Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আল জাজিরা : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়। সিরিয়ায় তার কোনো ভবিষ্যত নেই। সিরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ হিজাব কাতারের রাজধানী দোহায় আল জাজিরার বার্ষিক ফোরামে এ কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে হিজাব বলেন, এটা সিরিয়া সরকারের মিত্রদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে যে নতুন সমীকরণের আলোকে বাশার আল আসাদের পক্ষে আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রে নয়া প্রশাসন আসার পর এ বিষয়টি প্রতীয়মান হচ্ছে।
শনিবার আল জাজিরা ফোরামের ১১তম বর্ষ শুরু হয়েছে। এবার সেøাগান হচ্ছে ‘রাষ্ট্র সঙ্কট ও মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত।’ এতে আরব বিশ^ যে বৃহত্তম উভয় সঙ্কটের সম্মুখীন তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিপুল সংখ্যায় রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
হিজাব ২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরুর পর তার পক্ষ ত্যাগ করেন। তিনি সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের সাথে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা হলেও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা এবং সিরিয়া সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা করেন।
এ মাসের গোড়ার দিকে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুনে রাসায়নিক গ্যাস হামলায় কমপক্ষে ৮৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেক পশ্চিমা নেতা এ হামলার জন্য আসাদকে অভিযুক্ত করেন।
এ গ্যাস হামলার প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আসাদবাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রথম সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাদেল আবদুল গণি ফোরামে আল জাজিরাকে বলেন, রাসায়নিক হামলার পর মার্কিন প্রশাসনের হামলা সব হিসেব পাল্টে দিয়েছে। জেনেভায় শেষ দফার আলোচনায় আমরা বুঝতে পারি যে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সবার মধ্যে অনীহা রয়েছে, বিশেষ করে ইউরোপীয়দের মধ্যে। তিনি বলেন, এখন আমেরিকানরা সিরিয়া বিষয়ে একটি কৌশল প্রণয়ন করছে যার মধ্যে সিরিয়ায় ইরান বা আসাদ অন্তর্ভুক্ত নেই। সম্ভবত এ পর্যায়ে নয়, কিন্তু আসলেই কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। সিরিয়া এখন অগ্রাধিকার।
দু’দিনের ফোরামে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্কট ও এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মোকাবেলার উপর মনোনিবেশ করা হয়।
প্যানেলিস্টদের আরব বসন্ত, এ অঞ্চলে তরুণদের ভূমিকা, এ অঞ্চলে আঞ্চলিক শক্তির উত্থানের প্রেক্ষিতে আরবদের করণীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করার কথা।
আরব বসন্ত ছিল একটি ট্র্যাজেডি
২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ সৃষ্টির পর আরব অঞ্চল বিশেষভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আরব বসন্তের লক্ষ্য ছিল দশকের পর দশক ধরে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারীদের ক্ষমতাচ্যুত করা।
পরবর্তীতে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৪ সালে তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট এলাকা দখল করে নেয় এবং এ অঞ্চলে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। আজ এ অঞ্চলের কয়েকটি রাষ্ট্রে দেশব্যাপী লড়াই চলছে। এগুলো হল : সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেন।
দোহা ইনস্টিটিউট পর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ-এ ইতহাসের অধ্যাপক ইউসুফ চুয়েইরি বলেন, গণঅভ্যুত্থানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, এ অঞ্চলের সরকারগুলো কর্তৃক একটি থেকে আরেকটিকে সরিয়ে রাখার কারণে আরব বসন্ত ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, আরব বসন্ত এক মারাত্মক বিপর্যয়, এক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে যা আরব দেশগুলো ও জনগণের দুর্বলতার আবরণকে সরিয়ে দিয়েছে।
সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদেক আল মাহদী আরব লীগের উদাহরণ তুলে ধরে আরব প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তির অভাবের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, আরব লীগ হচ্ছে সদস্য দেশগুলোর নির্র্জীবতার আয়না। মওসুমি ফ্যাশন হিসেবে বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়, আর আরব স্বার্থ নিয়ে কথা বলছে অনারবরা।
আল মাহদী তুরস্ক, ইরান ও ইসরাইলের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অঞ্চলে যে সব দেশ প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তাদের ব্যাপারে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করা আরব দেশগুলোর জন্য বিচক্ষণতা হবে। তিনি বলেন, আমাদের তুরস্ক ও ইরান এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য শক্তি কেন্দ্রের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি থাকা প্রয়োজন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কয়েকটি আঞ্চলিক ও বিশ^শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে ছায়াযুদ্ধে পরিণত হয়। এ বছর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সপ্তম বছরে পড়েছে যার কোনো সমাধান এখনো দৃশ্যমান নয়।
একইভাবে ইরাকে এক দশক আগে ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও পরবর্তী দখলদারিত্বের পরিণতিতে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ইরাক তারপর থেকে ধারাবাহিক সহিংসতার শিকার এবং এখনো আইএসআইএল-এর (ইসলামিক স্টেট বা আইএস) সাথে লড়াই করছে।
লিবিয়াও পাঁচ বছর ধরে সশস্ত্র সংঘাত ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার শিকার। সেখানে এখন দু’টি সরকার। কোনো নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিকভাবে প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন।
আর ইয়েমেন? বিশদ না বলে এক কথায় বলা যায় যে দেশটি দুর্ভিক্ষের কিনারে পৌঁছেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ