পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এমপি না হয়েও অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ান গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক শিশির শীল
পঞ্চায়েত হাবিব : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঐতিহ্য মøান হতে চলেছে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একেবারে সম্পর্কহীন একটি এনজিও’র ভিক্ষাবৃত্তির কারণে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নামে সংসদের অভ্যন্তরে অফিস বসিয়ে সব অর্জন মøান করে দিয়েছে অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ান গ্রæপের (এপিপিজি) সাধারণ সম্পাদক শিশির শীল।
ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, পিইটি কমনওয়েলথ অ্যাডুকেশন ফান্ডসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নিকট থেকে লাখ লাখ ডলার বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এমপি না হয়েও এমপিদের সংগঠনের নেতা সেজে তার কর্মকাÐের জন্য এরইমধ্যে এপিপিজি অফিস সংসদ অভ্যন্তর থেকে সরিয়ে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর এন্টি প্রোভার্টি ক্যাম্পেইন অব পার্লামেন্টের ব্যানারে রাজধানীতে জাতিসংঘের নাম ভাঙিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন শিশির শীল।
এই সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল পিপল্স এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি), ব্রিটিশ সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এবং বাংলাদেশে তৎপর কয়েকটি দেশি-বিদেশি এনজিও। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীনবিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ছাড়াও বিশ্বনেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকার কথা প্রচার করে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা অনুদান সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে উঠে আসে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার নিকট টাকা চেয়ে করা আবেদনে শিশির শীল জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন, ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন এই সম্মেলেনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এসব নেতৃবৃন্দের কথা শুনে জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশন মিলেনিয়াম ক্যাম্পেইন শিশির শীলকে ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেয়। এর বাইরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নাম ভাঙিয়েও কয়েক কোটি টাকা চঁদা তোলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বনেতৃবৃন্দ দূরের কথা, কেউ উপস্থিত হননি সেই সম্মেলনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংসদ সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন, কে এই শিশির শীল, যিনি এমপি না হয়েও এমপিদের সংগঠন এপিপিজি’র সাধারণ সম্পাদক? এই পদে তিনি ১৪ বছরই বা বহাল থাকেন কী করে? এমন প্রশ্নের পাশাপাশি এমপিদের মধ্যে নেতৃত্ব সঙ্কটেরও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, এমপিদের মধ্যে যোগ্য লোক কি কেউ নেই যে তাদের সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাইরের কাউকে ‘হায়ার’ করতে হবে? শিশির শীলের এমন কর্মকাÐের মাঝে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আব্দুল হান্নানের ‘ভিক্ষার চালে রাজকীয় ভোজ’ নিবন্ধটির যথার্থতাও খুঁজে পেয়েছেন তাদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নামে হাজার হাজার ডলার অর্থ চাঁদা এনে দেশীয় কিছু নেতাকে বিলাসী ভোজনের মাধ্যমে সম্মেলন করার দায় সারা হয়েছে। যার সিংহভাগ অর্থই পকেটস্থ করে নিয়েছেন শিশির শীল।
সংসদে সরকারী ও বিরোধী দলের এমপিদের নিয়ে অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ান গ্রæপ (এপিপিজি) গঠিত হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার প্রধান উপদেষ্টা এবং ডেপুটি স্পিকার কো-চেয়ারম্যান মনোনীত হন। আর শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই শিশির শীল-যার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। নিয়মানুযায়ী অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ান গ্রæপ (এপিপিজি) বাংলাদেশের সদস্য হতে হলে তাকে অবশ্যই জাতীয় সংসদের সদস্য হতে হবে। কিন্তু শিশির শীল এমপি না হয়েও এপিপিজি’র সাধারণ সম্পাদকের মতো পদ আঁকড়ে আছেন বছরের পর বছর। কার ইশারায়, কোন শক্তিতে যুগপৎ নিয়ম ভেঙে তিনি এই পদে আসীন আছেন- তা রীতিমতো বিস্ময়কর ঠেকেছে অনেকের কাছে। অনেকের প্রশ্ন, আইনপ্রণয়নকারীদের সংগঠনে যদি এধরনের অনিয়ম ও অন্যায় চলে এবং তা বছরের পর বছর সয়ে যাওয়া হয়, তাহলে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায়-অনিয়ম প্রশ্রয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
সংসদ সচিবালয়ের সূত্র জানায়, এপিপিজিকে পুঁজি করে সংসদ ভবনের অভ্যন্তরেই শিশির শীল গড়ে তুলেছেন এনজিও সংস্থা পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি) ও এন্টি পোভার্টি ক্যাম্পেইন অব পার্লামেন্ট নামের আরও দু’টি সংগঠন। জাতীয় সংসদের সঙ্গে এপিপিজি’র কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এমপি হোস্টেলের ৩/১০ নম্বর মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্টের পশ্চিম ক্লকে শিশির শীলের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চোখ ধাঁধানো একটি অফিসকক্ষ। এটি তিনি পেয়েছেন পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্টের (পিইটি) নামে। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে শিশির শীলের ওই সংস্থাটি ওয়েবসাইটও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও স্পিকারের ছবি দিয়ে। ওয়েবসাইটের পাতায় ব্যবহার করেন জাতীয় সংসদের লোগো, বাংলাদেশ সরকারের লোগো, এরপর এপিপিজি ও পিইটি’র লোগো, জাতিসংঘের লোগো এবং সর্বশেষে ২০১৫ সালের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) লোগো। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এ ধরনের লোগো ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে সংশ্লিষ্ট মহলে। পরবর্তীতে এসব ছবি ও লোগো সরিয়ে নিলেও এখনো এপিপিজির ওয়েবসাইটে জাতীয় সংসদের লোগো শোভা পাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার দিক থেকে মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া শিশির শীল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, তার এপিপিজিও সরকারি কোনো সংগঠন নয়। এর রেজিস্ট্রেশনও নেই। কিন্তু তা সত্তে¡ও রাষ্ট্রের সংরক্ষিত একটি এলাকায় শিশির শীলকে অফিস দেয়া হয়েছে কিসের ভিত্তিতে-এ প্রশ্ন খোদ এমপিদের। এ নিয়ে কথা উঠলেই শিশির শীল স্পিকার ও সরকার দলীয় চিফ হুইপের দোহাই দেন।
জানা যায়, শুরু থেকে এইচআইভি-এইডস, মানবপাচার, অভিবাসন, শিক্ষা, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি), দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করার কথা বলে আসছে এপিপিজি। এসব কর্মসূচির জন্য পিইটি কমনওয়েলথ অ্যাডুকেশন ফান্ড, ইউনিসেফ (জাতিসংঘ শিশু তহবিল), ইউএনএফপিএ (জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল), ইউএনডিপিসহ (জাতিসংঘ উন্নয়নসহ কর্মসূচি) একাধিক উন্নয়ন সহযোগীর নিকট থেকে প্রচুর অনুদান সংগ্রহ করে। অভিযোগ উঠেছে, জাতীয় সংসদের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রæপ (এপিপিজি) ১৪ বছর ধরে সংসদ ও এমপিদের নামে উল্লেখিত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে টাকা আনলেও এর হিসাব তারা সংসদে জমা দেয়নি। স¤প্রতি সংসদ থেকে হিসাব চাইলে হিসাব তো দূরের কথা, সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি এপিপিজির উদ্যোক্তা সংস্থা পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি)। এতে করে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বর্তমান দশম সংসদের শুরুতে পিইটি ও এপিপিজির সঙ্গে সংসদের সংশ্লিষ্টতা এবং-এর আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা এসেছে এবং কত ব্যয় হয়েছে, তার হিসাব জানতে চান পিইটির প্রধান নির্বাহী শিশির শীলের কাছে। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারায় স্পিকারের নির্দেশে এপিপিজির কার্যালয় সংসদের মূল ভবন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে, এই সংগঠনের ব্যানারে সংসদ সচিবালয় ও সরকারি খরচে বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে শিশির শীল যাননি। সংসদ ও সরকার সম্পর্কিত নানা প্রোগ্রাম ছাড়াও কমনওয়েলথ, জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীর আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের তিনি নিয়মিত পার্টিসিপেন্ট। এই অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজক ও সরকারের কোনো উদ্দেশ্য সাধন না হলেও শিশির শীলের উদ্দেশ্য সাধন হয় ঠিকই। ২০০৩ সালের পর থেকে প্রায় সব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের নামে বিদেশের মাটিতে গিয়ে শিশির শীলের পিকনিক করা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এই পিকনিক পার্টিতে নিয়ে যান তার পছন্দের লোকজনকে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মরক্কো জলবায়ু সম্মেলনেও অনুদানের টাকায় দলবল নিয়ে যোগদান করেন শিশির শীল।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ইনকিলাবকে বলেন, এমপি না হয়েছে কিভাবে শিশির শীল অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ান গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তা আমার জানা নাই। তিনি এপিপিজির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, অনেক এমপি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা এসেছে এবং কত ব্যয় হয়েছে, তার হিসাব জানতে চেয়েছেন।
এপিপিজির সাধারণ সম্পাদক শিশির শীলের নিকট জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইনকিলাবকে বলেন, এসব অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই। সংস্থার নামে আসা টাকার পরিমাণ একেবারেই কম। কোটি টাকার তো প্রশ্নও আসে না। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এমপিদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিদেশ পাঠাতে যে টাকা প্রয়োজন হয়, সে টাকাই পাওয়া যায় না। পকেটস্থ হবে কি করে? টাকা ব্যয়ের উপযুক্ত প্রমাণাদি তার নিকট রক্ষিত আছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।