Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অসহায় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিটিং সার্ভিস নিয়ে ভোগান্তি কমেনি

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকায় গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’ নিয়ে নৈরাজ্য থামেনি। গতকাল মঙ্গলবার বাস সংকটে আগের দিনের মতোই সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। বাস মালিকদের প্রভাবশালী উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিটিং সার্ভিস বন্ধ প্রসঙ্গে পিছু হটে বলেন, মালিক সমিতির দুই-তিন জনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি তাদেরকে বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছেন বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাইকে নিয়ে বসে জনস্বার্থে বাস্তবভিত্তিক নিয়ামক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি। পরিবহন খাতের প্রভাবশালীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায় আমরা কি আমাদের দেশের বাস্তবতায় কি জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সাথে যারা জড়িত, তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী।  
সিটিং সার্ভিস বন্ধের তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানীতে চাহিদার তুলনায় বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। এতে করে সকালে অফিস সময়ে হাজার হাজার যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। মাঝে মধ্যে দু’একটা বাসের দেখা মিললেও অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা ছিল কয়েক গুণ। এতে করে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে অনেকেই বাসে উঠতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা করেছে। আলাপকালে ভুক্তভোগী যাত্রীরা পরিবহন সেক্টরের এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলার জন্য পরিবহন মালিকদের দায়ী করেছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য দূর করার আহŸান জানিয়েছে। সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ ধর্মঘটে যেসব বাস ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর রুট পারমিট বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একদিকে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গতকাল হাতেগোনা যে সব বাস চলাচল করেছে সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকার করায় যাত্রীদেরকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যাত্রীদের শায়েস্তা করতে বাসে বাসে মাস্তান বসিয়ে রেখেছিল মালিকপক্ষ। তবে মালিক সমিতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলকারী বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। চলন্ত বাস থেকে যাত্রীদের নামানোর জন্য লাঠি হাতে সক্রিয় দেখা গেছে বেশ কয়েকজন যুবককে। জানতে চাইলে একজন চালক বলেন, ওরা আমাদেরকে গাড়ি চালাতে দিচ্ছে না। মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। ওরা কারা? জানতে চাইলে ওই চালক বলেন, ওরা পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী।  
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধে ১৬ এপ্রিল থেকে অভিযান চালানো হবে। গত রোববার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরুর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা-মারামারির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে। অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি না ছাড়ায় যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। গত সোমবারও বাস না পেয়ে বিভিন্ন মোড়ে যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এক-তৃতীয়াংশ গাড়ি রাস্তায় নামেনি। পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাশ আওয়ারে যে পরিমাণ গাড়ি থাকে সে তুলনায় কম, তবে গাড়ি আছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি একটু সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত। পত্র-পত্রিকার লেখালেখিও আমার চোখে পড়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হবে। সড়কে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ‘সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা’ হচ্ছে- যাত্রীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের কিছু আছে কি না সেটা রিভিউ করলে বলা যাবে, সেখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হবে। তিনি বলেন, জনস্বার্থ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেটা বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ও মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছি। বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে সকালে (মঙ্গলবার) ডেকে কথা বলেছি। পরিবহনের মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করলেও গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যখন ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান করতে চাই তখন অফ রোড হয়ে যায়, দুর্ভোগ হয়। দুই ধরনের সমালোচনায় তোপের মুখে পড়ি আমরা। দায়টা আসে আমাদের ঘাড়ে। ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে রাস্তায় গাড়ি নামে না, সেটা আরেকটা বিষয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিআরটিসি পুরো সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। পরিবহনখাতের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে প্রভাবশালীরাও আছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর ভাষ্য, তাদের কারণে অনেক সময় বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, যারা এসব বিষয়ে তাগিদ দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবে, তারাই আবার কখনও কখনও এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে এবং ভোগান্তিটা হয় পাবলিকের, সাধারণ মানুষের। এটা হলো বাস্তবতা, এটাকে অস্বীকার করা বা ইগনোর করার কোনো উপায় নেই, বাস্তবতা স্বীকার করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। পরিবহনখাতে জড়িতরা সরকার বা আপনার চেয়ে প্রভাবশালী কি না- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী এই কথটা ঠিক নয়। সরকার যখন এটা বাঁধন-কষণ শুরু করবে তখন ফসকা গেড়ো হয়ে যায়, তখন আপনারও বলেন সরকার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।
প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও পরিবহন খাতের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি  বলেন, আমি প্রভাবশালী মন্ত্রী শব্দটাই খারাপ, মন্ত্রী মন্ত্রীই। নো, নো প্রভাবশালী, ইয়েস আই অ্যাম অ্যাকটিভ নট ইনফ্লুয়েনসিয়াল। আমি সফলও বলি না, আমি ইনফ্লুয়ন্সিয়ালও বলি না, আই অ্যাম অ্যাকটিভ, প্রো-অ্যাকটিভ, নট রি-অ্যাকটিভ। আমি কোনো দিনও আমাকে সফল বলিনি। কাদের বলেন, এই দেশের পরিবহন সেক্টর কি আগের সরকারের তুলনায় এখন ভালো নয়? এই দেশের রাস্তাঘাট কি আগের থেকে ভালো নয়? দুই একটি ব্যাপার নিয়ে বলবেন যে মন্ত্রী সাহেব আপনি একেবারেই ব্যর্থ। ব্যর্থতার ভাগ আছে, সব তো ব্যর্থ না। এই যে রাস্তাঘাট এ রকম দেখেছেন কোনো দিন? এদেশে মেট্রোরেল হচ্ছে, এদেশে পদ্মাসেতু হচ্ছে- এগুলো তো আগেও চেষ্টা ছিল। এদেশে ফোরলেইন হয়েছে। তিনি বলেন, এদেশে রাস্তাঘাটে আজকে ৯০ বা ৮৫ পারসেন্ট মিটার সিস্টেম চালু করিনি? কিছু ভুলত্রæটি আছে, চালু তো করেছি। ডিজিটাল নম্বর প্লেট, এগুলো কি চালু করেনি, সবই ব্যর্থ কেন বলছেন? সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও থাকতে পারে স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব সাফল্য নয়, কিন্তু সাফল্যের ভাগটা বেশি। অবশ্যই আপনারা যদি রিয়েলেস্টিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে দেখেন স্বীকার করতে হবে। ভালো কাজের প্রশংসা করেন, যেটা ভালো নয় সেটার সমালোচনা করুন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:০২ পিএম says : 0
    এই খবরের হেডিংটা আমাকে যারপরনায় খুশি করেছে। আমি ধন্যবাদ জানাই বার্তা সম্পাদকে এমন একটা সুন্দর হেডলাইন দেয়ার জন্য। সাংবাদিকরা মন্ত্রী কাদের সাহেব সঠিক প্রশ্নই করেছেন প্রভাবশালী মন্ত্রী হয়েও...... কিন্ত তিনি নিজেও যে একসময়ে সাংবাদিক ছিলেন সেটা তিনি এর জবাবে নমনীয়তার সাথে অস্বীকার করে আবার তিনি যে একটা বিরাট কিছু সেটাও শুনালেন এই বলে আগে থেকে এখন ভাল নয় কি??? আমি বলছি না...... আগের চেয়ে কোন অংশেই সড়ক ব্যবস্থা সারা বাংলাদেশে ভাল নয় এটাই মহা সত্য। কারন আপনি কাদের সাহেব ভালই জানেন যে, কজের ধারাবাহিকতা আছে এবং সেই ভাবে নতুন নতুন কাজও হয় এটা কোন বাহাদুরী নয় এটাই ধারাবাহিকতা। কিন্তু বাহাদুরী হবে তখনই যখন কোন একটা সমস্যা পূর্ব থেকে সমাধান হচ্ছে না সেটা সমাধান করা এটাই হচ্ছে বাহাদুরী। যেমন আমাদের রেল মন্ত্রী করছেন। আপনি একসময়ে সাংবাদিক জগতে বিচরণ করে নিজেকে লিখার জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কাজেই লিখা এখন আপনার কাছে কোন কঠিন কিছু নয়, আবার রাজনীতিবিদ হওয়ায় লিখাটাকেই কথায় রুপ দিয়ে মানুষের মনে প্রবেশ করেছেন কিন্তু একটাও কাজ কি করতে পেরেছেন??? যানজট আমাদের সময় ছিল না বললেই চলে কারন তখন ঢাকায় এত মানুষ ছিল না। এখন প্রিতিনিয়ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু সেই তুলুনায় ধারাবাহিকতা মূলক উন্নয়ন করতে পারছেন কি??? না পারেন নাই... এমনকি যানজটকে একযায়গায় রাখতেও পারেননি দিন দিন যানজোট বেড়েই চলচ্ছে। তাহলে আমার নজরে আপনি একজন অকৃতকার্য্য মন্ত্রী আর কিছুই নন; আপনার অন্ধ সমর্থকরা আপনাকে বাহবা দিবে এতে যদি আপনি ভেবে থাকেন “আমি কি হনুরে”...... অবশ্যই আপনি এমনই ভাবেন সেটা আপনার কথা ও ব্যবহারে প্রমানিত। আপনি বলেছেন আপনি আপনার সমালোচনা পড়ে থাকেন আমি বলব না... কারন আমি ইনকিলাবে লিখি এটা আপনার দল পড়েনা কিন্তু আপনার মন্ত্রী হিসাবে এই পত্রিকা বেশী করে পড়া উচিৎ কিন্তু সেটা আপনি করেন না কারন আমি যে প্রায় প্রতি দিন আপনার সমালোচনা করি সেটা আপনি দেখেন না আমি নিশ্চিত। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ আপনাকে ও সবাইকে সত্য কথা বলার ও সততার সাথে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ