Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সরকার ফের একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার আবারো ‘একতরফা খেলা’র মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেয়া হয়েছে, বিএনপির প্রত্যেকটি মামলা আবার নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এই সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই এই মামলা-মোকদ্দমা করে সে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায়। আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, আসুন না খোলা ময়দানে, সমান্তরাল ময়দানে একসাথে খেলি। সেটার মধ্যে তারা নেই। তারা আমাদের সবাইকে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে তারা একতরফা খেলতে চায়। এই খেলা কখনোই এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না- স্পষ্ট করে আমরা বলতে চাই।

দমননীতির পথ পরিহার করার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া উচিৎ। আমাদের দেশনেত্রীসহ নেতা-কর্মীদের সমস্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা উচিৎ যাতে করে আমরা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি।’

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ভারত থেকে আসা নদীর ঢল ও অতিবৃষ্টিতে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওড় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলহানীর বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। গত ১৫ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব ওই এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

হাওড় অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশে দুর্গত হাওড় অঞ্চলের পাশে দাঁড়াতে আমরা ১৫ এপ্রিল নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় গিয়েছিলাম। আমরা যেটা দেখে এসেছি, এটা খুবই হৃদয়বিদারক। আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের হাওড় এলাকার প্রায় তিন হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

এসব এলাকায় লাখ লাখ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল। দুর্গত মানুষরা কিভাবে খেয়ে-পুরে বাঁচবে, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে- তা ভেবে মানবেতর দিন যাপন করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছি ও নেতা-কর্মীদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি।

নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের হাওড় অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে কমিটি গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করে পরবর্তী ফসল না হওয়া পর্যন্ত তাদের ত্রাণ প্রদান, পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য সুদ বিহীন কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেলসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীসমূহের ড্রেজিং ইত্যাদি দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। উজানের ভারত ওইস নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়ায় অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকিয়ে দিচ্ছে।

এবছর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে ওই এলাকার নদীর বাঁধসমূহ ‘যথাযথ সংস্কার’ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নতুন করে হয়রানি করার অভিযোগ করে সম্প্রতি কারাগারে যাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু, নাটোর জেলা নেতা বাবলু চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান মেম্বার, নওশাদ আলী মাস্টারের মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।

একই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার যুবদল-ছাত্র দলের কর্মীসভায় পুলিশি হামলায় ৩০ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় জানান তিনি।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, তবে সেজন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সকল দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে রেখে দেবেন, নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবেন- আর বলতে যে তোমরা নির্বাচনে যাও। তাহলে আমরা নির্বাচনে কীভাবে যাবো।

আমরা বার বার বলছি, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক কোনও স্পেস বা জায়গা নেই। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিলে আমরা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। সকল দলের সমান সুযোগ ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর প্রসঙ্গে

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভুটানের সঙ্গে আমাদের একটা জরুরী বিষয় আছে সেটা হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। আমাদের আগে প্রস্তাব ছিলো, ট্রাই পা ট্রাই- নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীন- এসবের সঙ্গে চুক্তি করা দরকার ছিলো। ভারত কখনো দ্বি-পাক্ষিক ছাড়া কখনোই অন্য কোনো দেশকে আনতে চায়নি, যার ফলে টোটাল বিষয়টা করা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর তখনই সফল হবে যদি দেখি ভারতের মতো উনি খালি হাতে ফিরে আসলেন, দিয়ে আসলেন সব কিছু- তখন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মো. আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, বিলকিস শিরিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, রাবেয়া আলী, রফিকুল ইসলাম হেলালী, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, নেত্রকোনা জেলা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা হায়দার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হাসান আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ