পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : জীবন থেকে মুছে যাক বিগত বছরের ব্যর্থতার গøানি, দূর হয়ে যাক পুরাতন বছরের হতাশা-আবর্জনা। কবির ভাষায় “মুছে যাক গøানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।” সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই প্রকৃতিতে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ।
আজ পহেলা বৈশাখ। পুরাতনকে ভুলে নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে আরো একটি বছর। সূচনা হবে নতুন বাংলা সাল ১৪২৪। শুভ নববর্ষ। বিদায় ১৪২৩, স্বাগত ১৪২৪। পুরনো বছরের গøানি ভুলে নতুনে আশার ভেলা ভাসিয়ে নতুন সূর্যোদয়কে আপন করে নিতে উন্মুখ দেশের আবালবৃদ্ধবণিতা। নববর্ষকে বরণ করতে নগরবাসী ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে সকল প্রস্তুতি। পিছিয়ে নেই গ্রামাঞ্চলগুলো। গ্রামে-গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান। বর্ষবরণের চিরায়ত রীতি হিসেবে ঘরে ঘরে থাকছে পান্তা ইলিশের আয়োজন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়বেন নগরবাসী। লাল, হলুদ, সাদাসহ বাহারি রঙের শাড়ী, আর পাঞ্জাবী পরে হাতে হাত রেখে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ স্বাগত জানাবে নতুন সূর্যোদয়কে। বদলে যাবে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলায় বর্ণাঢ্য হয়ে উঠবে শহর। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় “তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়।”
বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণের আনন্দে, হালখাতার নবায়নে আজ জীবনে নতুন স্বপ্ন সাজানোর দিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসা¤প্রদায়িক এ সার্বজনীন উৎসবের দিনটি সরকারি ছুটির দিন। গ্রীষ্মের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে দেশের প্রতিটি পথে, মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে আজ লাখো-কোটি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসব মুখরতার বিহŸলতা। সব অপ্রাপ্তি ভুলে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের লগ্নে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক ও সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই বাঙালি পালন করবে বৈশাখী উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আকাক্সক্ষার সঙ্গে একাকার হয়ে সবার কন্ঠে ধ্বনিত হবে একই সুরে “এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে... মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক.../মুছে যাক গ্নানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।” শাশ্বত সেই শুচিশুভ্রতার স্বপ্নে বিগত বছরের জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে আজ নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন। রমনার বটমূলে দিনটির সূচনা হবে যথারীতি ছায়ানটের বর্ষবরণ সঙ্গীত আয়োজনের মধ্য দিয়ে। রমনামুখী লাখো মানুষের ঢল উৎসবকে করে তুলবে আরও বর্ণিল। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্র্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নববর্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। নববর্ষ উপলক্ষে গণমাধ্যমগুলোতেও রয়েছে নববর্ষের বর্ণাঢ্য আয়োজন। এতিমখানা, কারাগার, সংশোধন কেন্দ্র, হোস্টেল এবং হাসপাতালে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে রাজধানীর রমনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমÐি লেক, সংসদ ভবন এলাকা, গুলশান, মিরপুর, পুরান ঢাকা এক কথায় পুরো ঢাকা শহর পরিণত হবে উৎসবের নগরীতে। নারী-পুরুষ-শিশু, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে জাতীয়ভাবে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠবে আজ সকলেই। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা এবং রং-বেরঙের নারী-পুরুষের পোশাক এবং সজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠবে রাজধানীসহ গোটা দেশ। প্রাণ চাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপটও বদলে যাবে। কাকডাকা ভোর থেকেই নগরীর পথে পথে বাঙালি সংস্কৃতি লালনকারী আনন্দপিপাসু নগরবাসীর ঢল নামবে। পরনে থাকবে বৈশাখী উৎসবের লাল-সাদার বাহারি নক্সার পোশাক। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ফতুয়া পরে, পায়ে আলতা, হাতে মেহেদী আর খোঁপায় তাজা ফুলের মালা জড়িয়ে বঙ্গ ললনারা রাজপথে নেমে আসবেন। পুরুষের পরিধানে থাকবে পাঞ্জাবী ও ফতুয়াসহ চিরায়ত বাঙালি পোশাক। শিশুরাও এদিন বাবা-মা’র হাত ধরে আসবে পুরো বাঙালি সাজে সেজে। প্রায় সকলের, বিশেষ করে শিশু, তরুণ-তরুণীদের কপালে, গালে, বাহুতে আঁকা থাকবে বাঙালি সংস্কৃতির আলপনা। রঙ-বেরঙের মুখোশ পরে ঢাক, ঢোল, একতারা হাতে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে পড়বেন অধিকাংশ রাজধানীবাসী। বর্ষবরণের চিরায়ত রীতি হিসেবে ঘরে ঘরে থাকছে পান্তা ইলিশের আয়োজন। এছাড়াও, এদিন ঘরে ঘরে তৈরি হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েস, ভিন্ন ও দেশীয় নানা ধরনের পিঠা।
বর্ষবরণের মূল আয়োজন : বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দিনের শুরুতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকাল ৬ টায় রাজধানীর রমনা বটমূলে অনুষ্ঠিত হবে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিবেন। এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। ইউনেস্কোর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমক পূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করার নির্দেশনা আগেই দিয়ে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সকল উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলা একাডেমি ও বিসিক ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে।
বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে রমনা পার্কসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরোটাই ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা চাদরে। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয় এ উপলক্ষে সারাদেশই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে সব সংস্থা। বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা নিয়ে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুম, অবজারভেশন পোষ্ট ও চেকপোষ্ট। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি থাকছে গোয়েন্দা দলের সদস্য, বোমা ডিসপোজাল টিম ও মেডিক্যাল টিম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।