পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শান্তিপূর্ণভাবে সারা দেশে পয়লা বৈশাখ পালিত -আইজিপি
উমর ফারুক আলহাদী : এবার নতুন বছর বরণ অনুষ্ঠানে দেশের কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবেই সারা দেশে উদযাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা।
পুলিশ জানিয়েছে, শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বরিশাল সিলেট মহানগরীসহ দেশব্যাপী বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো বাংলা নববর্ষ। প্রশাসনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে পয়লা বৈশাখের দিনব্যাপী কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হায়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর রমনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও পার্ক লেক ও হাতির ঝিলে ছিল প্রচুর মানুষের ভিড়। নারী-শিশুসহ দিনভর ঘুরে বেড়িয়েছেন নগরবাসী।
সিলেট মহানগরী পুলিশ জানায়, নববর্ষের আনন্দ-উচ্ছ¡াসে মেতে উঠেছিলেন সিলেটের আবালবৃদ্ধবনিতা। সারা দেশের মতো সিলেটেও প্রাণের উৎসবে দিনব্যাপী মাতোয়ারা ছিল মানুষ। পুরনো দিনের গøানি ভুলে শিকড়ের উৎসবকে বরণ করা হচ্ছে সিলেট জুড়ে। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির এই উৎসবকে নির্বিঘœ ও নিরবচ্ছিন্ন করতে দিনব্যাপী কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। নিরাপত্তা রক্ষায় মাঠে কাজ করছেন প্রায় দুই হাজার র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ইনকিলাবকে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হলো এবারের পহেলা বৈশাখ। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় দেশের প্রত্যেকটি জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। তিনি বলেন, পোশাকধারী র্যাব পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর সতর্ক অবস্থানের কারণে ক্রিমিন্যালরা কোনো ধরনের অঘটন ঘটাতে পারেনি।
তিনি বলেন, জনগণও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একদিকে যেমন কঠোর মনোভাব নিয়ে জনসাধারণের নিরাপত্তায় ডিউটি পালন করেছে, আবার বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষকে তারা দিয়েছে বিভিন্ন সেবা।
গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় বর্ষবরণ। দিনভর রমনা পার্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। এছাড়া শাহবাগ ও টিএসসি এলাকায়ও প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল। রমনা পার্কসহ যেসব জায়গায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়েছে, প্রত্যেকটি জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিল ব্যাপক তৎপর। রমনা পার্কে প্রত্যেকটি গেটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি ও তল্লাশি করে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হয়। এছাড়াও পার্কের ভেতরে ও বাহিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। পহেলা বৈশাখের আরেকটি বিশেষ ইভেন্ট ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুলিশকে কয়েক স্তরে সাজানো ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তা।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নির্বিঘœ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনুষ্ঠানস্থলে আসা দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে ঢাকা মেট্টোপলিটন এলাকায় ডিএমপি’র নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছে নগরবাসী।
রমনা পার্কের অনুষ্ঠানে আসা শিলা রহমান ওই দিন জানান, কিছুটা আতঙ্ক এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। তারপরেও ছেলে-মেয়ে স্বামীসহ এসেছি। এখানে এসে পুলিশের তল্লাশি ও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতা দেখে আমরা খুশি। পুলিশ কয়েকটি স্থানে রাস্তা পারাপারেও সহযোগিতা করেছে। শিলা রহমান জানান, তিনি মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকার বাসিন্দা।
প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে আসা ব্যবসায়ী তারেক হাসান। তিনি জানান, জঙ্গি আতঙ্কের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রথমে বাসা থেকে বের হইনি। তারপর স্ত্রী রোমানা ও মেয়ে ইভানার ইচ্ছার কাছে হার মানি এবং সকাল ১০টায় রমনা পার্কে প্রবেশ করি। রোমানা বেগম জানান, এবার খুব শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পেরেছেন।
পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তায় রমনা পার্ক, রবীন্দ্র সরোবর, শাহবাগ, টিএসসিসহ বেশকিছু স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছিল। পুরো রমনা পার্ক সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা ছিল। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
এছাড়াও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত এবং পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুত ছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন সফল করতে।
পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কোথাও কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দেশের আপামর জনসাধারণ এবারের পহেলা বৈশাখ সুন্দর, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখরভাবে পালন করেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে গোটা পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছিল। মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালাকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে কাজ করছে এসএমপি। নিরাপত্তার ব্যাপারে সামান্যতম ছাড় দিতেও নারাজ এসএমপি।
নগরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্থলে তল্লাশি করে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করাচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে সিলেটের সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে। আনন্দলোক’র আয়োজনে এ অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ পথে কঠোরভাবে তল্লাশি করে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, পহেলা বৈশাখে নগরীর সর্বত্র কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল পুলিশ। একই সাথে র্যাব ও গোয়েন্দা সদস্যরাও পুলিশের সাথে কাজ করছেন। পোশাকধারী পুলিশের সাথে সাথে সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা নগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।