পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বাড়তে বাড়তে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে যা ঝুঁকি তৈরি করছে অর্থনীতিতে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকাই স্বল্পমেয়াদি (এক বছরের কম মেয়াদে) ঋণ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় দায় বাড়ছে দেশের ওপর। কারণ, এসব ঋণ হলো সরবরাহ ঋণ, যা হার্ড লোন হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ এ ঋণের সুদ নির্ধারণ হয় বাজার রেটে। এ কারণে এসব ঋণের সুদ তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার এসব ঋণ নেয়া হয় বিদেশি মুদ্রায়, পরিশোধও করা হয় বিদেশি মুদ্রায়। সুতরাং এসব ঋণ বেশি হলে দেশের ওপর চাপ বাড়ে। এ কারণে এসব ঋণসীমার মধ্যে রাখাটাই দেশের জন্য ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যখন ব্যবসায়ীদের বিদেশি ঋণ আনার অনুমোদন দেয়া হয় তখন দেশীয় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট চলছিল। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ব্যাংকগুলোর হাতে ছিল না। টাকার সংকটের কারণে ঋণের সুদ হারেও আকাশমুখী হয়। তখন ব্যাংকগুলোও উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে। তখন আমাদের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ১৪ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত নিতে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ব্যয় করেছে। এ সময়কাল ছিল ২০১০-১১ অর্থ-বছরের দিকে। উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হারে ঋণ দিতে থাকে ব্যাংকগুলো। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদেও বৈদেশিক ঋণ আনার অনুমোদন দেয়। বলা চলে তখন থেকে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ আসতে থাকে। সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদি এসব ঋণ আনতে ব্যবসায়ীরা ক্ষেত্র বিশেষ সাড়ে চার থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করে। এরপর অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের তহবিল সংকট মেটায়। সর্বোচ্চ ১ বছর মেয়াদি এসব ঋণ আনতেও ক্ষেত্রবিশেষ সর্বোচ্চ সাড়ে চার শতাংশ সুদ দিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব ঋণের সুদ আপাতত কম মনে হলেও কার্যকারী হার আরো বেড়ে যাবে। যেমন একজন বিনিয়োগকারী বিদেশ থেকে ৬ শতাংশ হারে ১০০ কোটি ডলার (৭৯ টাকা ১০ পয়সা প্রতি ডলার হিসেবে) ঋণ গ্রহণ করল। এক বছর পর প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হলে প্রতি ডলারে টাকার মান কমে প্রায় ৭ শতাংশ। যেহেতু ডলারে ঋণ করে টাকায় ব্যয় করলেও ডলারে পরিশোধ করায় বিনিময় হারের কারণে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে (৬+৭) সোয়া ১৩ শতাংশ। এভাবে কেউ ৫ বা ১০ বছর মেয়াদি বিদেশি ঋণ নিলে কার্যকরী হার অনেক বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ২০১১ সালে ৯২ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে ১৪৯ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর প্রতি বছরই তা বাড়তে থাকে। এর সাথে যোগ হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক ঋণের যোগান দিয়ে আসছে। অর্থাৎ ব্যাংক বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে ওই ঋণ আবার ব্যবসায়ীদের মাঝে বিতরণ করছে। ফলে বেসরকারি পর্যায়ে প্রকল্প ঋণ ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত স্বল্প মেয়াদি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৩০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবমিলে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত অলস টাকা রয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য উদ্বৃত্ত তহবিল বেড়ে হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে এ থেকে যে সুদ পরিশোধ করতো তা দেশেই থেকে যেতো। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর কোনো চাপ বাড়তো না। এতে ব্যাংকগুলোরও তহবিল ব্যয় কমতো যা সামগ্রিক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়তো। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা বিদেশি ঋণ নেয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় সুদ পরিশোধ করছেন। এতে এসব ঋণের সুদ বৈদেশিক মুদ্রায় চলে যাচ্ছে বিদেশে। এ ব্যয় বেড়ে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর পড়বে। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয় বলে তারা মনে করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।