পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১৩ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবী) সমমান প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারির পর কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যগণ এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন। চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় মহাপরিচালকের কার্যালয়ে গতকাল (রোববার) সকাল ১০টা থেকে এই বৈঠক শুরু হয়ে বেলা দেড়টায় শেষ হয়। বৈঠকে সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করায় মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা হয়। পাশাপাশি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয় এবং ৬ বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাসমূহে চলতি শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে গ্রহণসহ আরো কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে মাদ্রাসা বোর্ডের কর্মকর্তাগণ সনদ বিষয়ে প্রাপ্ত এই অর্জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে আরো দৃঢ় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতী রূহুল আমীন, মুফতী আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতী শামসুদ্দীন জিয়া, মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুসলিহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মুফতী নূরুল আমীন, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জী, মাওলানা কাজী আখতার হোসাইন, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মাওলানা আব্দুল জাব্বার প্রমুখ।
বৈঠকে বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের সরকারী মানগ্রহণ বিষয়ে গত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ওলামায়ে কেরামের বৈঠক নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে বলেন, বেফাকসহ অপরাপর কওমি মাদ্রাসা বোর্ডসমূহের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকেই সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হয়েছে এবং দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান গ্রহণে আমাদের পূর্বঘোষিত শর্তে সামান্যতমও ছাড় দেওয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আমাদের পূর্ব ঘোষিত যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেই যে সনদের মান প্রদান করা হয়েছে, তাতেই আমরা যে নীতিতে অবিচল অটল ছিলাম, সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, সবসময় ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি কাজ করে আসছি। এই ঐক্য গড়ে তোলার স্বার্থে অনেক সময় আমার নিজস্ব মতামত ও সিদ্ধান্তেও ছাড় দিয়ে থাকি। কারণ, ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ মজবুত অবস্থান ছাড়া বর্তমানের বহুমুখী ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা অনেক কঠিন।
বৈঠকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, কওমি মাদ্রসার সনদ নিয়ে বেফাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কওমি বোর্ডসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই আমি চেষ্টা করে আসছি। আর সেই চেষ্টার সুফল হিসেবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় বেফাকসহ অপরাপর ছয় বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। তার সুফল হিসেবেই কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত কোন কমিটি, কমিশন, বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন ও মাদ্রসা পরিচালনায় কোনরূপ সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও এবং আরবি)এর সমমানের দাবী অর্জিত হয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে অনেক আগে থেকে। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণœ রেখে সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি সবসময়। তিনি বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের কওমি মাদ্রসাসমূহ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলেই গত ১১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকেই উলামায়ে কেরাম সম্মানিত হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেওবন্দের উসূল ও কওমি স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণœ রেখে আমাদের প্রত্যাশা মতে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্স-এর সম-মান দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্থাপিত গ্রীক মূর্তি অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রæতি প্রদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমী উলামায়ে কেরামের গৌরবোজ্জ্বল ভ‚মিকার উল্লেখসহ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রশংসনীয় ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।