Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্য এশিয়ার ইসলামপন্থীরা সহিংস হামলার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৪ পিএম, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

আশ-শারক আলআওসাত : রুশ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে যে, সেন্ট পিটার্সবার্গে মেট্রো স্টেশনে সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এক কিরগিজ নাগরিক। নববর্ষের প্রাক্কালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রেইনা নাইটক্লাবে বোমা হামলার পর এ হামলার ঘটনা ঘটল। সে হামলাটি চালিয়েছিল চীনের একজন উইঘুর যে, কিরগিজস্তান থেকে তুরস্কে এসেছিল। সহিংসতার সর্বশেষ প্রবণতা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে উগ্রপন্থার সাথে মধ্য এশিয়ার ইসলামপন্থীরা সম্পৃক্ত হচ্ছে। এ দু’টি হামলা যুগপৎভাবে দু’টি বিষয়কে তুলে ধরে। এক- কিরগিজস্তান ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে উগ্রপন্থী নিয়োগের জটিল দিক এবং স্থানীয় উগ্রপন্থীদের সিরিয়া ভ্রমণের সুবিধা প্রদান করে সন্ত্রাসী হুমকি থেকে রেহাই পেতে রাশিয়ার চেষ্টা।
এ মাসের গোড়ার দিকে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এক কিরগিজ নাগরিক সেন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রো স্টেশনে নিজেকে উড়িয়ে দিলে ১৩ জন নিহত হয়। কয়েকদিন পর রাশিয়ার পুলিশ ওই শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে একটি বোমা পেয়ে তা নিষ্ক্রিয় করে।
রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স সোকোভ আশারক আলআওসাতকে বলেন, সেন্ট পিটার্সবার্গ হামলা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাসী হুমকি রুশ নেতৃত্ব ও সম্প্রদায়ের জন্য এখনো উদ্বেগের বিষয়। এই প্রথম সন্ত্রাসীরা রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় রাজধানীতে হামলা চালিয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ও এ বছরের ফেব্রæয়ারিতে আরো দু’টি ভয়াবহ হামলা ব্যর্থ করে দেয়া হয়।
দি ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক রিপোর্ট মোতাবেক ৮০ জন নারীসহ ৩৫০ জন কিরগিজ সিরিয়াতে গিয়েছে। রেডিও লিবার্টি ইউরোপের আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়, সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে যুদ্ধ করা কিরগিজদের বড় অংশই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী।
আইএস বাহিনীর বিভিন্ন পদে কর্মরতদের মধ্যে কাজাখ, কিরগিজ, উজবেক, তাজিক, তুর্কমেন ও উইঘুরসহ মধ্য এশিয়ার ২ থেকে ৪ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে। সোকোভ বলেন, রাশিয়া ও কাজাখস্তানের মধ্যকার সীমান্ত হচ্ছে বিশে^র দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত। এ সীমান্তে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার গভীর অভ্যন্তর থেকে বিভিন্ন গ্রæপের লোকজন এ সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ায় আসছে ও তারা তুলনামূলক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে।
গত দু’বছরে মধ্য এশিয়া থেকে আইএসে যোগদানকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্তে¡ও আইএস যোদ্ধা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মধ্য এশিয়াকে ইউরোপ ও তিউনিসিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে না।
মধ্য এশিয়ার মানুষদের উগ্রপন্থী গ্রæপগুলোর সাথে যোগদানের পিছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা, শিক্ষা ও দারিদ্র্য এবং সম্পদের পর্যায়, সামাজিক মাধ্যমের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং তরুণদের জন্য সুযোগের অভাব।
ক‚টনীতিকরা আইএস জঙ্গিদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। প্রথমে রয়েছে কোনোদেশের সেসব নাগরিক যারা দেশের সরকার ও রাজনীতিকদের বিরোধী। তারা দরিদ্র হবে এমন নয়, তবে তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে। বিষণœ ও হতাশ তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশীদার হয়ে সিরিয়ায় লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নিজেদের পরিবর্তনের জন্য আদর্শ লড়াইয়ে নিজেদের হিরো বলে মনে করতে থাকে। তাদের কেউ কেউ মনে করে যে তারা এক অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মুক্তির জন্য লড়াই করছে, অন্যদিকে অন্যরা মনে করে যে ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা তাদের মর্যাদাজনক জীবন দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং একমাত্র ইসলামিক স্টেটই তাদের ভবিষ্যত উন্নত করতে পারে।
যারা অত্যাচারিত বা অত্যাচার থেকে পালিয়েছে তাদের নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি গঠিত। ডিপ্লোম্যাট বলে, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের মত দেশগুলোর শাসকেরা অত্যাচারী এবং তারা বিরোধীদের অস্তিত্ব অনুমোদন করে না। এই শ্রেণির কিছু সদস্য, বিশেষ করে যারা অত্যাচার থেকে পালিয়েছে, তারা আইএস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে এক নিরাপদ আশ্রয় বলে বিবেচনা করে।
তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে তারা অন্তর্ভুক্ত যারা উন্নত জীবনের সন্ধানী। তারা প্রায়ই অর্থ ও নতুন চাকরির মিথ্যা প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়। আইএস তাদের অনেককে উচ্চ বেতন দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেয় যা ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে যা এ অঞ্চলের জন্য প্রচুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে পায় যে এ প্রতিশ্রæতি মিথ্যা।
সোকোভ বলেন, সেন্ট পিটার্সবার্গে হামলা এর সাথে আল নুসরা ফ্রন্ট ও মধ্য এশিয়ার সদস্যদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়। জানা গেছে যে সন্দেহভাজন হামলাকারী কিরগিজস্তানের ওশ অঞ্চল থেকে এসেছিল যেখানে উজবেক বংশোদ্ভ‚তরা বাস করে। সোকোভ উল্লেখ করেন যে সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোার সাথে যোগদান করা মধ্য এশীয় ও ককেশাস অঞ্চলের নাগরিকরা মস্কো ও মধ্য এশীয় কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
ডিপ্লোম্যাট উল্লেখ করে যে, সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো রশিয়াতে বাস করা মধ্য এশীয় নাগরিকদের রিক্রুট করতে আগ্রহী। যে সব উদ্বাস্তু প্রায়ই স্বল্প বেতনে কাজ করে বা বেকারত্বের শিকার তাদের কেউ কেউ তাদের সাথে যোগ দেয়।
এ পরিস্থিতির মধ্যে কিছু লোক চেচেনদের প্রভাবে পড়ে যারা মসজিদে উগ্রপন্থীদের রিক্রুট করে। এ সব লোক মস্কো, গ্রোজনি বা তুরস্কের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত সিরিয়া পৌঁছে।
ডিপ্লোম্যাট বলে, চতুর্থ শ্রেণির আইএস যোদ্ধারা সে সব লোকদের নিয়ে গঠিত যারা ধর্মীয় পটভূমি থেকে এসেছে বা ইসলামের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় জ্ঞান সাধারণভাবে ন্যূনতম, যে কারণে ইসলাম অনুসারীরা নিয়োগকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়। তারা তাদের উদ্বুদ্ধ করে যে আইএস সব মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং রক্ষা করবে।
সর্বশেষ শ্রেণি হচ্ছে কিশোরী ও তরুণীরা। তারা ভালোবাসা ও বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রæতিতে আকৃষ্ট হয়। তারা প্রায়ই সামাজিক মাধ্যম দ্বারা প্রলুব্ধ হয়।
২০১৬ নালে রয়টারসের প্রকাশিত এক নিবন্ধ অনুযায়ী রুশ কর্তৃপক্ষ সিরিয়া যেতে ইচ্ছুক হবু জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করার মাধ্যমে উগ্রপন্থীদের হুমকি কমিয়ে আনতে কাজ করছে। মস্কো স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার হুমকি নির্মূল করতে চাইছে এবং সে জন্যই গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সিরিয়া গমনের বিষয়টি উপেক্ষা, এমনকি সহযোগিতা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ