Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আ’লীগ কওমি মাদরাসার সঙ্গে সম্পর্ক করছে : মওদুদ

| প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ক্ষমতাসীন সরকার কওমি মাদরাসার সঙ্গে সম্পর্ক করছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে, তার আরেকটা প্রমাণ হলো কওমি মাদরাসার সঙ্গে সভা করা। এর আগে উনি (প্রধানমন্ত্রী) মাওলানা সাহেবদের সাথে একটা মিটিং করলেন। গত পরশুদিন করলেন কওমি মাদরাসার সঙ্গে সভা। এর উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্যটা আল্লামা শফী। এখন এদের সঙ্গে গিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ভিড়ছে।
কওমি মাদরাসার মিটিং তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কী ঘোষণা করলেন? উনি বললেন যে, দাওরা ডিগ্রি যেটা কওমি মাদরাসায় দেয়া হয়, সেটা এমএ ক্লাসের সমমানের হবে। অথচ এ বিষয়টা আমাদের সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে গ্যাজেটও প্রকাশ করা হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী মানবাধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য : সরকারের ভ‚মিকা ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে খেলাফত মজলিশের সাথে আওয়ামী লীগের পাঁচদফা চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের জন্য ২০০৬ সালের নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণার আগে পাঁচদফা চুক্তি করেছিল বাংলাদেশের সবচাইতে রক্ষণশীল, দক্ষিণপন্থী একেবারে অর্থডগ যাদেরকে বলে কী পার্টি খেলাফতে মজলিশ। জামায়াতে ইসলামী এদের কাছে তুলনায় কিছুই না।
তারা ৫ দফার মধ্যে বলেছে, কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। যে ফতোয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন সংগ্রাম-আন্দোলন করেছে, সেই ফতোয়া পাঁচদফার একটি ছিল যে, ফতোয়া উড বি রিকুগনাইজড। কেবল তাই নয়, ৫ দফায় আরো ছিল, যারা কাদিয়ানি রসূলুল্লাহকে (স.) শেষ নবী মানে না, তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। দিস ইজ দ্যা পার্টি দেট ইড গো টু দেট স্টেপ। এই খেলাফত মজলিশের সাথে আপোষ করেছেন নির্বাচনে জেতার জন্য। জলিল সাহেব (মরহুম সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল জলিল) ওই পাঁচ দফা চুক্তি সই করেছেন। তিনি নিজে পত্রিকাকে বলেছেন, আমি এটা নেত্রীর নির্দেশে করেছি।
সাবেক এই আইনমন্ত্রী তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগে এখন ভোটের রাজনীতিতে চলে গেছে। আজকে দেখলাম যে তাদের তিন‘শ আসনের জন্য তিন হাজার প্রার্থী অলরেডি প্রসেস তারা করেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা সরকারের খরচে সমস্ত কিছু আয়োজন করে সভা করে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে আহবান জানাচ্ছেন।
আর আমাদেরকে কী করেছে? আমাদেরকে অনেকটা তালা বন্দি করে রেখেছেন। কোনো সভা-সমিতি করতে পারবেন না, অনুমতি দেয়া হবে না।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সব অপশন ওপেন রাখছেন নির্বাচনে জেতার জন্য। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো আর হলো না। নির্বাচন কমিশন এখানে ব্যর্থতা পরিচয় দিলেন। একদলকে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দিচ্ছেন, আরেক দলকে গৃহবন্দি করে রাখছেন। এটা তো হতে পারেন না। বাংলাদেশে একদলীয় নির্বাচন হবে না। যতই আপনারা চেষ্টা করুন না কেন, যত কৌশল নিন না কেন, যত চুক্তি বা সমঝোতা করুন না কেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনোদিন একদলীয় সরকার ও একদলীয় নির্বাচন আর হবে না। এ লক্ষ্যে তার দল ‘আন্দোলন’ অব্যাহত রাখবে বলেও জানান স্থানীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে কোনো সফলতা নেই দাবি করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক যে আশা-আকাক্সক্ষা ছিল, মৌলিক যে দাবিগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো রকমরে কোনো সমাধান আমরা এই সফরে দেখতে পাইনি। আমার মনে হয়, ক‚টনীতিতে এটা ভারতের বিজয় হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার হেরে গেছে।
যেহেতু বঙ্গবন্ধুর নামে একটা রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে- তারা তাতেই খুশি। প্রেসিডেন্ট হাউজে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ছিলেন, তাতেই উনি খুশি। মোদি সাহেব (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) গেছেন এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার জন্য- এটা বিরাট একটা সম্মানের বিষয়- তাতেই খুশি।
খুব সুন্দরভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অনেক সম্মান দেখিয়েছেন কিন্তু এই সম্মান আওয়ামী লীগ মনে করতে পারে তাদেরকে সম্মান দেখিয়েছেন কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটাকে সম্মান মনে করে না। বরং দেশের মানুষ হতাশ। তার এই সফর বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের দৃষ্টিকোন থেকে ব্যর্থ হয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে আমরা কোনো কিছুই অর্জন করতে পারি নাই।
ভারত সফরে ৬২ দফা যৌথ ইশতেহারে যৌথ নদী কমিশন ও বানিজ্য ঘাটতি হ্রাসের বিষয়ে কোনো কথা লেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মওদুদ বলেন, আমাদের পানির হিৎসার ব্যাপারে দেখি নাই, আমাদের সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে দেখি নাই, আমাদের পাট কারখানাগুলো বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ দেখি নাই। এতো ব্যবসায়ীদের নিয়ে গেলেন, কৈ বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই ইশতেহারে নেই। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আহবান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
তিনি বলেন, সরকারকে বলব, জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নিন। জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ হলো রাজনৈতিক শূন্যতা। দেশে রাজনীতি নাই, গণতন্ত্র নাই। তাই বলব, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন, তাহলে দেখবেন দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে না।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্র নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না, এনডিপির‘র মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ