Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেড়েই চলছে দল ও অঙ্গ সংগঠনে কলহ-বিরোধ

মহিউদ্দিন-নাছিরের ঐক্য দূর অস্ত

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘নাছির ভাই ইক্কা আইয়ুন’ (নাছির ভাই এদিকে আসেন) বলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে কাছে টেনে হাত উঁচিয়ে ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই নগরীর আউটার স্টেডিয়াম পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তার অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে সিজেকেএস’র উদ্যোগে নির্মাণাধীন সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ঘেরাও করে ভাঙচুর চালাতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
টানা কয়েকদিনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ-মিছিল, পাল্টা বক্তব্য-বিবৃতির পর সোমবার শহীদ মিনারে দুই নেতার হঠাৎ হাত মেলানোর ঘটনায় যারা মনে করেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের বিরোধ শেষ তারা এখন প্রমাদ গুনছেন। আউটার স্টেডিয়ামের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর সবাই বলছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী আর আ জ ম নাছিরের ঐক্য বাস্তবেই দূর অস্ত। মহানগর আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ দুই নেতা বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যেও। ছাত্রলীগ-যুবলীগে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে কলহ-বিরোধ, রেষারেষি।
ছাত্রলীগের বিরোধে যে কোন সময় সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামে পুলিশের সাথে সংঘাতের ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিজেকেএস ও পুলিশের জোড়া মামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে যে কোন সময় নগরীতে সংঘাতের আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন।
নিজেদের কর্মসূচিতে ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে গতকাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েও পরে তা স্থগিত করা হয়। ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের অনুরোধে আপাতত এ বিক্ষোভ সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে অতিরিক্ত পৌরকর আদায় এবং আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। ১০ এপ্রিল লালদীঘি ময়দানে জনসভা করে আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা, অযোগ্যতার অভিযোগ এনে তাকে অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর ঘোষণা দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই সমাবেশে তিনি মেয়র নাছিরকে খুনী উল্লেখ করে ১২ জন খুনের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করেন। পরদিন আ জ ম নাছির উদ্দীনও পাল্টা জবাব দেন। সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরেরা মেয়রের পক্ষ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্ত্রীসহ অনেককে খুনের অভিযোগ তুলেন। ১৫ এপ্রিল নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে আ জ ম নাছিরের পক্ষে শোডাউন করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরেরা।
আর এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে দুই নেতা হাত মিলান এবং ঐক্যের ঘোষণা দেন। সভায় সভাপতির বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী আগামীতে ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ চলার ঘোষণা দেন। এরপরই পাশে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে মহিউদ্দিনের ‘নেতৃত্বে’ কাজ করার ঘোষণা দেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র নাছির। দুই নেতার ‘ঐক্যের’ ঘোষণায় তাৎক্ষণিক স্বস্তি নেমে এলেও ২৪ ঘণ্টা না যেতে আউটার স্টেডিয়ামে সহিংস ঘটনায় ফের উত্তেজনা দুই শিবিরে।
এদিকে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী এ দুই নেতার কর্মকাÐে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দুই নেতাকে বিভেদ ভুলে এক হয়ে যাওয়ার ক্রমাগত নির্দেশনা আসলেও বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী,এমপি, নেতারাও বিব্রত। তবে কেউ প্রকাশ্যে এসব বিষয়ে মুখ খুলছেন না। তাদের অনেকে এসব বিরোধ থেকে কৌশলে নিজেদের দূরে রাখছেন।
আগামী ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন আহŸান করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রঘোষিত এ কর্মসূচিকে সামনে রেখে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি শোডাউন ও একে অপরকে ঘায়েল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ওই প্রতিনিধি সম্মেলনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইস্যুর চেয়ে স্থানীয় কোন্দলই প্রাধান্য পাবে।
ছাত্রলীগের ৫শ’ জনের বিরুদ্ধে ২ মামলা
নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫শ’ নেতাকর্মীকে আসামী করে দু’টি মামলা হয়েছে। সুইমিংপুল প্রকল্প এলাকায় ভাংচুরের ঘটনায় ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম স্বপন ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এসআই মহিউদ্দিন রতন বাদী হয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন।
কোতোয়ালি থানার এসআই রোকেয়া পারভীন জানান, দুই মামলায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে দুই মামলাতেই আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামের ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুট জায়গায় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেএকএস) তত্ত¡াবধানে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জায়গায় অবরুদ্ধ করে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। গত ১০ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে সুইমিং পুল করার উদ্যোগ বন্ধ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে আউটার স্টেডিয়াম টিন দিয়ে ঘিরে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিজেএকএস।
এরপর মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ সভাপতি ইমু, সাধারণ সম্পাদক রনি, সহ সভাপতি রুমেল বড়ুয়া রাহুলসহ কয়েকজন গত রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। সেখানে সুইমিং পুলের কাজ বন্ধ করে সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ