পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : মাঝারি ধরনের তাপদাহ বইছে রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে। তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। এর সাথে মরা পদ্মার তপ্ত বালির বিশাল চর আরো অস্বস্তিতে ফেলেছে। গতবারের চেয়ে এবার বালুচরের বিস্তৃতি আরো বেড়েছে। গত বছর উত্তর কোলে কিছুটা পানি থাকায় মানুষ খানিকটা স্বস্তি পেয়েছিল। এবার নদীর ক্ষীণধারা সরে গেছে অনেক দূরে। প্রচÐ খরতাপে দুপুরের মধ্যচরের বালি ভাজা ভাজা হয়ে যাচ্ছে। বাতাসে গরম বালির ঝাপটা এসে শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে সহজেই। চোখে-মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী মানুষ পড়েছে বেশি বিপাকে। গরম বাতাসের ঝাপটা প্রথমে তাদের উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে আকাশজুড়ে কালো মেঘ ক্ষণিকের জন্য দেখা দিলেও নামছে না কাক্সিক্ষত বৃষ্টি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছে মানুষ। তাপমাত্রার কাঁটা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। বৈশাখে তা যে আরো উপরের দিকে যাবে তার আলামত এখনই মিলছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশাখে যেমন তাপমাত্রা বাড়ছে আবার ঝড়বৃষ্টিও হবে। সেই আগস্ট মাস থেকেই নদীতে পানিতে টান ধরতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের প্রাণ পদ্মা নদী ক্ষণিকের জন্য যৌবন ফিরে পেলেও ফের শুকিয়ে যাবার সাথে সাথে শাখা নদ-নদী খাল বিল পুকুর দীঘিতে টান পড়েছে। শীত মওসুম থেকেই নদী খাল বিলের উপর চাষাবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের। আর এসব আবাদ করতে গিয়েও কোথাও কোথাও নদী চরের বুক ফুড়ে সেচ যন্ত্র বসিয়ে সেচ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা-বিধৌত অনেক স্থানেই পানির স্তর চলে গেছে অস্বাভাবিক রকমের নিচে। পানির অপর নাম জীবন হলেও সেচতো দূরে থাক খাবার পানি সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বিস্তার ঘটছে আর্সেনিকের। কোথাও কোথাও অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, গভীর নলকূপেও আর পানি উঠছে না। যেগুলোর উঠছে তাতেও চাপ কম। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বাধাইড় ইউনিয়নকে পানি সঙ্কটপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা দিয়েছে। এখানে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সত্তরটি গভীর নলক‚প সেচ কাজ চালিয়ে এলেও এখন সেগুলো ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অনেকগুলো ইতোমধ্যে নষ্ট হয়েছে। ফলে সেচ ব্যবস্থাপনায় সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আগে যেখানে এতটি পাম্পের পানি দিয়ে দুশো বিঘা জমি চাষাবাদ করা যেত। এখন সেখানে ত্রিশ-চল্লিশ বিঘার বেশি জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর নিয়ে কাজ করা এক বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, যেখানে মাত্র দেড় বছর আগে পানির স্তর ছিল ৯৯ ফিট এখন সেখানে বারো ফুট কমে একশো এগারো ফুটে দাঁড়িয়েছে। আগে যেখানে মাত্র ষাট ফুট গভীর থেকে পানি মিলত এখন সেখানে একশ’ ষাট ফুট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু বাধাইড় ইউনিয়ন নয় বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়েই সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূগর্স্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় হতে বলা হয়েছে যে আর নতুন করে কোনো গভীর নলকূপ বসানো যাবে না। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থাপনা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়ছে ফসল আবাদের উপর। বিশেষ করে ধান উৎপাদনে। দেশের খাদ্য ভাÐার হিসেবে পরিচিত উত্তরের খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা এখন কম পানি লাগে এমন ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে। সেখানেও হানা দিচ্ছে বিরূপ প্রকৃতি। শুধু সেচের পানি নয় খাবার পানির সংকট চলছে পুরো অঞ্চল জুড়েই। শীত মওসুম শেষ হতে না হতে নলকুপ পাতকুয়া গুলোতে পানির টান ধরতে শুরু করে। চৈত্র-বৈশাখে এসে নলকূপগুলোয় পানি ওঠে না। এসব নলক‚পের কুড়ি ফুট নীচে সাব মার্সিবল পাম্প লাগিয়ে পানি আনতে হয়। পুকুর খাল বিলগুলোর পানি অনেক আগেই তলানিতে ঠেকে। শুষ্ক মওসুমে একেবারে শুকনো খটখটে। বরেন্দ্র অঞ্চলে মিঠা পানির জন্য ভরসা এখন সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপের পানি। বালতি কলস নিয়ে গ্রামীণ মহিলারা দূরের গভীর নলকূপের কাছে যাবার দৃশ্য সহজেই চোখে পড়ে। গনগনে রোদ্র মাথায় নিয়ে লাইন দিচ্ছে পাম্পের সামনে। আবার বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে অনেক সময় সেচ পাম্প বন্ধ থাকছে ফলে পানির জন্য হাহাকার লেগেই থাকে। কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র তাপদাহের গা জ্বালানো হাওয়ার ঝাপটা। ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে। আম-লিচুর গুটি যাতে গরমে না ঝরে যায় সেজন্য চলছে সেচ। কিছু সেই পানিরও সংকট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।