Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এস সি ও-র পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করতে যাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান

এ হবে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ : রাশিয়া

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চায়না.ওআরজি.সিএন : সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এস সি ও) হচ্ছে চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান ও উজবেকিস্তানকে একত্র করা একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ফোরাম। জুনে এ ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তান ও ভারত এ ফোরামের পূর্ণ সদস্য পদ লাভের সব কাজ সম্পন্ন করবে। রাশিয়া বলেছে, এ হবে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
এ ফোরামের আসল নাম সাংহাই পাঁচ। ১৯৯৬ সালে পাঁচ সদস্যের ফোরাম চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ নিরসনে সাহায্য করে এবং অস্ত্র হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ করে। ২০০১ সালে এর পুনঃনামকরণ করা হয় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এস সি ও। ঐতিহ্যগতভাবে এস সি ও রাজনৈতিক/ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে কাজ করছে যার গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে মধ্য এশিয়ায় গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টা ও সাইবার সন্ত্রাস।
এ প্ল্যাটফর্মের তত্ত¡ সব সময়ই সাংহাই চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঐকমত্য, পারস্পরিক সম্মান ও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। গুরুত্ব আরোপ করা হয় পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়ন অভিযাত্রায়। গ্রæপের কাঠামোর অধীনে সকল সদস্যই সমান।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সম্প্রতি বলেন, আগামী জুনে আস্তানায় অনুষ্ঠেয় এস সি ও রাষ্ট্রপ্রধান পরিষদের বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানকে পূর্ণ সদস্য পদ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। এটি হবে নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা এস সি ও-র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদাকে উন্নীত করবে এবং এর নিরাপত্তা সক্ষমতাকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে শক্তিশালী করবে।
এ সম্প্রসারণের পর এস সি ও বিশে^র ৪০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে। সে সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি প্রতিদ্ব›দ্বী দেশ সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক খেলোয়াড়র এস সি ও-র ছাতার নিচে আসার ফলে এর প্রভাব বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আদর্শিকভাবে সংলাপ ও সীমান্তে আস্থা নির্মাণকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে এস সি ও ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের যথাযথ প্ল্যাটফর্ম বলে প্রমাণিত হতে পারে। অতীতে এস সি ও রাশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরে চীনকে এবং মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলোকে তাদের সীমান্তে প্রচলিত বাহিনী মোতায়েনে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
এছাড়াও এস সি ও-র সামরিক মহড়াগুলো ভারত ও পাকিস্তানকে মহড়া, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ও তথ্য ভাগাভাগিতে সক্ষম করবে যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফোরামের এ প্রস্তাবিত সম্প্রসারণকে ২০১৬ সালে এস সি ও শীর্ষ বৈঠকে একটি নির্দেশিত প্রক্রিয়া বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ভারত ও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি ফোরামের উন্নয়নে এক নতুন ও পরিপক্ককরণ পর্যায় এবং সদস্য দেশগুলোর উচিত সাংগঠনিক কাঠামো উন্নয়নের আলোচনা করা। তিনি বলেন, তিনি উভয় দেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী এবং আশা ব্যক্ত করেন যে এস সি ও-তে এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি বৈশি^ক বিষয়ে ফোরামের ক্রমবর্ধমান সংশ্লিষ্টতা জোরদার করবে। তিনি সংস্থার গুরুত্ব ও উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা বলেন।
সমালোচকরা ভারত-পাকিস্তানের প্রস্তাবিত অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, দু’দেশের মধ্যকার অব্যাহত ঝগড়া সংস্থার সমতাপূর্ণ মেজাজ ও সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, ঐকমত্য অর্জনকে কঠিন করবে এবং এস সি ও-র ২০২৫ সালে তার নির্ধারিত উন্নয়ন কৌশলের দিকে অগ্রযাত্রা মন্থর করবে।
এস সি ও-র মূল গ্রæপের বাইরে প্রথম পাকিস্তান সদস্যপদ লাভের জন্য ২০০৫ সালে আবেদন করে। তার অন্তর্ভুক্তি আঞ্চলিক বাণিজ্য, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার ইতিবাচক ভ‚মিকাকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফ্ল্যাগশিপ করিডোর চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে গেছে। এটি হচ্ছে সিএআরএস-র জ্বালানি সম্পদের ভবিষ্যত পরিবহন সংযোগ এবং একটি গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্প (টিএপিআই) ইতোমধ্যেই নির্মীয়মান।
বলা নিষ্প্রয়োজন যে, পাকিস্তান ফোরামের অন্য সদস্যদের সাথে তার সম্পৃক্তিতে কোনো সমস্যা দেখছে না। এস সি ও-র অধীনে সন্ত্রাস দমন কাঠামো নিরাপত্তা বিষয়ে মধ্য এশীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার সুযোগ দেবে, দেশটি রাশিয়ার কাছ থেকে আরো সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতা পাবে এবং চীনের সাথে যোগাযোগ প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সাথে এস সি ও-র সাদৃশ রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা জাতিসংঘের মতই হয়ে উঠতে পারে যেহেতু তা আরো সদস্য গ্রহণ করছে এবং নিরাপত্তার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। বলা হয়েছে, এস সি ও কোনো সামরিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে না, বরং এ জোট গঠিত হয়েছে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ মেনে চলতে।
ফোরামের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে বিদেশি মাধ্যমে প্রায়ই বিতর্ক হলেও দশ বছর আগে যখন তা বিশ^ রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করে তখনি এর পূর্বমুখিতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়। একজন সাংবাদিক লিখেনÑ সম্মিলিত জোটে প্রাচ্য রেশ, এশীয় প্রতীকÑ স্তেপের দামাল হাওয়া, মরুভূমির বাতাসের মর্মর ধ্বনি, সোনালি ঈগলের ডানা ঝাপটানি ও সাপের হিসহিসানির সমন্বয় ঘটেছে। মনে হয়, বহুবিধ মেরুকরণের এস সি ও ধারণা পাশ্চাত্যকে বিভ্রান্ত করছে যারা একমুখি বৈশি^ক শৃঙ্খলার ধারক।
এস সি ও-র লক্ষ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সামঞ্জস্য রক্ষা করা। আস্তানায় এস সি ও নিরাপত্তা পরিষদ সচিবদের ১২তম অধিবেশনে সংস্থা নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার, পারস্পরিক রাজনৈতিক সমর্থন ও কৌশলগত আস্থা জোরদার করতে সম্মত হয়। চীন একটি উগ্রপন্থা-দমন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় যা বৈধভাবে তিনটি অপশক্তি উগ্রপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলা করবে এবং সাইবার নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণেও কাজ করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ