। তিনি ব্যাংকের নতুন নিয়োগ পাওয়ায় কর্মকর্তাদের দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাংকারদের পুনরায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকারদের সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কমযোগ্যতা সম্পন্ন লোককে বেশি বেতনে নতুন ব্যাংকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যা ব্যাংক খাতের জন্য বিপদজ্জনক। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে গতিশীলতা আনতে প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে সকল সুবিধাসহ মেধা সম্পন্ন অনুষদ নিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকারদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়াতে ডিপ্লোমা এবং অন্যান্য প্রফেশনাল পরীক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। ব্যাংকারদের নীতি-নৈতিকতা মেনে কাজ করার ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলি বলেন,  ব্যাংকিং খাতে চাকরি অনিশ্চয়তা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জব সিকিউরিটি না থাকলে এ খাতটি পিছিয়ে পড়বে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এহসানুল হক বলেন, ব্যাংকে মানব সম্পদ বিভাগের বড় চ্যালেঞ্জ যোগ্য এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ। নিয়োগের সময় অনেক তদবির আসে। এতে সঠিক জনবল বাছাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।  
ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬ সালের পর্যালোচনা দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুদুল হক, প্রভাষক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং আল-আরাফা ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মাযহারুল ইসলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ