Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

তারুণ্যনির্ভর বিএনপির ঢাকার দুই নগর কমিটি

‘ক্লোন’ নেতা আমদানিতে ক্ষোভ-অসন্তোষও আছে

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 

স্টাফ রিপোর্টার : দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। ঘোষণা করা হয়েছে নতুন কমিটি। দীর্ঘদিন পরে ঘোষিত কমিটিতে তারুণ্যের জয়জয়কার। প্রবীণরাও বঞ্চিত হয়নি। বরাবরের মতো ক্ষোভ-অসন্তোষের ছাপও রয়েছে। সিনিয়র-জুনিয়রিটির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কেউ কেউ। ‘ক্লোন’ নেতার আমদানি ঘটেছে নতুন কমিটিতে। সব ছাপিয়ে তারুণ্য নির্ভর কমিটির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হওয়া নগর বিএনপির দু’টি কমিটি আশার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমটি গঠন করে ক্ষোভ হাতাশা দূর করতে চায় নবগঠিত কমিটির নেতারা। নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নেত্রীর (খালেদা জিয়া) তত্ত¡াবধানে একটি সত্যিকার অর্থে ভালো কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত পদ এখনো শূন্য আছে সেখানেও কাউকে নেয়ার সুযোগ থাকবে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ক্ষোভ, দুঃখ থাকবে না। বরং ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে সবাইকে নিয়েই আগামীর আন্দোলন করা হবে। তাছাড়া যারা পদ পায়নি, তাদের এখনো সুযোগ আছে। সে ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই অংশ উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। দক্ষিণে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি এবং কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এবং ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি এবং অবিভক্ত নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পল্লবী এলাকার সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে দু’টি যুগ্ম সম্পাদক পদ খালি রাখা হয়েছে। আর আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কমিটি ঘোষণা পর গতকাল দিনব্যাপী নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নগরের বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত ওই দুই কমিটিতে অনেক অপরিচিত নেতৃবৃন্দকে রাখা হয়েছে। যাদেরকে বিগত আন্দোলনগুলোতে কখনো দেখা যায়নি। কিংবা নেতাকর্মীদের সাথেও তাদের কোনো প্রকার যোগাযোগ ছিল না। শুধু তদবীর আর সিন্ডিকেটনির্ভর রাজনীতির কারণে গুরুত্বপূর্র্ণ এই কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। আবার যে সকল নেতৃবৃন্দ বিগত আন্দোলনে নিজে মাঠে থেকেছেন, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেককে পদায়ন করা হলেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
নতুন কমিটিতে সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে নেতাকর্মীরা জানান, দক্ষিণের ১৯টি যুগ্ম সম্পাদক পদের তালিকায় কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম টিপুর স্থান ১০ নম্বরে। তার উপরে ৯ জনই মহানগরের রাজনৈতিক কর্মকাÐে তার কনিষ্ঠ। এ ছাড়া দক্ষিণের সহ-সভাপতি পদেও সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। নবী উল্লাহ নবীর সিনিয়র করা হয়েছে ইউনুস মৃধাকে, সাজ্জাদ জহিরের উপরে ফরিদ উদ্দিন, নাসিমা আখতার কল্পনা, আবু মোতালেব, আরিফুর রহমান আরিফের উপরে তানভীর আদেল খান বাবু, মোশাররফ হোসেন খোকনের উপরে ইশরাত মির্জা ও নিতাই চন্দ্র ঘোষের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণের চকবাজার থানা বিএনপির অহŸায়ক আনোয়ার পারভেজ বাদলকে তার কমিটির সদস্য সচিব খতিবুর রহমান খোকনকে যুগ্ম সম্পাদকের তালিকায় আগে রাখা হয়েছে। একইভাবে অ্যাডভোকেট ফারুকুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন খান, আলমগীর হোসেন যারা ২০ থেকে ৪০ বছর রাজনীতি করছেন তাদের জুনিয়রদের দেয়া হয়েছে উচ্চপদে।
দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে ক্ষোভ-অসন্তোষ অনেকাংশে কম। সভাপতি পদ পাওয়া এম এ কাইয়ুম দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলা জটিলতার কারণে বিদেশে অবস্থান করায় তার পক্ষে সংগঠন চালানো কঠিন বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিথ্যা মামলা কারণে যারা দূরে আছেন তাদের মধ্যে এম কাইয়ুমকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। দূরে থাকলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবেন। অতীত ইতিহাস বলে শুধু যে কাছে থাকলেই ভ‚মিকা রাখা যাবে তা নয়।
এদিকে কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নগরীর দুই নেতা মির্জা আব্বাস এবং সাদেক হোসেন খোকার মধ্যে কমিটিতে পদ নিয়ে ব্যবধান বেড়েছে। শীর্ষ পদগুলো বলতে সব পেয়েছে খোকাপন্থীরা। পাশাপাশি অন্য পদগুলোতেও আব্বাসপন্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছে খোকার অনুসারীরা। তবে মহানগর কমটিতে কখানো না থেকে এবং এই দুই বলয়ের কেউ না হয়েই রহস্যজনক কারণে পদ পেয়েছেন। গতকাল দিনভর তাদেরকে ‘ক্লোন’ নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। যাদের বিএনপির সাথে কোনো সখ্যতা বা পরিচয় নেই বলে জানা গোছে। কেউ কেউ ভ‚ঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে দেশ-বিদেশে সে সংগঠনের কমিটি দিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। দলীয় নেতাদের মতে, এসব অচেনা নেতা অর্থে বিনিময়ে লবিং করে বিএনপির মহানগর কমিটিতে বিভিন্ন পদ পেয়েছেন। আর এর সঙ্গে মহানগর সংশ্লিষ্ট দলটির এক প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সদ্য ঘোষিত বিএনপির মহানগর কমিটির অচেনা নেতারা হলে, সহ-সভাপতি আলহাজ শামছুল হক (উত্তরা), সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী লিটন (সূত্রাপুর), হাজী নাজিম (কোতোয়ালি), ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া (ধানমন্ডি), আলী আহম্মেদ (নিউ মার্কেট)। এরা কখনোই নগর বিএনপির রাজনীতিতে ছিলেন না।

 



 

Show all comments
  • M.A. Kalam ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:০৪ পিএম says : 0
    good
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ