পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভ্যালু ওয়াক : ব্রিটেন ও আরো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বহুশত কোটি ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে (সিপিইসি) যোগ দিতে আগ্রহী। চীন তার বিনিয়োগ ৫৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার মধ্যে বিশ^ব্যাপী কমপক্ষে ৫২টি দেশ সিপিইসিতে যোগ দিতে চায়। রাশিয়াও এতে যোগ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটেন সরকারীভাবে চীন ও পাকিস্তানের যৌথ প্রকল্প সিপিইসি-তে তাদের এক প্রধান অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তান অন্যান্য ইইউ রাষ্ট্রের সাথে সিপিইসি-তে যুক্তরাজ্যের যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও এই গেম চেঞ্জার প্রকল্পে যোগ দানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী গ্রেগ হ্যান্ডস এ মাসের প্রথম দিকে বলেন যে যুক্তরাজ্য এবং বাকি ইউরোপ ও এশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র প্রতিষ্ঠায় দু’ মিত্রদেশকে সাহায্য করার জন্য বিশে^র প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাজ্য চীন ও পাকিস্তানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায়।
গ্রেগ হ্যান্ডস অঙ্গীকার করেন যে তার দেশ বেইজিং ও ইসলামাবাদ উভয়ের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্রিটেন এ অঞ্চলের নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। সিপিইসির উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্য হচ্ছে এ অঞ্চলে কানেক্টিভিটির গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিসহ মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিপুল বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা।
গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেন, ইতোমধ্যে ৫২টি দেশ সিপিইসি-তে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কিন্তু বিশ^ব্যাপী বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ সুবিধার পাশাপাশি বৈশি^ক প্রভাবের বিবেচনায় ব্রিটেন হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর একটি।
স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান
সিপিইসিতে ব্রিটেনের যোগদানের ইচ্ছাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পরিকল্পনা , উন্নয়ন ও সংস্কার মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, ইইউর আরো কিছু দেশ ও মধ্য এশিয়া এ গেম চেঞ্জার প্রকল্পের অংশীদার হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। চীন সিপিইসি প্রকল্পে তার বিনিয়োগ ৫৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নী করায় এ প্রকল্প আরো বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগকে হিসেবে ধরা হলে এ প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ অনেক বেশী দাঁড়াবে। চীনের বর্ধিত বিনিয়োগ পাকিস্তানের অবকাঠমো ও বিদ্যুত প্রকল্প উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। সমগ্র প্রকল্পের ৩৪ বিলিয়ন ডলার শুধু বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০১৫ সালে সিপিইসি-তে চীনের প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের অবকাঠামো প্রকল্প ও শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগের অতিরিক্ত আরো ৩৫ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়।
ব্রিটিশ বিনিয়োগ হবে এক বড় ব্যাপার
এ মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ ইবনে আব্বাস সিপিইসি-তে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং উদাহরণমূলক যা এ ধরনের উচ্চাকাক্সক্ষী প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের এক ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আব্বাস বৈশি^ক কর্পোরেট বাণিজ্যের বিপুল সুযোগ সৃষ্টি এবং পাকিস্তানের অর্থনীতির তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতির জন্য সিপিইসির প্রশংসা করেন। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সিপিইসির অবদান হচ্ছে তার ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার। সিপিইসির কারণে যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে বিশে^র সেরা ৫টি স্টক এক্সচেঞ্জের একটি বলে ঘোষিত হয়েছে।
ব্রিটেনের মত বিশে^র প্রভাবশালী একটি দেশের সিপিইসি-তে যোগদান এ অঞ্চলে ভোক্তা বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি কানেক্টিভিটি , ব্যবসা ও অর্থনৈতিক সুবিধার উন্নয়নে বিরাট আঞ্চলিক প্রভাব ফেলবে।
পাকিস্তানে চীনের টহল জাহাজ, ক্রুদ্ধ ভারত
সিপিইসি চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে শুধু ক’টনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কই উন্নয়ন করেনি, সামরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি করেছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের নৌসীমা রক্ষার পাশাপাশি সিপিইসির আওতাধীন সামুদ্রক পরিবহনের সুরক্ষায় চীন পাকিস্তানকে তৃতীয় সামুদ্রিক টহল জাহাজ পাঠিয়েছে।
সিপিইসি দ্বারা উৎসাহিত হয়ে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা পাকিস্তানের এক নং শত্রæ ভারতের কাছে উদ্বেগজনক। চীন যদিও গত মাসে ঘোষণা করেছে সিপিইসির কারণে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ বিষয়ে তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না, বহু ভারতীয়ই উদ্বিগ্ন যে সিপিইসি প্রকল্প রক্ষার লক্ষ্যে চীন পাকিস্তানের পক্ষে কাশ্মীর বিরোধের আন্তর্জাতিক সমাধানের জন্য অগ্রসর হতে পারে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) লেঃ জেঃ (অব) নাসের খান জানজুয়া বলেন, ভারত যদি তার দু’ বৃহৎ আঞ্চলিক শত্রæর গেম চেঞ্জার প্রকল্পে যোগ দেয় তাহলে সে লাভবান হতে পারে। যাহোক, সিপিইসির অংশীদার হতে হলে নয়া দিল্লীকে কাশ্মীর সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
রাশিয়া সিপিইসিতে যোগদানের কাছাকাছি
সিপিইসি-তে যোগদানে যুক্তরাজ্যের আগ্রহ প্রকাশ এই প্রথম নয়। এ বছরের শুরুর দিকে অপরিসীম সুযোগ কাজে লাগাতে ব্রিটিশ সরকার সিপিইসি-তে বিনিয়োগের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে শুরু করে। ব্রিটেন সিপিইসিতে যোগদানের জন্য এ মাসে আগ্রহ প্রকাশ করা একমাত্র দেশ নয়। রাশিয়ার বৃত্তম অংশীদার দেশ বেলারুশও এই বহুশত কোটি ডলার প্রকল্পে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন ইসলামাবাদে বেলারুশ প্রতিনিধি পরিষদের চেয়ারম্যান ভøাদিমির আন্দ্রেইনচেনকোর সাথে বৈঠকে মিলিত হন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, সিপিইসিতে বেলারুশের অংশগ্রহণ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন ঘটাবে।
বেলারুশের সিপিইসিতে যোগদান হবে রাশিয়ার সিপিইসিতে যোগদানের বড় ধরনের ইঙ্গিত। রাশিয়ার সাথে গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান ভাবে উষ্ণ হয়ে চলেছে। একদিকে চীন-পাকিস্তান-রাশিয়া পরাশক্তি ত্রয়ী জোটের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে জল্পনা কল্পনা চলছে তখন সিপিইসি-তে রাশিয়ার যোগদান তিন দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করবে। এ ঘটনা ভারতকে ক্রুদ্ধ করবে। ভারত মস্কোর প্রধান সামরিক সহযোগী।
রাশিয়া কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারে
বহু বিশেষজ্ঞই বিশ^াস করেন যে সিপিইসি-তে রাশিয়ার যোগদান ভারত ও পাকিস্তানকে দীর্ঘস্থায়ী ক্শ্মীর সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে , আর তা হলে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়ন ঘটবে।
ভারতের সাথে চীন ও পাকিস্তানের বৈরিতার প্রেক্ষিতে রাশিয়া দু’দেশের জন্য ভারতের কাছে পৌঁছনো ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি পথ হতে পারে। নয়া দিল্লী পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার উষ্ণ সম্পর্কে ক্রুদ্ধ হতে পারে। বে রাশিয়া এখনো ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও কৌশলগত অংশীদার। দুই আগুনের মাঝে মস্কোর অবস্থান পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বহু প্রত্যাশিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে সহায়তা করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।